‘দিনে দিনে যাওয়া যাবে, খেলা যাবে’

স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হতে যাচ্ছে আগামীকাল শনিবার। যে দিনটির জন্য দক্ষিণাঞ্চল তথা পুরো দেশবাসী ছিল অধীর অপেক্ষায়। ফলে দেশের দীর্ঘতম সেতু উদ্বোধনের দ্বারপ্রান্তে থেকে সবার বুঝি আর তর সইছে না। খেলোয়াড়দের মধ্যে যাদের বাড়ি ওপারে, তাদের আনন্দও ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। এই সেতু চালু হওয়ায় এখন আর ফেরির প্রয়োজন পড়বে না।

জাতীয় দল ও আবাহনী লিমিটেডের উইঙ্গার রাকিব হোসেনের বাড়ি বরিশালের তালতলিতে। খেলার ফাঁকে নিজের বাড়িতে যেতে হলে এতদিন তাকে ভোগান্তিতে পড়তে হতো। ফেরিতে নদী পার হওয়ার সময় দুঃসহ স্মৃতিও আছে তার। ২৪ বছর বয়সী ফুটবলার তার তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়ে পদ্মা সেতুর উপকারিতা সম্পর্কে বলেছেন বাংলা ট্রিবিউনকে, ‘২০১৭ সালে আমি তখন চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে ভিক্টোরিয়াতে খেলি। বাড়ি যাওয়ার পথে একদিন ফেরিতে বড় দুর্ঘটনার মুখে পড়তে হয়েছিল। দিনের বেলাতে আবহাওয়া খারাপ ছিল তখন। পানি উঠে যায় ফেরিতে। সবার মধ্যে তখন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। যাহোক, সেদিন কোনোমতে ওপারে পৌঁছাতে পেরেছিলাম।’

স্বপ্নের পদ্মা সেতু হওয়ার পর এখন আর সেই দুশ্চিন্তা নেই। তাই রাকিব বেশ উচ্ছ্বসিত, ‘এখন পদ্মা সেতু হওয়াতে নির্বিঘ্নে বরিশাল যেতে পারবো। শুধু তাই নয়, দক্ষিণাঞ্চলের যেকোনও জায়গায় খেলতে যেতে কোনও বাধাই থাকবে না। এই আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।’

রাকিবের মতো অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার ইয়াসিন খানের বাড়িও বরিশালের মুলাদিতে। তবে শেখ জামালের এই ফুটবলার থাকেন শহরে। কয়েক ঘণ্টায় পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে সরাসরি বাড়ি যাওয়ার রোমাঞ্চ দোলা দিচ্ছে তাকে।

শুধু তাই নয়, দক্ষিণাঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে ঘরোয়া কিংবা আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট কম হয়ে আসছে। যাতায়াতের ভোগান্তিই তার অন্যতম কারণ। ফুটবলে শুধু গোপালগঞ্জে পেশাদার লিগের ভেন্যু আছে। যদিও একসময় জাতীয় ফুটবল লিগের ভেন্যু ছিল বরিশাল। কিন্তু পদ্মা সেতুর কারণে নানাবিধ সম্ভাবনার দুয়ার যে খুলে গেলো, তা নিয়ে গর্ব প্রকাশ পেলো তার কথায়, ‘পদ্মা সেতু হওয়াতে আমাদের যে কী ভালো লাগছে, তা বলে বোঝাতে পারবো না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনেক ধন্যবাদ। এর ফলে আমাদের অঞ্চলে এখন ঘরোয়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ম্যাচের সুযোগ আরও বেড়ে গেলো। অবকাঠামোসহ অন্য জায়গাতে আরও উন্নতি হবে। এটা সবার জন্য খুশির খবর।’

৫ বারের জাতীয় টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়ন সোনাম সুলতানা সোমার নিজের বাড়ি নড়াইলে। সেতুর কারণে তার যাত্রাপথের ভোগান্তির পাশাপাশি বেঁচে যাচ্ছে সময়ও। ফেরিঘাটের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়ে এই তারকা বলেছেন, ‘এমনও হয়েছে ফেরিঘাটে অনেক সময় আটকে থাকতে হয়েছে। এখন এই সেতু হওয়া সবার জন্য ভালো খবর। দিনে দিনে সেখানে যাওয়া যাবে, খেলা যাবে।’

শুধু খেলোয়াড় নয়, সংগঠকসহ সবার জন্যই আনন্দ বয়ে এনেছে এই পদ্মা সেতু।