পদ্মা সেতু নিয়ে ‘মুখ লুকাচ্ছেন’ বিএনপি নেতারা

প্রমত্তা পদ্মা নদীর ওপর সেতু নির্মাণকে কেন্দ্র করে গত প্রায় ১০ বছর ধরেই ক্ষমতাসীন দলের প্রতি নানা ধরনের অভিযোগ তুলে এসেছে বিএনপি। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল— ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মন্তব্য। ওই সভায় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উক্তি ছিল— ‘পদ্মা সেতু আওয়ামী লীগের আমলে আর হবে না। আর যদি সেতু জোড়াতালি দিয়ে বানায়, সেই সেতুতে কেউ ওঠতে যাবেন না। অনেক রিস্ক আছে।’ শনিবার (২৫ জুন) দেশের গৌরবের প্রতীক পদ্মা সেই সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে রাজধানী এবং দেশের অন্যান্য অংশকে অর্থনৈতিকভাবে সংযুক্ত করার পাশাপাশি পদ্মা সেতুর নির্মাণের মধ্য দিয়ে নানা খাতে সম্ভাবনা সৃষ্টির বিষয়টি উঠে এসেছে বিশ্লেষকদের বয়ানে। যোগাযোগ ব্যবস্থায় দক্ষিণবঙ্গের মানুষের যাত্রাকে আরও সহজতর করার পথ উন্মুক্ত হলেও এ বিষয়টি নিয়ে বিএনপি নেতারা অনেকটাই ‘চুপ’ করে আছেন।

দলটির নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে বেরিয়ে এসেছে— পদ্মা সেতু নির্মাণের কারণে দেশের একটি অংশের মানুষের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক প্রভাবকে সামনে বিএনপির নেতারাও খুশি। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে এই মনোভাব কোনোভাবেই প্রকাশ্যে আনার পক্ষে নন কোনও কোনও নেতা। অনেকটাই ‘মুখ লুকিয়ে’ বিষয়টি থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখছেন তারা।

শুক্রবার (২৪ জুন) সন্ধ্যায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘পদ্মা সেতু নিয়ে অনেক বক্তব্য দিয়েছি। এ বিষয়ে আর কিছু বলতে চাই না।’ সিনিয়র পর্যায়ের অন্তত একডজন নেতাকে প্রশ্ন করা হলেও তারা কোনও ‘রা’ করতে ইচ্ছুক নন।

স্থায়ী কমিটির প্রবীণ সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারও মন্তব্য করতে রাজি হননি। তার মন্তব্য, ‘দল থেকে যা বলা হবে, সেটাই আমার মত।’

শনিবার সেতু উদ্বোধনের একদিন আগে বিএনপির নানা পর্যায়ের নেতাকর্মী ও দায়িত্বশীলদের সঙ্গে আলাপকালে কয়েকটি বিষয় উঠে আসে। তারা জানিয়েছেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের কারণে বিএনপি অখুশি— এমন কোনও প্রশ্নই নেই। বরং সেতু নির্মাণের প্রক্রিয়ার সঙ্গে বিএনপি-জোট সরকার সরাসরি যুক্ত ছিল।

১৯৯৮-২০০০ প্রি-ফিজিবিলিটির পর ২০০৪ সালের জুলাই মাসে জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা-জাইকা মাওয়া ও জাজিরার মধ্যে পদ্মা সেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা জানিয়ে প্রতিবেদন দেয়। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্মা সেতুর নকশা প্রণয়নে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করে। নির্মাণ কাজের সবকিছু চূড়ান্ত হলেও ২০১১ সালে বিশ্বব্যাংকসহ দাতাসংস্থাগুলো অর্থছাড় বন্ধ করে দেয়। পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা করেন।

পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যাবে না বলে জানিয়েছে বিএনপি।

দায়িত্বশীল এক নেতার মন্তব্য, ‘খালেদা জিয়াকে পদ্মা সেতু থেকে টুস করে ফেলার দেওয়ার মন্তব্যের জেরে এখন কেউ ইতিবাচক থাকলেও প্রকাশ্যে এ নিয়ে মুখ খুলবেন না। প্রধানত, সেতু নির্মাণের কারণে সাধারণ মানুষের যোগাযোগ অনেক সহজতর হলেও নেতারা বিষয়টিকে কোনোভাবেই প্রসঙ্গ করতে চাইছেন না। এতে করে দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের রোষানলে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।’

বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং ও বিএনপির মিডিয়া টিমের সদস্য শায়রুল কবির খান মনে করেন, ‘মূল জিনিসটা হচ্ছে দলের চেয়ারপারসনের ইস্যু খুবই মর্মান্তিক। এ ধরনের মন্তব্যে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।’

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নিজের নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিবেদককে বলেন, ‘দুই দলের মধ্যে ঝগড়া থাকলে যা হয়। ভালো কাজ করলেও ভালো না। মন্দ কাজ করলে তো মন্দই। এটাই ট্রেডিশন। টলারেন্স নেই।’