X
মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫
১০ আষাঢ় ১৪৩২

খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে সরকার

শফিকুল ইসলাম
২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৩:০৫আপডেট : ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৩:০৫

খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে সরকার। শিল্প মন্ত্রণালয়ে প্রয়োজনে চিঠি লিখে এ কার্যক্রম বন্ধের অনুরোধ করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মনে করে, সাধারণ ক্রেতাদের নিজের প্রয়োজনীয় ও সাধ্য অনুযায়ী পরিমাণ সয়াবিন তেল কেনার সুবিধা দিতেই সরকার এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ভোজ্যতেল নিয়ে অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কারসাজি বন্ধে ‘ড্রাম ব্যবস্থাপনা’ নিয়ে কঠোর অবস্থানে ছিল সরকার। ভোজ্যতেল কোম্পানিগুলোকে ড্রামের পরিবর্তে ফুড গ্রেড কন্টেইনার, জেরিক্যান, পলি প্যাক ও পেটবোতল ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছিল বাংলাদেশ স্টান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই)। ভোজ্যতেলের গুণগতমান বজায় রাখা, মিলগুলোর উৎপাদন ও সরবরাহ পরিস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া, দাম বাড়ানোর উদ্দেশ্যে গুদামজাতকরণ হলে সেই কোম্পানি সহজে চিহ্নিত করা, সয়াবিন ও পামওয়েলের ভেজাল প্রতিরোধ এবং সর্বোপরি রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। শুধু সয়াবিনই নয়, একটা সময়ের পর পামওয়েলও খোলা অবস্থায় বিক্রির সুযোগ বন্ধে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

২০১৩ সালের আইনে ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ যুক্ত করার বিষয়টি সম্পৃক্ত করা হয়। এছাড়া ২০১৯ সালের আইনে ভোজ্যতেল প্যাকেট বা বোতলজাত করার বিধান রাখা হয়। এজন্য গত বছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত সময় নির্ধারিত ছিল। এ সময়ের মধ্যে ভোজ্যতেল প্রস্তুত ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান শতভাগ বোতলজাত ও প্যাকেটজাত করতে পারেনি।

বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি বাধ্যতামূলক করতে পারছে না সরকার (ফাইল ছবি)

খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধে এর আগেও একাধিকবার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা কার্যকর করা যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে শতভাগ প্যাকেটজাত সয়াবিন তেল বিক্রির সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে চাইছে সরকার। সম্প্রতি বিষয়টি পরিষ্কার করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। 

গত ১৮ এপ্রিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৬৩ থেকে বাড়িয়ে ১৬৭ টাকা পুনর্নির্ধারণ করে তা প্রকাশের জন্য সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এই সংবাদ সম্মেলনে ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যানও উপস্থিত ছিলেন। সেখানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভোজ্যতেল বিশেষ করে সয়াবিন ও পামতেল প্যাকেটজাত প্রক্রিয়ায় বিক্রির সিদ্ধান্ত কার্যকর করবে না বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বিষয়টি যদিও শিল্প মন্ত্রণালয় দেখছে, প্রয়োজন হলে শিল্প মন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখে এ সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়ন না করার পরামর্শ দেবো।

তিনি জানান, একজন ক্রেতা তার চাহিদা ও সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু প্রয়োজন ততোটুকুই ভোজ্যতেল যাতে কিনতে পারেন সে লক্ষ্যেই আমরা ভোজ্যতেল বিশেষ করে সয়াবিন ও পামতেল প্যাকেটজাত বিক্রি হোক তা চাই না। অতীতে বোতল নিয়ে ক্রেতারা যেভাবে তেল কিনতে বাজারে যেতেন, চাইলে বর্তমান সময়েও সেভাবে যাবেন। আমি নিজেও সেভাবে বাজার থেকে নিজেদের ঘরের প্রয়োজনীয় তেল বোতলে কিনে এনেছি। আমিও বাজার করেছি। আমরা যখন নুন আসতে পান্তা ফুরায় সময় অতিবাহিত করছি সেসময় প্যাকেটজাত ভোজ্যতেল বিক্রির সিদ্ধান্তে অনড় থাকতে পারি না। আমাদের এ সিদ্ধান্ত শুধু সয়াবিন ও পামতেলের ক্ষেত্রে প্রয়োজ্য। আমরা তো সরিষা বা অন্য কোনও তেলের কথা বলছি না।   

উল্লেখ্য, প্যাকেটজাত প্রক্রিয়ায় ভোজ্যতেল বিক্রির সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে বার বার সময়ক্ষেপণ করেছে ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী মিল মালিকরা। ভোজ্যতেল খোলা অবস্থায় বিক্রিতে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বা মিলারদের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি। এ কারণে বিভিন্ন অজুহাত দাঁড় করিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত বৈঠকে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে উৎপাদন খরচ বাড়ার কথাও জানানো হয়েছে।

সয়াবিন তেল

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, বাজারে ৬৫ শতাংশ ভোজ্যতেল এখন খোলা অবস্থায় বিক্রি হয়ে থাকে, আর বাকি ৩৫ ভাগ বিক্রি হচ্ছে পলি প্যাক কিংবা পেটবোতলে। কিছু ভোজ্যতেল টিনের ছোট ড্রামেও বিক্রি হয়ে থাকে। খোলা অবস্থায় যেসব ভোজ্যতেল বিক্রি হচ্ছে তা খুবই অস্বাস্থ্যকর এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া পুষ্টিমান নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। শুধু তাই নয়, তেল সরবরাহে দেশের শীর্ষ কোম্পানিগুলো যে ড্রামগুলো ব্যবহার করছে তা মূলত বিভিন্ন ‘রং’ কিংবা অন্যান্য আমদানিকৃত রাসায়নিক পণ্যের অব্যবহৃত খালি ড্রাম। অথচ ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ ও ব্যবসা করলেও নিজস্ব সিলমোহর করা কোনও ড্রাম ব্যবহার করা হচ্ছে না। এক্ষেত্রে কোম্পানিরগুলোর অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বর্তমান সারা দেশে হাজার হাজার ড্রাম ভোজ্যতেল উদ্ধার করা হলেও এগুলো কোন কোম্পানির তেল তা নিশ্চিত হতে প্রশাসনকে বেগ পেতে হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মজুদকৃত তেলের সন্ধান পাওয়া গেলেও এসব তেলের সরবরাহকারী বা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করতে পারে না গোয়েন্দা সংস্থা। নিজস্ব পলিপ্যাক না থাকায় পামওয়েল চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে সয়াবিন হিসেবে। এতে ক্রেতারা ঠকলেও কোম্পানিগুলো কিংবা সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে অতিরিক্ত মুনাফা লুটে নিচ্ছে। সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিও ঘোষণা দিয়েছিলেন সয়াবিনতেল আর খোলা অবস্থায় বিক্রি করা যাবে না। এছাড়া ওই সময় তিনি আরও জানিয়েছিলেন পামওয়েলও খোলা অবস্থায় বিক্রি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

জানা গেছে, সম্প্রতি শিল্প মন্ত্রণালয়ের বিএসটিআই কর্তৃক ভোজ্যতেলের ড্রাম ব্যবস্থাপনা নিয়মিত মনিটরিং করার লক্ষ্যে গঠিত কমিটির একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিল্প সচিবের সভাপতিত্বে ওই সভায় জানানো হয়, খোলা সয়াবিন বিক্রি বন্ধ করার যে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে তা আর পরিবর্তনের সুযোগ নেই। অথচ এতোদিন পরে এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাওরানবাজারের ভোজ্যতেলের পাইকারি ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম লাল মিয়া জানিয়েছেন, মিল মালিকরাই ড্রামভর্তি তেল আমাদের দিয়ে যায়, আমরা বিক্রি করি। খোলা তেল বিক্রি বন্ধ হলে আমরা করবো না। তিনি আরও বলেন, ড্রামের তেল স্বাস্থ্যকর কিনা জানি না। যেভাবে আসে সেভাবেই বিক্রি করি। বাজারে খোলা তেলের চাহিদা রয়েছে।

অপরদিকে বাজারে তীর ব্রান্ডের সয়াবিন তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক বিশ্বজিত সাহা জানিয়েছেন, ডলার সংকট ও ক্যাপিটাল মেশিনারিজের দাম বেড়ে যাওয়ায় ভোজ্যতেল প্যাকেটজাত করতে কারখানার অবকাঠামোগত পরিবর্তনটা ব্যয়বহুল হওয়ায় অনেকটাই কঠিন হয়ে উঠেছিল। বাজারে চাহিদা থাকার কারণেই খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে। ভোজ্যতেল স্বাস্থ্যসম্মত কি না এবং সেখানে ভিটামিন এ এর প্রয়োজনীয় উপস্থিতি আছে কি না, তা নিশ্চিত করতে তিনি অন্য কোনও উপায় বের করার পরামর্শ দেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে বছরে প্রায় ২৫ লাখ টন ভোজ্যতেলের প্রয়োজন হয়। যার ৯০ শতাংশই আমদানি করতে হয়। ভোজ্যতেলের বাজারের ৭০ শতাংশ পামতেল এবং ৩০ শতাংশ সয়াবিন তেলের দখলে রয়েছে।

/এফএস/
সম্পর্কিত
সাভার চামড়া শিল্পনগরে এসেছে ১৬৫৬টি চামড়াবাহী ট্রাক
খুলনা বিভাগে সংরক্ষণ করা হয়েছে ৩২৬০০০ পিস চামড়া
কমতে পারে যেসব পণ্যের দাম
সর্বশেষ খবর
মোহাম্মদপুরে পাটালি গ্রুপের দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেফতার
মোহাম্মদপুরে পাটালি গ্রুপের দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেফতার
নগর ভবনে ইশরাক সমর্থক-বিরোধীদের মারামারি, আহত ৭
নগর ভবনে ইশরাক সমর্থক-বিরোধীদের মারামারি, আহত ৭
মব বিপজ্জনক, বিবৃতিতে দায় সারবে না: জোনায়েদ সাকি
মাসব্যাপী জুলাই কর্মসূচি গণসংহতিরমব বিপজ্জনক, বিবৃতিতে দায় সারবে না: জোনায়েদ সাকি
মাটিতে বল ছুড়ে শাস্তি পেলেন পান্ত
মাটিতে বল ছুড়ে শাস্তি পেলেন পান্ত
সর্বাধিক পঠিত
প্রধান উপদেষ্টা ও দুদককে উকিল নোটিশ পাঠালেন টিউলিপ
প্রধান উপদেষ্টা ও দুদককে উকিল নোটিশ পাঠালেন টিউলিপ
সরকারি চাকরিজীবীদের বিশেষ সুবিধার সংশোধিত প্রজ্ঞাপন জারি
সরকারি চাকরিজীবীদের বিশেষ সুবিধার সংশোধিত প্রজ্ঞাপন জারি
কাতারের উদ্দেশে ছাড়া ফ্লাইট নামলো ওমানে, আবার ফিরছে ঢাকায়
দোহাগামী বিমানের সব ফ্লাইট বন্ধ ঘোষণাকাতারের উদ্দেশে ছাড়া ফ্লাইট নামলো ওমানে, আবার ফিরছে ঢাকায়
দেশে প্রথমবারের মতো গুগল পে চালু হচ্ছে আজ, যেসব সুবিধা পাওয়া যাবে
দেশে প্রথমবারের মতো গুগল পে চালু হচ্ছে আজ, যেসব সুবিধা পাওয়া যাবে
ফ্ল্যাট বিক্রিতে ধস, নির্মাণ খাতে ছাঁটাইয়ের শঙ্কা
ফ্ল্যাট বিক্রিতে ধস, নির্মাণ খাতে ছাঁটাইয়ের শঙ্কা