X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রেনিংয়ের নোটবুকটি এখনও বুকে আগলে রেখেছি : নঈমুল হক ভূইয়া

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা
২৪ মার্চ ২০১৬, ১২:৪৮আপডেট : ২৭ মার্চ ২০১৬, ১৫:৪১

  ট্রেনিংয়ের নোটবুকটি এখনও বুকে আগলে রেখেছি : নঈমুল হক ভূইয়া

‘এখনও কানে ব্রাশ ফায়ারের শব্দ শুনি। প্রশিক্ষণকালীন সময় আমাদের সাহস বাড়াতে কাটা তারের নিচ দিয়ে ক্রলিং করতে দিয়ে উপর দিয়ে ব্রাশ ফায়ার করা হতো। ভয়ে উপরে উঠতে গেলে কাটা তারের খোচা লাগতো। সেই সময়ের ট্রেনিংয়ের নোট বুকটি এখনও বুকে আগলে রেখেছি। যুদ্ধের ৯টি মাস আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। কয়জন মানুষ দেশের জন্য জান বাজি রাখার সুযোগ পান।’ কথাগুলো বলেন কুমিল্লার মুক্তিযোদ্ধা নঈমুল হক ভূইয়া।

১৯৪৮ সালে তিনি কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার আশাবাড়ি গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। বাবার নাম আবদুল হামিদ। পরে তারা কুমিল্লা শহরের আদালতের কাছে চলে আসেন। পাঁচ বোন এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি চতুর্থ। বাবা-মা তাদের একমাত্র ছেলেকে যুদ্ধে যেতে দিতে চাইবেন না,তাই তিনি পালিয়ে যুদ্ধে গিয়েছিলেন।

১৯৭১ সালে তিনি চট্টগ্রাম সিটি কলেজে আইএসসিতে ভর্তি হন। সেখানে কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস ছিলেন সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী। প্রিন্সিপাল ছিলেন রেজাউল করিম। চট্টগ্রামে দুই বোনের বাসায় থাকতেন। কখনও আগ্রবাদ কখনও দামপাড়া। ২৫মার্চ রাতে চট্টগ্রাম শহর দখল করে নিয়েছিল পাকিস্তানি বাহিনী। মানুষ যে যার মতো প্রাণ বাঁচাতে গ্রামের দিকে পালাতে শুরু করেছিল। ২৭ মার্চ কুমিল্লা ছোটরা কলোনির এক বন্ধু সফিককে নিয়ে তিনি পায়ে হেঁটে কুমিল্লার দিকে যাত্রা করেন।

নঈমুল হক ভূইয়া বলেন, সীতাকুণ্ড এসে দেখি আওয়ামী লীগের অর্থ সহায়তাকারী এম আর সিদ্দিকীর বাড়িটি পুড়ছে। পথে পথে পাকিস্তানিদের চেকিং। মীরেরশ্বরাইয়ের জোরালগঞ্জ এসে বিশ্রাম নেই। তারপর আবার হাঁটা। পা ফুলে ঢোল। পথে পথে মানুষ খাবার ও পানি দিয়ে অন্যদের সহযোগিতা করছে। তারপর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বাতিসা এসে বন্ধু সফিকের মামার বাড়িতে উঠি। কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার সুয়াগাজী আমার নানার বাড়ি। বাবা-মাকে জানালে যুদ্ধ যেতে দিতো না তাই নানার বাড়িতে জানিয়ে সেখান থেকে কাঁঠালিয়া হয়ে ভারতের সোনামুড়া চলে যাই। সেখানে এক সিপিএম নেতার সঙ্গে পরিচয় হয়। তিনি আমাকে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে নিয়ে যান। সেই ক্যাম্পে ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা রুস্তম আলী,নাজমূল হাসান পাখী ও শিব নারায়ণ দাসসহ অন্যরা। সেখান থেকে আমাদের পাঠানো হয় আসামের লোহারবন নামক এলাকায়।

তিনি আরও জানান, সেই এলাকায় অনেক বন-জঙ্গল ছিল। সেখানে  প্রশিক্ষণকালীন সময় সাহস বাড়াতে কাটা তারের নিচ দিয়ে ক্রলিং করতে দিয়ে উপরে  ব্রাশ ফায়ার করা হতো। ভয়ে উপরে উঠতে গেলে কাটা তারের খোঁচা লাগতো। সে শব্দ এখনও কানে বাজে। লোহারবন এলাকায় থাকতে ২ রুপি দিয়ে একটি নোটবুক কিনেছিলাম। সেখানে ট্রেনিংয়ের কিছু নোট আছে। যার অধিকাংশ ককটেল তৈরি,গেরিলা হামলার ছক ও অস্ত্র চালনোর নোট। স্মৃতি হিসেবে সেটি এতোদিন বুকে আগলে রেখেছি। নোটবুকটি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে জমা দিয়ে দিব বলে চিন্তা করছি। জুন মাস পর্যন্ত ট্রেনিং শেষে সিলেটের (মৌলভীবাজার) টিলার বাজার দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছি। সেটি ছিল ৩নং সেক্টর। সেখানে ৩ মাসের মতো যুদ্ধ করি। কত জোক আর মশার কামড় খেয়েছি তার হিসাব নেই। আমার সঙ্গে সেখানে যুদ্ধ করেন কুমিল্লা মোগলটুলীর জিল্লুর রহমান ও রফিকুল ইসলাম। লোহারবনে আমাদের ট্রেনিং দেন রাজপুত,জাট ও শিখ রেজিমেন্ট। তাদের একজন মেজর জেএন সিংয়ের কথা মনে আছে। তিনি বলতেন-‘‌বীর ভুগ্গে বসুন্ধরা। বীররা পৃথিবী ভোগ করবে বলে আমাদের অনুপ্রেরণা দিতেন।’পরে ২নং সেক্টরে কুমিল্লা এলাকায়ও যুদ্ধ করেছি।

সত্যি বলতে-আমরা তরুণরা যুদ্ধের জন্য উন্মুখ হয়ে ছিলাম। কারণ পাকিস্তানিদের বঞ্চনায় আমাদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পরই আমাদের রক্তে আগুন ধরে গিয়েছিল।

/বিটি/টিএন/

সম্পর্কিত
ঐতিহাসিক ৭ মার্চ দিবস পালন করলো সিএজি কার্যালয়
অগ্নিঝরা মার্চের প্রথম দিন আজ
অ্যালবার্ট এক্কা: একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের এক অকুতোভয় শহীদ
সর্বশেষ খবর
উত্তর গাজায় আবারও হামলা জোরদার করলো ইসরায়েল
উত্তর গাজায় আবারও হামলা জোরদার করলো ইসরায়েল
ফরিদপুরে দুই নির্মাণ শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় বিএনপির তদন্ত কমিটি
ফরিদপুরে দুই নির্মাণ শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় বিএনপির তদন্ত কমিটি
বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়লেন মুসল্লিরা
বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়লেন মুসল্লিরা
সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিতে চাকরি, ৫ ক্যাটাগরির পদে নিয়োগ
সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিতে চাকরি, ৫ ক্যাটাগরির পদে নিয়োগ
সর্বাধিক পঠিত
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে দুদকের কমিটি
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে দুদকের কমিটি
অতিরিক্ত সচিব হলেন ১২৭ কর্মকর্তা
অতিরিক্ত সচিব হলেন ১২৭ কর্মকর্তা