জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে দক্ষতা উন্নয়নের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে সরকার। দেশের সূর্যসন্তান হিসেবে পরিচিত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতাসহ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় থাকা সব ধরনের ভাতার পরিমাণ বাড়ানো হতে পারে। একইসঙ্গে সরকার মানবসম্পদ উন্নয়নে নানা ধরনের পরিকল্পনা নেওয়ার কথাও ভাবছে। কৃষি, পল্লী উন্নয়ন ও কর্মসৃজনের পাশাপাশি দেশের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারের বরাদ্দ উল্লেখযোগ্যহারে বাড়ানো হতে পারে। এ ক্ষেত্রে রেলপথ উন্নয়ন, বন্দর উন্নয়ন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও সড়কখাত অগ্রাধিকার পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। বরাদ্দের ক্ষেত্রে এ খাতগুলো অগ্রাধিকার পাবে। একই তালিকায় থাকবে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সক্ষমতা অর্জন, সরকারি সেবাদানে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আগেই জানিয়েছেন, আগামী বছরের বাজেটের আকার ৫ লাখ কোটি টাকার নিচে থাকবে। সে বিষয়টি বিবেচনায় রেখে নতুন বাজেটের পরিমাণ বাড়ানো হবে চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটের তুলনায় প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। সেটি যদি ঠিক থাকে, তাহলে সেই বাজেটের আকার হতে পারে ৪ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
নতুন বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) সম্ভাব্য বরাদ্দ ধরা হতে পারে এক লাখ ৭৮ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এডিপিতে বরাদ্দ আছে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার ভোটাররা যেন চাপের মুখে না পড়েন, সেদিকটি বিবেচনায় রেখেই বাজেট প্রণয়ন করা হবে। এ কারণেই আগামী বাজেটে অপ্রয়োজনীয় শুল্ক ও কর বাদ দেওয়া হতে পারে। আয়কর পরিশোধের ক্ষেত্রে হয়রানি কমাতে ই-পেমেন্ট ও ই-ফিলিং চালু করার ঘোষণা থাকতে পারে। রাজস্ব আদায় বাড়াতে বিটিআরসির আইন সংশোধন করা হতে পারে। রাজস্ব ব্যয়ের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ১৩ ডিজিটের পরিবর্তে ৩৭ ডিজিটের বাজেট ও অ্যাকাউন্টিং ক্ল্যাসিফিকেশন পদ্ধতি চালু করা হতে পারে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সুবিধাভোগীদের ভাতা জিটুপি (গভর্মেন্ট টু পাবলিক) পদ্ধতিতে সরাসরি প্রদান পদ্ধতি চালুর উদ্যোগ থাকতে পারে এবারের বাজেট ঘোষণায়। পেনশন ডাটাবেজ প্রণয়ন, ই-চালান ব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে সরকারের অর্থ অপচয় রোধ এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনা গতিশীল করার সিদ্ধান্ত থাকবে এবারের বাজেটে। আসন্ন বাজেটে ভর্তুকির পরিমাণ বাড়ানো হতে পারে। মোট জিডিপির ১ দশমিক ১ শতাংশ বরাদ্দ থাকতে পারে ভর্তুকি ও প্রণোদনা খাতে। এই ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে খাদ্য ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪ হাজার ৫৪৬ কোটি টাকা।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়-সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকারের সকল উন্নয়ন দৃশ্যমান করার পরিকল্পনা নিয়েছে। এ সব উন্নয়ন দেখিয়ে জনসাধারণকে খুশি করার চেষ্টা থাকবে। সরকারের অগ্রাধিকার পাওয়া বৃহৎ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে বিশেষ করে পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, রামপাল থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট, পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মেট্রোরেল লাইন, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র, চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে ঘুনধুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ, সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ ও পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পগুকে অগ্রাধিকার দিয়ে বরাদ্দ বাড়ানো হবে। চলতি বছর এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৩৩ হাজার ১৮২ কোটি টাকা।
এ বছর বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা কম হওয়ায় আগামী বছর দেশের অভ্যন্তরীণ মূল্যস্ফীতি নিয়ে ভাবনা কম থাকবে।
জানা গেছে, আগামী বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ধরা হতে পারে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতির হার ধরা হতে পারে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। আগামী বছর মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ধরা হতে পারে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৭৭০ কোটি টাকা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে অবশ্যই আগামী বাজেটে বেশ কিছু নতুন দিক থাকবে। এটাই স্বাভাবিক। জনসাধারণের আগ্রহের বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই প্রণীত হবে আগামী বাজেট। জনগণ সম্পৃক্ত কর্মসূচিগুলোয় বরাদ্দ বাড়বে। তাদের জন্য নতুন কোনও কর্মসূচিও চালূ করা হতে পারে। সরকারের উন্নয়ন সফলতা তুলে ধরে আগামী বাজেটে বড় কোনও প্রকল্প গ্রহণ করা হবে না। তবে সরকারের অগ্রাধিকার পাওয়া প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে বরাদ্দ বাড়িয়ে নতুন দিক নির্দেশনা থাকতে পারে। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কারণ জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা বিবেচনায় রেখেই আওয়ামী লীগ রাজনীতি করে। কাজেই তাদের সন্তুষ্টিই বড় কথা।
নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারের আগামী বাজেট কেমন হবে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার বাজেটে সব ধরনের বরাদ্দ বাড়ানোর উদ্যোগ নেবে। মোট কথা সরকার জনগণকে খুশি করার বাজেট দেবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে ওই বাজেট বাস্তবায়ন হবে বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ তখন সবাই ব্যস্ত থাকবেন নির্বাচন নিয়ে।’
উল্লেখ্য, আগামী অর্থবছর দেশের জিডিপির আকার টাকার অঙ্কে দাঁড়াবে ২৫ লাখ ৪৭ হাজার ১০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে জিডিপির আকার ২২ লাখ ২৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।