‘পদ্মা সেতু দেখে সব কষ্ট ভুলে গেছি’

‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার (২৫ জুন) খুলেছে দিয়েছেন স্বপ্নের পদ্মা সেতু। এতদিন শুধু টিভিতেই এই সেতু দেখেছি। এবার নিজে ঘুরে দেখলাম। কুষ্টিয়া থেকে অনেক কষ্ট করে এসেছি। সেতু ঘুরে দেখে সব কষ্ট ভুলে গেছি।’ রবিবার (২৬ জুন) টোল প্লাজার পাশে এভাবেই পদ্মা সেতু নিয়ে নিজের আবেগ প্রকাশ করছিলেন কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে আসা রানী বেগম। 

তিনি জানান, সেতু দেখতে সকালে ট্রেনে করে তিনি ভাঙ্গা আসেন। বাসা থেকে রান্না করে খাবারও নিয়ে এসেছেন তিনি। সেই খাবার দুপুরে টোল প্লাজার সামনে পরিবারের অন্যদের সঙ্গে খাচ্ছিলেন। তবে এত দূর থেকে এসেও সেতুতে উঠে কোনও কষ্ট নেই তার।  

এদিকে ব্রিজ উদ্বোধনের পর থেকেই জাজিরা প্রান্তে দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। রবিবার ভোর থেকেই সেতুর দুই পাড়ে ভিড় জমান দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা দর্শনার্থীরা। শরীয়তপুর জাজিরা প্রান্তে ছিল তাদের বাধভাঙা উল্লাস। বিভিন্ন জেলা থেকে গাড়ি নিয়ে সেতুর জাজিরা প্রান্তে জড়ো হতে থাকেন সাধারণ মানুষ। আবার কেউ কেউ মোটরসাইকেল ভাড়া নিয়ে সেতু পার হয়ে আবার ফিরে আসেন জাজিরা প্রান্তে।

দর্শনার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা বহুদূর পার হয়ে ভোরে পদ্মা সেতু এলাকায় পৌঁছান।  আবার কেউ কেউ বাসা থেকে রান্না করে খাবার নিয়ে এসেছেন।

কুয়াকাটা থেকে আসা রানা বলেন, শুধু পদ্মা সেতু দেখার জন্যই আমরা বন্ধুরা ৫০টি মোটরসাইকেলে করে এসেছি। সেতুতে উঠে খুবই ভালো লেগেছে। 

বরিশাল থেকে আসা স্কুলশিক্ষক জোবায়ের বলেন, আমি পরিবার নিয়ে সেতু দেখতে এসেছি। এমন বড় একটা স্থাপনা ঘুরে দেখে মন ভালো হয়ে গেছে। সেতুতে ওঠার অনুভূতিটা আসলেই অন্যরকম। 

খুলনা থেকে আসা শিউলি আক্তার বলেন, সেতু দেখতে বহু কষ্ট করে এসেছি। বৃষ্টিতে ভিজে সেতু দেখেছি, খুব ভালো লেগেছে। 

এদিকে বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে। এতে জানানো হয়- সেতুতে ৬০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে গাড়ি চালানো যাবে না। এছাড়া পদ্মা সেতুর নিরাপত্তা ও স্থায়িত্ব রক্ষার্থে ব্যবহারকারীদের জন্য কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, পদ্মা সেতুর ওপর অনুমোদিত গতিসীমা ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার, পদ্মা সেতুর ওপর যেকোনও ধরনের যানবাহন দাঁড়ানো ও যানবাহন থেকে নেমে সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে ছবি তোলা/হাঁটা সম্পূর্ণ নিষেধ। তিন চাকাবিশিষ্ট যানবাহন (রিকশা, ভ্যান, সিএনজি অটোরিকশা ইত্যাদি), হেঁটে, সাইকেল বা নন-মটোরাইজড গাড়ি যোগে সেতু পারাপার হওয়া যাবে না। গাড়ির বডির চেয়ে বেশি চওড়া এবং ৫.৭ মিটার উচ্চতার চেয়ে বেশি উচ্চতার মালামালসহ যানবাহন সেতুর ওপর দিয়ে পারাপার করা যাবে না। সেতুর ওপরে কোনও ধরনের ময়লা ফেলা যাবে না বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। 

তবে রবিবার সেতু এলাকায় দর্শনার্থীদের এসব নির্দেশনা ভাঙতে দেখা গেছে। অনেকেই গাড়ি থামিয়ে সেতুতে নেমে ছবি তুলেছেন। আবার অনেককে টিকটক ভিডিও বানাতেও দেখা গেছে। এছাড়া দর্শনার্থীরা পায়ে হেঁটে ঘুরে বেড়িয়েছেন পুরো সেতু। এসব ঘটনায় ভ্রাম্যমাণ আদালত অনেককে জরিমানাও করেন।

অবস্থার পরিবর্তন আনতে বিকালে সেতুতে পেট্রলিং শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। কোনও গাড়িকে সেতুতে থামতে দেননি তারা। এতে সেতুতে উঠে নিয়ম মানার ঘটনা কমে আসে। 

এর আগে, শনিবার (২৫ জুন) দুপুর ১২টার দিকে পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রবিবার ভোর ৬টা থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল শুরু হয়। সকালে পদ্মা সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, নির্দিষ্ট পরিমাণ টোল দিয়ে যানবাহনগুলো সুশৃঙ্খলভাবে সেতুর ওপর দিয়ে পদ্মা পার হচ্ছে।

সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় স্থাপনা এই পদ্মা সেতু। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার। দ্বিতল এই সেতুর এক অংশ পদ্মা নদীর মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্ত এবং অপর অংশ নদীর শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে যুক্ত। একইসঙ্গে ট্রেন ও গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা রয়েছে এ সেতুতে। চার লেনবিশিষ্ট ৭২ ফুট প্রস্থের এ সেতুর নিচতলায় রয়েছে রেল লাইন। এর মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে। পদ্মা সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।