ভালো নেই দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মংলা। আর্থিক, নাব্যতা, কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের যন্ত্রপাতি আর কাস্টমস হাউজের আস্থা-এই চারটি সংকট মংলা বন্দরকে প্রায় অচল করে দিয়েছে।
খুলনা কাস্টমস হাউজের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে মংলা বন্দরে উচ্চ শুল্ক হারের পণ্য আমদানি কমে গেছে ৮৩ শতাংশ। একইভাবে এক বছরের ব্যবধানে এই বন্দর দিয়ে কন্টেইনারবাহী জাহাজ আসা কমেছে ২৯ দশমিক ৪১ শতাংশ। আবার খুলনা অঞ্চলের পাট, চিংড়ি সহ অন্যান্য পণ্য রফতানিকারকরা পাশের মংলা বন্দর ফেলে দ্বারস্থ হচ্ছেন চট্টগ্রাম বন্দরের। ফলে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি সময় নষ্ট হচ্ছে, বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ।
এ প্রসঙ্গে মংলা বন্দরের চেয়ারম্যান কমোডর এ কে এম ফারুক হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের তুলনায় মংলা বন্দরে কন্টেইনার আনার খরচ বেশি পড়ে। এছাড়া পশুর নদীতে নাব্যতা সংকটের কারণে অনেক জাহাজ বন্দরে ভিড়তে পারে না। পশুর নদীর নাব্যতার অভাবে এই বন্দরের সক্ষমতার সর্বোচ্চ ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ আমরা কাজে লাগাতে পারছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ড্রেজিং করে নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা গেলে বন্দরের গতি বাড়বে। বন্দরের কাজের জন্য আমাদের হাইস্পিড বোর্ড দরকার। সরকারের কাছে আমরা নতুন জাহাজ চাই। পাশাপাশি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ছয়টি নতুন ড্রেজার মেশিনও দরকার। জলযান ক্রয়, ইয়ার্ড বাড়ানো সহ অবকাঠামো উন্নয়নে বড় অংকের অর্থ বরাদ্দ জরুরি।’
অবশ্য দক্ষিণাঞ্চলের আমদানি-রফতানিকারকসহ অনেক ব্যবসায়ীর মনে আশার সঞ্চার করেছে মংলা বন্দর। স্থানীয় ব্যবসায়ী রকিবুদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রামপাল প্রকল্প ও পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে। এরই মধ্যে এ অঞ্চলে নতুন কলকারখানা গড়ে উঠতে শুরু করেছে।’
খুলনা কাস্টমস হাউজ জানিয়েছে, মংলা বন্দরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পণ্য গাড়ি। অথচ এই বন্দর দিয়ে গাড়ি আসাও কমে গেছে। গত এক বছরে এই বন্দরে গাড়ি আমদানির পরিমাণ ৪ শতাংশ এবং গাড়ি খালাস কমেছে ৬ শতাংশ। এছাড়া কন্টেইনার পণ্য আমদানি ৩৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং কন্টেইনার খালাস ৫৩ দশমিক ৩০ শতাংশ কমেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মংলা বন্দরে পড়ে রয়েছে দেড় হাজারেরও বেশি গাড়ি। পাশাপাশি আটকে আছে ৮০০রও বেশি কন্টেইনার।
এ প্রসঙ্গে মংলা কাস্টমসের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও ঝালকাঠি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সুলতান হোসেন খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ড্রেজিংয়ের অভাবে সাড়ে আট ফুট গভীরতার বেশি জাহাজ বন্দরে ভিড়তে পারে না। আমদানি পণ্য ছাড়ানোর সময় হয়রানির আশংকায় এই বন্দর দিয়ে অনেকেই শিল্পের জন্য ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আনতে চান না। যে কারণে কন্টেইনারবাহী বেশিরভাগ জাহাজ চলে যায় চট্টগ্রাম বন্দরে।
মংলা বন্দরের সমস্যার সমাধানে বন্দর, কাস্টমস হাউজ ও বন্দরের স্টেক হোল্ডারদের মধ্যে আস্থা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান। তিনি বলেন, পারস্পরিক টিমওয়ার্কের মাধ্যমে কাজ করলে বন্দরের সব সমস্যা দূর হয়ে যাবে। এই বন্দরের মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলে উন্নয়নের অপার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। পদ্মা সেতু হলে মংলা বন্দরের আমদানি-রফতানি অনেক বেড়ে যাবে।
/এএআর/
আরও পড়ুন:
ফের ইমেইল হ্যাকড: তথ্য-প্রযুক্তি বিভাগের সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকৎ