রিজার্ভের ১১৯ কোটি টাকা ফেরত আসছে: বাংলাদেশ ব্যাংক

রিজার্ভের অর্থ চুরিবাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি যাওয়া রিজার্ভের মধ্যে উদ্ধার হওয়া ৪৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার এবং ৪৮ কোটি ৮২ লাখ ৮০ হাজার পেসো বাংলাদেশকে ফিরিয়ে দিতে আদেশ জারি করেছে ফিলিপাইনের রিজিওনাল ট্রায়াল কোর্ট। বাংলাদেশি টাকায় এর পরিমাণ প্রায় ১১৯ কোটি টাকা।

সোমবার রাজধানীর মতিঝিলে অবস্থিতি বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে আদালতের আদেশের বিষয়টি জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র এএফএম মোকাম্মেল হক।

মোকাম্মেল বলেন, ‘বর্তমানে উদ্ধার হওয়া অর্থ ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রয়েছে। শিগগিরই আমরা এ অর্থ ফেরত পাবো। যখন অর্থ ফেরত পাওয়া যাবে, সেই সময়ের বিদ্যমান ডলার ও টাকার বিনিময় হারে আমরা ওই অর্থ পাবো। আমরা হিসাবে করে দেখেছি এরপর পরিমাণ হবে প্রায় ১ কোটি ৫২ লাখ ৫০ হাজার ডলার।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থ ফেরত পেতে ফিলিপাইন সরকার বনাম কিম অং এর মামলায় বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করে ফিলিপাইনের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সহকারী মুখপাত্র বলেন, ‘রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া বাকি অর্থ আইনি প্রক্রিয়ায় উদ্ধারের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। ফিলিপাইনের সরকার ও ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংক ও ফিলিপাইনে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে। আমরা অচিরেই চুরি যাওয়া সম্পূর্ণ অর্থ উদ্ধার করতে পারবো।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আদালত যে অর্থ বাংলাদেশকে ফেরত দিতে আদেশ জারি করেছে, ওই অর্থ ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত আছে। নগদে ওই অর্থ জমা আছে ডলার ও পেসোতে। পেসোকে যদি ডলারে কনভার্ট করা হয়, তাহলে পেসো ও ডলার মিলিয়ে হবে প্রায় ১ কোটি ৫২ লাখ ৫০ হাজার ডলার। এটাকে বর্তমান বিনিময় হারে কনভার্ট করলেই টাকার পরিমাণ পাওয়া যাবে।’

চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি হ্যাকিং এর মাধ্যমে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক, নিউ ইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্রে পরিচালিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ লেনদেনকারী হিসাব থেকে ৭০টি ভুয়া পেমেন্ট ইনস্ট্রাকশন (পিআই)-এর মাধ্যমে ১৯২ কোটি ৬০ লাখ ডলার অবৈধভাবে স্থানান্তরের প্রচেষ্টা চালানো হয়। এরমধ্যে ৪টি পিআই’র বিপরীতে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপাইনের একটি ব্যাংকের চারজন গ্রাহকের হিসাবে পাঠানো হয়। ফিলিপাইনে পাঠানো ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার রিজেল কমার্শিয়াল ব্যাংক করপোরেশন (আরসিবিসি)-এর ৪টি হিসাবে জমা হয় এবং সমপরিমাণ অর্থ ব্যাংকের একই শাখায় পরিচালিত অপর একজন গ্রাহকের হিসাবে জমা হয়। যা পরবর্তীতে একটি মানি রেমিটেন্স কোম্পানি হয়ে ফিলিপাইনে পরিচালিত ক্যাসিনোতে চলে যায় এবং পরবর্তীতে তা একজন ফিলিপিনো-চাইনিজ ব্যবসায়ী তুলে নেয়। এই ৮  কোটি ১০ লাখ ডলার আরসিবিসির জুপিটার স্ট্রিট, মাকাতি সিটি শাখায় পরিচালিত ভুয়া সুবিধাভোগীদের হিসাবে স্থানান্তর হয়। পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহযোগিতা চাওয়া হয়। ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের বাণিজ্যিক ব্যাংক আরসিবিসির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্তের ভার তাদের অ্যান্টি মানিলন্ডারিং কাউন্সিল (এএমএলসি)-এর ওপর অর্পণ করে। এএমএলসি আনুষ্ঠানিক তদন্তের জন্য গত ২৯ ফেব্রুয়ারি আদালতে আবেদন করে এবং ফিলিপাইনের আদালত থেকে ১ মার্চ ওই বার্তাগুলোর মাধ্যমে পাঠানো অর্থের চুড়ান্ত সুবিধাভোগীদের হিসাবগুলো আরসিবিসি’র সংশ্লিষ্ট শাখাসহ তিনটি ব্যাংকের সম্পৃক্ত হিসাবগুলো স্থগিত করাসহ (ফ্রিজ) আনুষ্ঠানিক তদন্তের নির্দেশ জারি করে। এরপর ফিলিপিনো-চাইনিজ ব্যবসায়ী কিম অং ১ কোটি ৫০ লাখ ডলার ফেরত দেয়। এই ব্যবসায়ীর ফেরত দেওয়া ওই অর্থ বাংলাদেশকে ফিরিয়ে দিতে এন্টি মানিলন্ডারিং কাউন্সিল ও কিম অং আদালতে একটি যৌথ প্রস্তাব (জয়েন্ট মোশন) দাখিল করে এবং আদালত থেকে গত ১ জুলাই আংশিক বাজেয়াপ্তকরণ আদেশ (পার্শিয়াল ফরফেইটার অর্ডার) জারি করা হয়। তারপর ফিলিপাইনের স্থানীয় আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক এফিডেভিটের মাধ্যমে আদালতে এ অর্থ ফেরত পাওয়ার জন্য আবেদন করে। এরই প্রেক্ষিতে সোমবার ফিলিপাইনের রিজিওনাল ট্রায়াল কোর্ট বাংলাদেশের অনুকূলে ৪৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার এবং ৪৮ কোটি ৮২ লাখ ৮০ হাজার পেসো অবমুক্ত করার আদেশ কারি করেছে।

/এসএনএইচ/টিএন/