'নিখোঁজ' চীনা টেনিস তারকা পেং শুয়াই-কে নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, দুই সপ্তাহ আগে চীনের সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আনার পর থেকে তাকে আর জনসমক্ষে দেখা যায়নি। এ ঘটনা গভীরভাবে উদ্বেগজনক।
পেং শুয়াই এখন কোথায় আছেন এবং তিনি নিরাপদে আছেন কিনা হোয়াইট হাউস তার নিরপেক্ষ এবং সত্যায়িত প্রমাণ পেশ করার জন্য চীনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে।
জোড়া গ্র্যান্ড স্ল্যাম বিজয়ী সাবেক এক নম্বর র্যাংকিং-এ থাকা ৩৫-বছর বয়সী এই টেনিস তারকা অবসর নেওয়া একজন কমিউনিস্ট নেতার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ করেছিলেন।
চীনের সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ওয়েইবোতে দেওয়া এক পোস্টে পেং বলেন, সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী ঝাং গাওলি শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য তাকে বাধ্য করেছিলেন। গত ২ নভেম্বর ওই পোস্টটি দিয়েছিলেন তিনি।
চীনের ঊর্ধ্বতন কোনও রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় এভাবে প্রকাশ্যে এ ধরনের অভিযোগের ঘটনা এটিই প্রথম।
৭৫ বছরের ঝাং গাওলি ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। তবে নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের কোনও জবাব দেননি এই কমিউনিস্ট নেতা।
পেং শুয়াই তার পোস্টে বলেছিলেন, ‘উপ-প্রধানমন্ত্রী ঝাং গাওলি; আমি জানি আপনার মতো একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি বলবেন, আপনি ভীত নন। তারপরও এটা যদিও বড় পাথরের গায়ে নুড়ি দিয়ে আঘাত করার মতো বা নিজে পুড়ে মরবে জেনেও একটা মথ যেভাবে আগুনে ঝাঁপ দেয়, তার সমতুল্য হয়, তাহলেও আমি আপনার সম্পর্কে সত্য কথাটা বলতে চাই।’
পেং বলেন, টেনিস খেলার জন্য ঝাও-এর বাসভবনে গেলে প্রথমে তিনি তার সঙ্গে জোর জবরদস্তি করেন। তার ভাষায়, ‘সেদিন বিকেলে আমি আপনার সঙ্গে এই কাজ করার অনুমতি দেইনি। আমি সারাক্ষণ কাঁদছিলাম। আপনি আমাকে আপনার বাসার ভেতরে নিয়ে যান এবং আপনার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করেন।’
পেং স্বীকার করেন, নিজের দাবির সমর্থনে হাজির করার মতো কোনও প্রমাণ তার হাতে নেই। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে কোনও সাক্ষ্যপ্রমাণ নেই। কোনও সাক্ষ্যপ্রমাণ থাকাও অসম্ভব ছিল। আপনি সর্বক্ষণ ভয় পাচ্ছিলেন আমি কোনও রকম টেপ রেকর্ডার নিয়ে গেছি কিনা! কোনও কিছু প্রমাণ বা কিছু রেকর্ড করেছি কিনা। আমার কাছে কোনও অডিও রেকর্ডিং নেই, ভিডিও রেকর্ডিং নেই, শুধু আছে আমার অতি সত্য, ভয়াবহ অভিজ্ঞতাটুকু।’
ইন্টারনেট থেকে পোস্ট উধাও
পেং ওয়েইবোতে এই পোস্ট দেওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই তা চীনের ইন্টরানেট থেকে মুছে ফেলা হয়। পেং-এর অ্যাকাউন্ট থেকে সম্প্রতি দেওয়া অন্যান্য পোস্টগুলোও মুছে ফেলা হয়। ওয়েইবো-তে তার অনুসারীর সংখ্যা পাঁচ লাখ। চীনে তিনি একজন বিশাল তারকা। দেশটির সবচেয়ে জনপ্রিয় সার্চ এঞ্জিন বাইদু-তে তার নাম দিয়ে সার্চ করলে ৭০ লাখের বেশি ফলাফল আসে। তবে এই পোস্টের পর থেকে চীনের সিনা ওয়েইবো মাইক্রোব্লগ সাইট, যা দেশটিতে ফেসবুকের সমতুল্য সেখানে পেংকে নিয়ে মানুষ যাতে কথাবার্তা বলতে না পারে তার জন্য ব্যাপক দমনমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন বিবিসির চীন বিষয়ক মিডিয়া বিশ্লেষক কেরি অ্যালেন। পেং-এর নাম দিয়ে সার্চ করে তার বিষয়ে এখন সীমিত পরিসরে তথ্য ইন্টারনেটে পাওয়া যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক মহলে উৎকণ্ঠা
উইমেন্স টেনিস অ্যাসোসিয়েশন (ডাব্লিউটিএ) হুমকি দিয়েছে যে, তারা চীনে টেনিস ইভেন্টগুলোতে যোগ দেবে না। ডাব্লিউটিএ-র সভাপতি স্টিভ সাইমন বিবিসিকে বলেছেন, পেং যদি নিরাপদ না থাকেন, তাহলে আগামী বছর চীনে কোনও প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে না।
তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু প্রতিশ্রুতিতে সন্তুষ্ট হবো না। এটা ন্যায় অন্যায়ের বিষয়।’
চীনা টেনিস অ্যাসোসিয়েশন ডাব্লিউটিএ-কে জানিয়েছে, পেং নিরাপদে আছেন এবং তিনি বেইজিং-এই আছেন। কিন্তু স্টিভ সাইমন বলছেন, এই তথ্য যে সঠিক তার কোন নিশ্চয়তা নেই।
শুক্রবার আরেকটি ঘটনায় পেং-এর নাম দিয়ে উইচ্যাটের একটি অ্যাকাউন্টে তার তিনটি ছবি পোস্ট করা হয়েছে। ছবিগুলোর সঙ্গে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে 'হ্যাপি উইকেন্ড।' তবে বিবিসিতে চীনা সংবাদমাধ্যম বিশ্লেষক কেরি অ্যালেন উইচ্যাট-এর এই পোস্ট আসলে পেং-এর নিজের দেওয়া পোস্ট কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
এই সপ্তাহের গোড়ার দিকে চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে পেং শুয়াই-এর কথিত একটি ইমেইল প্রকাশ করা হয়। সেখানে বলা হয়, ঝাং-এর বিরুদ্ধে তার অভিযোগ সত্য নয়।
ডাব্লিউটিএর সভাপতি সাইমন বলছেন, এই ইমেইল পেং আসলেই নিরাপদ আছেন কিনা তা নিয়ে উৎকণ্ঠা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সূত্র: বিবিসি।
