তোফায়েল-রুশনারা বৈঠক

রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের পাশে থাকবে

তোফায়েল আহমেদ ও রুশনারা আলীবাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক দীর্ঘদিনের। চলমান রোহিঙ্গা ইস্যুতে ব্রিটিশ সরকার, দেশটির পার্লামেন্ট এবং জনগণ বাংলাদেশের পাশে থাকবে। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে যাবার বিষয়ে যুক্তরাজ্য বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করবে। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে, খাবার দিয়ে বিশ্ববাসীর কাছে প্রশংশিত হয়েছে। আমরা আলাপ আলোচনা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান চাই।
১৮ সেপ্টেম্বর সোমবার ঢাকা সফররত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাণিজ্য দূত রুশনারা আলী এমপি’র নেতৃত্বে একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মতবিনিময়কালে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়।

মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে এখন প্রায় ১৭ কোটি মানুষ বাস করে। এর ওপর বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশের জন্য বড় বোঝা। বাংলাদেশ দ্রুত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চায়। ব্রিটিশ সরকার এ বিষয়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করবে বলে বাংলাদেশকে জানিয়েছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের তৃতীয় বড় রফতানি বাজার। প্রথম ও দ্বিতীয় অবস্থানে আছে জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্র। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেওয়া এভ্রিথিংস বাট আর্মস (ইবিএম)-এর আওতায় যুক্তরাজ্য বাংলাদেশকে ডিউটি ও কোটা ফ্রি বাণিজ্য সুবিধা প্রদান করছে। যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশের জন্য এ বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহত রাখবে। বাংলাদেশ যখন মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হবে, তখনও তারা বাংলাদেশকে জিএসপি প্লাস সুবিধা দেবে।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বর্তমানে বৈদেশিক বাণিজ্য বাংলাদেশের পক্ষে। গত ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যে ৩৫৬৯ দশমিক ২৬ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য রফতানি করেছে। একই সময়ে যুক্তরাজ্য থেকে আমদানি করেছে ৩৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য। বাংলাদেশের পক্ষে বাণিজ্য ৩২৩৯ দশমিক ২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ লাভজনক বিদেশি বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি করেছে। ব্রিটিশ বিনিয়োগকারীরা এখানে বিনিয়োগ করলে লাভবান হবেন। সরকারের বিনিয়োগ বান্ধব নীতির কারণে অনেক দেশ বিনিয়োগ করতে এগিয়ে এসেছে। এখন যে কোনও দেশ বাংলাদেশে শতভাগ বিনিয়োগ করতে পারে এবং যে কোনও সময় লাভসহ মূলধন ফিরিয়ে নিতে পারে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সরকার আইন করে সংরক্ষণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ১০০টি স্পেশাল ইকোনমিক জোনে ব্রিটিশ বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করতে পারেন।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাণিজ্য দূত রুশনারা আলী এমপি বলেন, রোহিঙ্গা মুসলিমদের নির্যাতন, হত্যা ও দেশত্যাগে বাধ্য করায় যুক্তরাজ্য সরকার, পার্লামেন্ট ও ব্রিটিশ জনগণ নিন্দা ও উদ্বেগ জানিয়েছে। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও খাবার দিয়ে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করছে। এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের পাশে থাকবে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে দরিদ্র বিমোচন, মা ও শিশুর মৃত্যুহার কমাতে সক্ষম হয়েছে। দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির মাধ্যমে উভয় দেশ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে।

তিনি বলেন, ব্রিটিশ রেলওয়ে কোম্পানি বাংলাদেশের রেল যোগাযোগ উন্নয়নে কাজ করতে আগ্রহী। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২০ বছর আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশের মধ্যে ব্যবধান অনেক। বাংলাদেশ বরাবরই একটি সম্ভাবনাময় দেশ। শিক্ষা, অবকাঠামোসহ সব সেক্টরেই দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। এ দেশের উন্নয়নে যুক্তরাজ্য আন্তরিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। বাংলাদেশ থেকে কার্গো উড়োজাহাজ চলাচল আবার চালু হবে। এ বিষয়ে ব্রিটিশ সরকার কাজ করছে, এখানকার বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে ব্রিটিশ কোম্পানি কাজ করছে।  অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে, অল্প সময়ের মধ্যে পণ্যবাহী জাহাজ আবার চলাচল শুরু করবে।

বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব শুভাশীষ বসু, ব্রিটিশ হাইকমিশনার মিজ আলিসন ব্ল্যাক, ব্রিটিশ হাই কমিশনের ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডের ডিরেক্টর মিজ রোজিনা হাসান, ডেপুটি ডিরেক্টর সুরাইয়া জাহানসহ বাংলাদেশে সফররত ব্রিটিশ বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।