X
শনিবার, ০৩ মে ২০২৫
২০ বৈশাখ ১৪৩২

জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ

ঢাবি প্রতিনিধি
০২ আগস্ট ২০২৪, ০৩:০০আপডেট : ০২ আগস্ট ২০২৪, ০৩:০০

স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরোধিতাকারী ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত সংগঠন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও তাদের অঙ্গসংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পাঁচটি সংগঠন।

বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পাঁচটি সংগঠনের নেতাদের সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জাসদ), বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী, বাংলাদেশ ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় ছাত্র ঐক্যের নেতারা উপস্থিত ছিলেন বলে ছাত্রলীগের দফতর সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম পান্থর সই করা এক বিবৃতিতে জানানো হয়।

বিবৃতিতে জানানো হয়, জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, জাসদ ছাত্রলীগের সভাপতি রাশিদুল হক ননী ও সাধারণ সম্পাদক মাসুদ আহাম্মদ, ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি অতুলন দাস আলো ও সাধারণ সম্পাদক অদিতি আদ্রিতা সৃষ্টি, বাংলাদেশ ছাত্র আন্দোলন আহ্বায়ক রবিন হোসেন জয় এবং জাতীয় ছাত্র ঐক্যের আহ্বায়ক শাহিনুর রহমান।

যৌথ বিবৃতিতে নেতারা বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ধর্মীয় উগ্রবাদী, সন্ত্রাসবাদী, স্বাধীনতাবিরোধী, গণতন্ত্রবিরোধী, হত্যা-খুন-ধ্বংসের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অধীনে রাজাকার বাহিনী, আলবদর বাহিনীর সদস্য হিসেবে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের (তৎকালীন ইসলামী ছাত্র সংঘ) সদস্যরা গণহত্যা, গণধর্ষণ ও যুদ্ধাপরাধ সংঘটনে পৈশাচিক ভূমিকা পালন করেছিল।’

স্বাধীনতার পর সংবিধানের (৩৮) ধারা অনুযায়ী জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র সংঘকে (পরে ইসলামী ছাত্রশিবির) নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল উল্লেখ করে এতে আরও বলা হয়, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যাকাণ্ডের পর সামরিক স্বৈরশাসক, অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী জিয়াউর রহমান ১৯৭৬ সালে সংবিধানের (৩৮) ধারার উল্লেখিত অনুচ্ছেদগুলো বাতিল করে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পর পুনরায় বৈধভাবে রাজনীতি করার সুযোগ পায় জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির। সামরিক শাসক জিয়ার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির আবারও প্রকাশ্যে রাজনীতিতে আবির্ভূত হয়।’ 

‘সামরিক শাসক জিয়া ও এরশাদের ছায়ায় আশির দশকে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির আবারও তাদের সন্ত্রাসবাদী রাজনীতি চালু করে। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, ইনস্টিটিউট, মাদ্রাসাসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দখলের রাজনীতি, গলাকাটা, রগকাটা, হত্যা ও ভীতির জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদী রাজনীতি শুরু করে। গণতান্ত্রিক-প্রগতিশীল সংগঠনের হাজারো নেতাকর্মীকে হত্যা এবং হাত ও পায়ের রগ কেটে চিরদিনের জন্য পঙ্গু বানিয়ে দেয়। যুদ্ধে ব্যবহৃত গানপাউডার ব্যবহার করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের হল-হোস্টেল, একাডেমিক ভবন, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আগুন জ্বালিয়ে ভষ্মীভূত করে দেয়।’

আশির দশক থেকে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো ও মুক্তিযোদ্ধারা জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধের দাবি করে আসছে জানিয়ে বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ শহিদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গঠিত ঐতিহাসিক গণআদালত থেকেও জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির নিষিদ্ধের দাবি উত্থাপন করা হয়েছিল। গণজাগরণের আন্দোলনের উত্তাল সময়ে গোটা বাংলাদেশ সমস্বরে উচ্চারণ করে, ‘জামাত-শিবির নিষিদ্ধ চাই’। ২০১৩ সালের ১ আগস্ট হাইকোর্ট এক রায়ের মাধ্যমে সংবিধানের সঙ্গে গঠনতন্ত্র সাংঘর্ষিক এবং সাম্প্রদায়িক, নারীবিরোধী, জনগণের সার্বভৌমত্বের ধারণার বিরোধী হওয়ায় জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ বলে রায় দেন। ২০১৮ সালের ৮ ডিসেম্বর দলটির নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।’

২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক বিশ্বখ্যাত নিরাপত্তাবিষয়ক থিংক ট্যাংক আই এইচ এস জেনস বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নাম তালিকাভুক্ত করে দাবি করে নেতারা আরও বলেন, ‘নিবন্ধন বাতিল শুধু নয়, জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি আইনিভাবে নিষিদ্ধের দাবি প্রায় পাঁচ দশকের।’

তারা বলেন, ‘গত ৩০ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ১৪ দলের সভায় চিহ্নিত সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ও যুদ্ধাপরাধী সংগঠন জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করার দাবি উত্থাপন করা হয়। ছাত্রনেতারা যৌথ বিবৃতিতে বলেন, জামায়াত ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করে নিষিদ্ধ করায় বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ স্বাগত জানাচ্ছে। একই সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সব সাংগঠনিক পর্যায়ে যুক্ত ব্যক্তিদেরও সন্ত্রাসবাদী হিসেবে তালিকা প্রকাশ এবং জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির নিয়ন্ত্রিত সব ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, কোচিং সেন্টারসহ মৌলবাদী-সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডে অর্থায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত সব প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে আনার জোর দাবি জানাই।’

/এনএআর/
সম্পর্কিত
রাবি উপাচার্যের আশ্বাসে অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত, নতুন অ্যাডহক কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত
জামায়াত নেতার ‘কলিজা ছিঁড়ে ফেলার’ হুমকি দেওয়া বিএনপি নেতাকে শোকজ
সাংবাদিককে জামায়াত কর্মীর হুমকির অভিযোগে থানায় জিডি
সর্বশেষ খবর
বাংলাদেশ দরিদ্র নয়, দুর্নীতিগ্রস্ত: সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা
বাংলাদেশ দরিদ্র নয়, দুর্নীতিগ্রস্ত: সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা
বিতর্কিত নারী সংস্কার কমিশনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা নিতে হবে: মামুনুল হক
বিতর্কিত নারী সংস্কার কমিশনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা নিতে হবে: মামুনুল হক
প্লট বিক্রির নামে প্রতারণার অভিযোগ, পরিচালকের শাস্তি চান ভুক্তভোগীরা
প্লট বিক্রির নামে প্রতারণার অভিযোগ, পরিচালকের শাস্তি চান ভুক্তভোগীরা
নারী সংস্কার কমিশন পুনর্গঠনের দাবি হেফাজত আমিরের
নারী সংস্কার কমিশন পুনর্গঠনের দাবি হেফাজত আমিরের
সর্বাধিক পঠিত
কেন আবারও আন্দোলনে যাচ্ছেন সহকারী প্রাথমিক শিক্ষকরা?
কেন আবারও আন্দোলনে যাচ্ছেন সহকারী প্রাথমিক শিক্ষকরা?
শুকনো মরিচের দাম কেজিতে কমলো ১০০ টাকা
শুকনো মরিচের দাম কেজিতে কমলো ১০০ টাকা
কমোডের ওয়াটার ট্যাংক পরিষ্কার করবেন যেভাবে
কমোডের ওয়াটার ট্যাংক পরিষ্কার করবেন যেভাবে
‘নারী সংস্কার কমিশনের প্রতি ঘৃণা উসকে দেওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন’
‘নারী সংস্কার কমিশনের প্রতি ঘৃণা উসকে দেওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন’
‘স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় ফার্মাসিস্ট যুক্ত করার কথা ভাবছে সরকার’
‘স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় ফার্মাসিস্ট যুক্ত করার কথা ভাবছে সরকার’