ঐতিহাসিক পদ্মা সেতুর উদ্বোধন যেভাবে দেখলো ভারতীয় মিডিয়া

শনিবার (২৫ জুন) দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে পদ্মা সেতুর অবিস্মরণীয় উদ্বোধনের ঘটনা প্রতিবেশী ভারতের গণমাধ্যমেও বিপুল সাড়া ফেলেছে। ভারতের অধিকাংশ মিডিয়া একে যেমন বাংলাদেশের জন্য এক অসাধারণ অর্জন বলে বর্ণনা করেছে তেমনি এর মাধ্যমে ঢাকার সঙ্গে কলকাতা তথা ভারতের পূর্বাঞ্চলের ভৌগোলিক দূরত্ব যে অনেকটাই কমে যাবে, গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে সে বিষয়টিতেও।

রবিবার (২৬জুন) সকালে জাতীয় দৈনিক দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়ার (দিল্লি সংস্করণ) প্রথম পাতাতেই খবর হয়েছে, ‘বাংলাদেশের সেতু কমিয়ে দেবে কলকাতা-ঢাকা ট্রেন সফরের সময়’। ভেতরে বিস্তারিত খবরেও ঢাকা থেকে তাদের প্রতিবেদক লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ তাদের দীর্ঘতম সেতুই শুধু উদ্বোধন করল না, এর মাধ্যমে ভারতকেও আরও কাছে নিয়ে এলো।’ দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া আরও জানাচ্ছে, বেনাপোলের কাছে ভারত সীমান্ত থেকে রাজধানী ঢাকার দূরত্ব এখন ৭০ কিলোমিটার কমবে, আর কলকাতা-ঢাকা ট্রেন জার্নির সময় কমে হবে অর্ধেক। 

‘দ্য হিন্দু’-র বিশেষ প্রতিবেদক জোর দিয়েছেন পদ্মা সেতুর উদ্বোধনে ভারত সরকারের অভিনন্দন জানানোর বিষয়টিকে। তাদের খবরে উল্লেখ করা হয়েছে যে ওই বার্তায় বলা হয়েছিল, ‘পদ্মা সেতুর সাফল্য শেখ হাসিনার দৃঢ় সংকল্প আর অঙ্গীকারই প্রমাণ করে, ভারত যাতে বরাবর আস্থা রেখে এসেছে।’ 

ঢাকার ভারতীয় দূতাবাস বাংলাদেশ সরকারকে পাঠানো তাদের অভিনন্দন বার্তায় আরও লিখেছে, ‘পদ্মা সেতু শুধু বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ কানেক্টিভিটি বাড়াতেই সাহায্য করবে না, তা ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যেকার বাণিজ্য ও অবকাঠামোকেও (লজিসটিকস) উন্নত করবে।’  

দ্য সানডে এক্সপ্রেসে (ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকার রবিবারের সংস্করণ) আজ (২৬ জুন)  খবরের শিরোনাম করা হয়েছে : ‘প্রমত্তা পদ্মার ওপর সেতুর উদ্বোধন করলো বাংলাদেশ’। রাজনৈতিক সংঘাত ও দুর্নীতির অভিযোগকে ঘিরে সেতুর কাজ শুরুতে বাধাগ্রস্ত হলেও মাত্র আট বছরের মধ্যে যে নিজস্ব অর্থায়নে বাংলাদেশ যে এই সেতুটি তৈরি করতে পেরেছে, প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে সে কথা।

unnamedভারতের শীর্ষস্থানীয় থিঙ্কট্যাঙ্ক বা গবেষণা প্রতিষ্ঠান অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন (ওআরএফ)-ও পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে গতকাল (২৫ জুন) একটি গবেষণাধর্মী নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। গবেষক অনসূয়া বসুরায় চৌধুরী, প্রার্থনা সেন ও মোহিনী বোসের যৌথভাবে লেখা ওই নিবন্ধে দেখানো হয়েছে পদ্মা সেতু কীভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সংযোগের নতুন দিগন্ত খুলে দেবে। 

তারা লিখেছেন, যে এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্ক অন্তত ৩২টি দেশের সঙ্গে ইউরোপকে সড়কপথে সংযুক্ত করতে চাইছে, এই ‘মেগা-ব্রিজে’র মাধ্যমে বাংলাদেশ সেই নেটওয়ার্কের সঙ্গেও সংযুক্ত হবে। বাংলাদেশে এই মুহুর্তে এশিয়ান হাইওয়ের তিনটি সেগমেন্টের কাজ চলছে (এ এইচ-ওয়ান, টু ও থ্রি) – এই সেতুটি হবে তার প্রথমটির অপরিহার্য অংশ।

ওআরএফের গবেষকরা আরও জানাচ্ছেন, এছাড়া পদ্মা সেতুর রেল অংশটিও ট্রান্স-এশিয়ান রেল রুটের সঙ্গে সংযুক্ত হবে – যে রুটটি বাংলাদেশকে ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার বা চীনের মতো বহু দেশের সঙ্গে রেলপথে সংযুক্ত করতে চাইছে।

সর্বভারতীয় প্রায় সব টিভি চ্যানেলেই শনিবার পদ্মা সেতু উদ্বোধনের ছবি ও খবর দেখানো হয়েছে। আর কলকাতার বাংলা চ্যানেলগুলোতে এই ঐতিহাসিক ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে আবেগ ও উচ্ছ্বাসও ছিল অভূতপূর্ব।

কলকাতা শহরের আটটি জায়গায় বাংলাদেশের উপ-দূতাবাস ও কলকাতা পৌরসভার যৌথ উদ্যোগে জায়ান্ট স্ক্রিনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সরাসরি অনুষ্ঠান দেখানোরও ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

তবে এই ঐতিহাসিক দিনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বা ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বা মুখপাত্র) বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়ে কোনও টুইট করলে তা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আরও সুন্দর একটি বার্তা দিতে পারত – এমনও মত প্রকাশ করছেন কোনও কোনও পর্যবেক্ষক।