X
বুধবার, ০৮ মে ২০২৪
২৫ বৈশাখ ১৪৩১

দুশ্চিন্তায় পড়েছে বিএনপি

সালমান তারেক শাকিল
২৮ অক্টোবর ২০২১, ২২:০৪আপডেট : ২৯ অক্টোবর ২০২১, ১২:৪৯

দলীয় কার্যক্রম নিয়ে ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়েছে বিএনপি। নেতারা বলছেন, কর্মসূচি বাস্তবায়ন নিয়ে কয়েক ধরনের ‘দুশ্চিন্তা’ তৈরি হয়েছে দলে। প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে দলীয় কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করা হলেও এর শুরু ও শেষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন তৎপরতার কারণে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে শীর্ষনেতৃত্বে।

বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৭ আগস্ট চন্দ্রিমা উদ্যানে ঢাকা মহানগর (উত্তর) কমিটির পুষ্পস্তবক অর্পণ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা হয়েছে। এতে অন্তত এক হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। তখন কর্মসূচিতে না থাকলেও আসামি হয়েছেন তাবিথ আউয়াল।

নেতারা জানান, গত ২৬ অক্টোবর দেশে সম্প্রীতি রক্ষায় সরকারের ব্যর্থতার প্রতিবাদে মিছিল করার কথা থাকলেও তা করেনি বিএনপি। তার ওপর সম্প্রীতি রক্ষার স্বার্থে মিছিল না করে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে নেতাকর্মীদের বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কিন্তু ফেরার পথে একটি মিছিল থেকে পুলিশকে উদ্দেশ্য করে ব্যানারের লাঠি ছোড়ার কারণে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এরপর পুলিশের করা মামলায় অসংখ্য নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।

যাত্রাবাড়ী থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক তাহেরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত ২৬ অক্টোবর আমরা বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে শান্তিপূর্ণভাবে যাচ্ছিলাম। নাইটিঙ্গেল মোড়ের দিকে একটু এগোতেই দুই পাশ দিয়ে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে।’

যদিও সেদিন পুলিশের মতিঝিল জোনের এডিসি এনামুল হক মিঠু বাংলা ট্রিবিউনের কাছে দাবি করেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা নাইটিঙ্গেল মোড়ে পুলিশের ওপর অতর্কিতে উসকানিমূলক আচরণ করে।

বিএনপির দায়িত্বশীল একজন বলেন, ‘প্রতিটি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে অসংখ্য নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা হচ্ছে। এ বিষয়টি নেতৃত্বের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দলীয় কোনও কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আচরণে এখন নেতাদের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়েছে।’

গত ২৬ অক্টোবর পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া (ছবি: সাজ্জাদ হোসেন)

দলের ঢাকা মহানগরের আরেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলেন, “এখন থেকে দলীয়ভাবে ‘স্যাবোটাজ’ করা প্রসঙ্গে নেতাকর্মীদের সচেতন করা হবে। বিশেষ করে উত্তেজনা সৃষ্টি করে কর্মসূচি বিনষ্টের যেকোনও প্রয়াস মোকাবিলায় ‘বিশেষভাবে দক্ষ নেতাকর্মীদের’ দায়িত্ব দেওয়া হবে।”

দলটির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিএনপির পক্ষ থেকে যেকোনও কর্মসূচি দিলেই পোশাকে বা পোশাকহীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারি দলের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। গতকাল (২৭ অক্টোবর) যুবদলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন এলাকায় হামলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত আমাদের নেতাকর্মীরা শান্তিতে বিশ্বাসী মনোভাব ধরে রেখেছে। তারা ঘুড়ে দাঁড়ালে পরিস্থিতি আরও জটিল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

যদিও ‘বিএনপি কর্মসূচির নামে কোনও সন্ত্রাস ও জনভোগান্তি সৃষ্টি করলে আওয়ামী লীগ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কঠোরভাবে প্রতিহত করবে’ বলে মন্তব্য করেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

ঢাকা মহানগর বিএনপির (দক্ষিণ) আহ্বায়ক আবদুস সালাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অনেকেই বলে থাকে বিএনপি মাঠে নামছে না, কর্মসূচি দিচ্ছে না। দেশের মানুষ দেখছে বিএনপি কর্মসূচি দিলে সরকারের আচরণ কী হয়। বিএনপি সম্প্রীতি রক্ষার একটি মিছিল করতে গেলো, কিন্তু সেটিও করতে দেয়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।’

দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের এই সদস্যের মন্তব্য, ‘সরকার যত কিছুই করুক, বিএনপিকে থামাতে পারবে না। বিএনপি এগোবেই। যত মামলাই হোক, নির্যাতনই হোক, নেতাকর্মীরা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবেন। একযুগ ধরে নিপীড়ন চলছে, বিএনপির অগ্রযাত্রা বন্ধ করতে পারেনি।’

বিএনপির উচ্চপর্যায়ের দায়িত্বশীলদের অভিমত, “কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ হলেও হঠাৎ ‘স্যাবোটাজ’ হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে পুরো বিষয়টি এখন নেতৃত্বের জন্য পীড়াদায়ক। গত ২৬ অক্টোবর সকাল ৮টার আগে থেকেই নয়াপল্টনমুখী সব গলিতেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়ে অনেককে আটক করে।”

দলীয় সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ একাধিক সদস্য নিজেদের মধ্যে পুরো বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। বিশেষ করে রাজনৈতিক দল হিসেবে কর্মসূচি ছাড়া একটি দল কীভাবে চলে, এমন প্রশ্নও এখন নেতাদের চিন্তায় ঘুরপাক খাচ্ছে। এভাবে কর্মসূচি দিলেই হামলা-মামলার ব্যাপার ঘটলে বিকল্প কী করা যায়, সেই চিন্তাও এখন তাদের আলোচনায় রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খানের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। কিন্তু পুলিশ এমন আচরণ করেনি। পুলিশ এখন নিজেদের পোশাকে বা পোশাক ছাড়া দলীয় কর্মসূচিতে হামলা করছে। ১৫ মিনিটের একটি কর্মসূচিকে তারা ঘণ্টাখানেকের রণক্ষেত্রে পরিণত করছে। এটা আমাদের নিশ্চয়ই ভাবায়, অবশ্যই ভাবায়।’

সাবেক এই প্রতিমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘ছেলেরা এখন কর্মসূচিতে এসে পুলিশের হামলার মুখোমুখি হচ্ছে। ধীরে ধীরে এই ভয় কেটে যাবে। তখন পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। পুলিশের বোঝা উচিত যে, দেশ একদিন মুক্ত হবে। বিএনপি পিছপা না হয়ে কর্মসূচি দেবেই।’

/জেএইচ/
সম্পর্কিত
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি, বিএনপির প্রস্তুতি কী?
জোরে সালাম শুনেই ঘাড় ফিরিয়ে উত্তর দেন খালেদা জিয়া
বাসায় ফিরেছেন খালেদা জিয়া
সর্বশেষ খবর
এএফসি নারী চ্যাম্পিয়নস লিগে ভারত আছে, নেই বাংলাদেশ
এএফসি নারী চ্যাম্পিয়নস লিগে ভারত আছে, নেই বাংলাদেশ
‘প্রেমটা থাকুক, বিয়ে কোনও এক সময় হয়ে যাবে’
‘প্রেমটা থাকুক, বিয়ে কোনও এক সময় হয়ে যাবে’
শ্রম অধিকার ও বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্কের গতিশীলতা
শ্রম অধিকার ও বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্কের গতিশীলতা
হ্যান্ডব্রেক ছাড়াই চলে রাজধানীর বাস, পায়ের ব্রেকেও নেই জোর
হ্যান্ডব্রেক ছাড়াই চলে রাজধানীর বাস, পায়ের ব্রেকেও নেই জোর
সর্বাধিক পঠিত
শনিবারে স্কুল খোলা: আন্দোলন করলে বাতিল হতে পারে এমপিও
শনিবারে স্কুল খোলা: আন্দোলন করলে বাতিল হতে পারে এমপিও
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন আজ
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন আজ
কেমন আছেন মিল্টনের আশ্রমে আশ্রিতরা
কেমন আছেন মিল্টনের আশ্রমে আশ্রিতরা
‘চুন্নু স্বৈরাচারের দোসর’, বললেন ব্যারিস্টার সুমন
‘চুন্নু স্বৈরাচারের দোসর’, বললেন ব্যারিস্টার সুমন
এক লাফে ডলারের দাম বাড়লো ৭ টাকা
এক লাফে ডলারের দাম বাড়লো ৭ টাকা