আমরা অপমানের প্রতিশোধ নিয়েছি: ওবায়দুল কাদের

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, গোটা জাতি আজকে আপনাকে (প্রধানমন্ত্রী) স্যালুট করে। সারা বিশ্বে আজকে আপনি প্রশংসিত। আপনি প্রমাণ করেছেন আমরাও পারি, আপনি বলেছেন, নিজের টাকায় করবো। প্রমাণ করেছেন—নিজের টাকায় পদ্মা সেতু করেছেন। মাথা নত করেননি বঙ্গবন্ধুকন্যা। কী দুঃসময়, কঠিন সময়, দেশে-বিদেশে চক্রান্ত সব উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন আমরা বীরের জাতি। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, বঙ্গবন্ধুকন্যা সক্ষমতার প্রতীক, এটা সত্য। তার চেয়েও বড় সত্য আমরা আমাদের অপমানের প্রতিশোধ নিয়েছি।’

শনিবার (২৫ জুন) মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত সুধী সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ কেবল একা নন প্রধানমন্ত্রী, শেখ রেহানা, জয়, পুতুল, ববির কী অপরাধ ছিল। একটা পরিবারকে টার্গেট করে হেনস্তা করা হয়েছিল। একটা পরিবারকে অপমান করা হয়েছে। বাঙালি জাতিকে অপমান করা হয়েছে—এই প্রকল্প থেকে সরে গিয়ে। অপবাদ দিয়েছে দুর্নীতির। অনেককেই অপমান করা হয়েছে পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে সরে গিয়ে। বঙ্গবন্ধুকন্যা, আমি মনে করি— সক্ষমতার প্রতীক এটা সত্য। তার চেয়েও বড় সত্য আমরা অপমানের প্রতিশোধ নিয়েছি।’ 

তিনি বলেন, ‘সব প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে কাজ শুরু করা ছিল চ্যালেঞ্জের। এই সেতু নির্মাণে অন্য কারও কৃতিত্ব নেই, সব কৃতিত্ব একজনের। তিনি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। সারা বাংলার দাবি ছিল শেখ হাসিনার নাম পদ্মা সেতুতে যুক্ত করতে। তিনি নাকচ করে দিয়েছেন।’

এর আগে স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২৫ জুন) সকাল ১০টায় হেলিকপ্টারযোগে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সমাবেশস্থলে পৌঁছান। সকাল সাড়ে ৯টায় ঢাকার তেজগাঁওয়ের পুরান বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারে রওনা হন প্রধানমন্ত্রী। 

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে এই সুধী সমাবেশ থেকেই স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

মঞ্চের সামনে উপস্থিত রয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, মাহবুব-উল হক হানিফ, বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন, ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, দেশের দীর্ঘতম এই সেতুর দাফতরিক নাম ‘পদ্মা সেতু’। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু রাজধানীর সঙ্গে মেলবন্ধন সৃষ্টি করলো দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলাকে। দ্বিতল দেশের দীর্ঘতম এই সেতুতে গাড়ি ও রেল দুটোই চলবে। সেতু নির্মিত হয়েছে কংক্রিট আর স্টিল দিয়ে। সেতুতে থাকছে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ পরিবহন সুবিধা। মুন্সীগঞ্জ জেলার মাওয়া, মাদারীপুর জেলার শিবচর এবং শরীয়তপুর জেলার জাজিরার সীমান্তবেষ্টিত পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তে সংযোগ সড়ক রয়েছে ১২ দশমিক ১২ কিলোমিটার।

১৯৯৯ সালে প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষার মাধ্যমে পদ্মা সেতু প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয়। মূল কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর। এরপর করোনা মহামারিতেও একদিনের জন্য কাজ থেমে থাকেনি; দীর্ঘ সাত বছরের দিন-রাত হাজারো মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রমে বাস্তবে রূপ নিয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু।