বাংলাদেশের যে স্থাপনাশৈলী এখনও বিমোহিত করে চলেছে অগণিত মানুষকে, তার মধ্যে আছে দেশজুড়ে থাকা অগণিত নয়নাভিরাম মসজিদ। এ নিয়েই বাংলা ট্রিবিউন-এর ধারাবাহিক আয়োজন ‘বাংলাদেশের প্রসিদ্ধ মসজিদ’। আজ থাকছে পাবনার বিখ্যাত চাটমোহর শাহী মসজিদ।
প্রাচীন স্থাপত্য শিল্পের অপূর্ব নিদর্শন ৪৪০ বছরের ঐতিহ্য চাটমোহর ‘শাহী মসজিদ’। পাবনা জেলা থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে চাটমোহর উপজেলা। আর উপজেলা পরিষদ থেকে ২০০ গজ দূরেই তিন গম্বুজ বিশিষ্ট ঐতিহাসিক চাটমোহর শাহী মসজিদ। বাংলার মুসলিম স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন।
মসজিদের শিলালিপিতে এর নির্মাতা ও নির্মাণকাল সম্পর্কে লেখা আছে। শিলাফলকের ফার্সি লিপি থেকে জানা যায়, বিশাল এই মসজিদ সুলতান সৈয়দ বংশীয় প্রধান সৈয়দ আবুল ফতে মুহাম্মদ মাসুম খাঁনের সময় নির্মিত।
কাকশাল গোত্রের সন্তান খান মুহাম্মদ তকি খান ৯৮৯ হিজরি তথা ১৫৮১ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটি নির্মাণ করেন। শিলালিপি অনুযায়ী অনুমাণ করা হয় মাসুম খাঁন নিজেকে সুলতান ঘোষণা করার কিছুকালের জন্য পাবনায় স্বাধীন সালতানাত প্রতিষ্ঠা করেন এবং চাটমোহরে রাজধানী স্থাপন করেন।
শাহী মসজিদের দেয়ালে থাকা প্রাচীন ভাস্কর্যগুলো মসজিদের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক। এ ছাড়া ক্ষুদ্রাকৃতির যে শিলালিপি মসজিদের সামনের ইঁদারার ভেতরের দেয়ালে স্থাপন করা ছিল, তা এখন মসজিদের প্রধান প্রবেশ খিলানে রাখা রয়েছে।
স্থানীয় প্রবীণরা বলেন, এক সময় চাটমোহর ছিল পাবনার অন্যতম বাণিজ্যকেন্দ্র। মোঘল ও পাঠানদের অবাধ বিচরণ ছিল এখানে। তখনই তকি খান কাকশাল মসজিদটি নির্মাণ করেন। তবে অনেক বইয়ের পাতায় এটাকে মাসুম কাবলির মসজিদ বলেও উল্লেখ করা হয়।
মসজিদটি যে জাফরি ইটে বানানো তা এখনকার ইটের মতো নয়। এগুলো খানিকটা চিকন হতো। আর ওই ইট দেখেই বোঝা যায় মসজিদটি কোন আমলের।
মসজিদের ভেতর দুটো কাতার দাঁড়াতে পারে। ভেতরে কালিমা তাইয়েবা লিখিত একটি কালো পাথর রয়েছে। বর্তমানে মসজিদটি একটি সংরক্ষিত ইমারত।
একসময় মসজিদটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। ৮০’র দশকে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর মসজিদটির সংস্কার করে। সংস্কারের কয়েকবছর পর মসজিদের তিনটি গম্বুজ ও ছাদ প্রায় ধ্বংস হয়ে যায়। পরে অধিদফতরের অধীনে মসজিদটি আবার সংস্কার করে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
মসজিদটিতে তিনটি প্রবেশপথ। তিনটি দরজার মধ্যে প্রধান প্রবেশপথে উঁচু দরজার ওপরে কালো পাথরের মাঝে খোদাই করা কালেমা শাহাদাৎ লেখা রয়েছে। মূল প্রবেশপথ ছাড়া বাকি দুটি একই ধরনের।
দেয়ালের মাঝামাঝি অংশে ছাঁচে ঢালা নকশার একটি সারি রয়েছে। যে কারণে মসজিদটিকে বাইরে থেকে দেখতে দ্বিতল বলে মনে হয়। মিহরাবগুলো আয়তাকার ফ্রেমের মধ্যে স্থাপিত। শুরুতে এগুলোতে পোড়ামাটির অলঙ্করণ ছিল। যার কিছু চিহ্ন এখনও খুঁজে পাওয়া যায়। গোলাপ নকশা, পুষ্পলতা এবং জ্যামিতিক নকশার মতো নানা মোটিফ এখানে ব্যবহৃত হয়েছিল।
তিনি আরও জানান, সুলতানি-মোঘল আমলের শাহী মসজিদ দেখতে সারাবছর বহু মানুষ আসেন পাবনার চাটমোহরে। দেশ-বিদেশ থেকে প্রত্নতত্ত্ববিদরাও আসেন এর কারুকাজ দেখতে।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় হয় এই মসজিদে। এ ছাড়া মসজিদের বাইরে দুটি ঈদের নামাজের জামাতও হয়। এই মসজিদে একজন ইমাম ও একজন মুয়াজ্জিন রয়েছেন।