শ্রেণিকক্ষ ও পরীক্ষাগারের অভাব সরকারি বিদ্যালয়গুলোতে, শিক্ষকের পদ খালি ২২৫৪টি

শ্রেণিকক্ষ ও পরীক্ষাগারের অভাব সরকারি বিদ্যালয়গুলোতেদেশের বেশিরভাগ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ ও পরীক্ষাগার নেই। এসব বিদ্যালয়ে দুই হাজার ২৫৪টি শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। আবার কোনও কোনও বিদ্যালয়ে উচ্চমান সহকারী, পিয়ন কিংবা নিরাপত্তা প্রহরীও নেই। এতে বিদ্যালয়ে নিয়মিত পাঠদান বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে দাবি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর প্রধান শিক্ষকদের।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানরা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরে (মাউশি) পাঠানো প্রতিবেদনে এসব বিষয় উল্লেখ করেছেন।

প্রধান শিক্ষকরা তাদের প্রতিবেদনে যেসব তথ্য পাঠিয়েছেন তা বিশ্লেষণ করে মাউশি’র নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা  জানান,

সারা দেশে ৩৩৫টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ১০ হাজার ৯৯৭টি পদের বিপরীতে ২ হাজার ২৫৪ জন শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া ৬৯টি স্কুলে প্রধান শিক্ষক নেই। সহকারী প্রধান শিক্ষক নেই ৪৬২ টি বিদ্যালয়ে। এছাড়াও এসব বিদ্যালয়ে ১ হাজার ৭৪৪ জন সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে।

এর কারণ হিসেবে ওই কর্মকর্তা জানান, শিক্ষক নিয়োগবিধি সংশোধনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশির গড়িমসির কারণেই এতোগুলো শিক্ষকের পদ বর্তমানে শূন্য রয়েছে। প্রধান শিক্ষকদের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ২০১২ সালে মাধ্যমিক স্কুলের সহকারী শিক্ষকের পদ দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তার পদমর্যাদায় উন্নীত করা পর নিয়োগবিধি সংশোধন জরুরি হয়ে পড়েছে। এ কারণে এসব খালি পদে শিক্ষক চেয়েও পাচ্ছেন না সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানরা। বিধি সংশোধন না হওয়ায় সরকারও নিয়োগের বিষয়ে ধীরে চলো নীতি অবলম্বন করছে।

মাউশির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, গত চার বছর ধরে সরকারি স্কুলে নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। রাজধানী ও বড় শহরগুলোর বিদ্যালয়গুলোর অবস্থা কিছুটা ভালো হলেও অন্যান্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের বিদ্যালয়গুলোর অবস্থা আরও বেহাল। সেখানে অর্ধেকের বেশি শিক্ষকের পদ খালি।

এসব মতামতের ওপর ভিত্তি করে গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে দেশের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের নিয়ে এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সম্মেলনে জানানো হয়, বাহ্মণবাড়িয়ার সরকারি আনন্দ উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৭টি শিক্ষক পদের মধ্যে মাত্র সাতজন শিক্ষক আছেন। মেহেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫৩টি শিক্ষক পদের মধ্যে ২৩টি পদ শূন্য রয়েছে। লক্ষ্মীপুরের সরকারি রামগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয়ে ১৫টি শিক্ষক পদের মধ্যে সাতটি পদ শূন্য রয়েছে।

প্রধান শিক্ষকরা জানান, দেশের বেশিরভাগ স্কুলের অবকাঠামো ১৯৬০ সালে নির্মাণ করা হয়েছে। সে সময়ের নকশায় করা শ্রেণিকক্ষে মাত্র ২৫ জন শিক্ষার্থী ঠিক মতো বসতে পারে। বর্তমানে একটি শ্রেণিকক্ষে ৬০ থেকে ৮০ জন ছাত্র বসে ক্লাস করে।

তারা আরও বলেন, ২০০৫ সাল থেকে স্কুলে পিয়ন, উচ্চমান সহকারী, প্রহরী নিয়োগ দেওয়া বন্ধ রয়েছে। এতে দাফতরিক দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হচ্ছে।

মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুনের সভাপতিত্বে ওই সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি বলেন, দেশের সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে শিগগিরই ২ হাজার ১২৫ জন সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। সহকারী শিক্ষকদের পদমর্যাদা বৃদ্ধি করায় নিয়োগবিধি সংশোধন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। সংশোধিত নিয়োগবিধির অধীনে শিগগিরই সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে সহকারী শিক্ষকের সব শূন্য পদ পূরণ করা হবে।

/আরএআর/টিএন/