এনবিআরে ‘হালখাতা’

‘হালখাতা’ বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্য। গ্রাম-বাংলার এই ঐতিহ্যকেই ধারণ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ‘সমৃদ্ধ রাজস্ব সংস্কৃতির বিকাশ’-স্লোগানে দ্বিতীয়বারের মতো সারাদেশে আয়কর ও ভ্যাট অফিসে আয়োজন করেছে ‘রাজস্ব হালখাতা ও বৈশাখ উৎসব’। করদাতারাও এতে অভূতপূর্ব সাড়া দিয়েছেন। বৈশাখের দ্বিতীয় দিনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সব অফিসকে সাজানো হয়েছে নানা সাজে। ঢাকার কর অঞ্চলগুলোর পাশাপাশি সারা দেশের কর, ভ্যাট ও কাস্টমস অফিসগুলোতে রবিবার (১৫ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত হয় ‘রাজস্ব হালখাতা’।

রাজস্ব হালখাতা ও বৈশাখ উৎসবের উদ্বোধনএনবিআরের কয়েকটি কর অঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, হালখাতায় যোগ দিতে করদাতারা এসে বকেয়া পরিশোধ করেছেন, অনেকে আবার আগেই কর পরিশোধ করে এসেছেন হালখাতার মিষ্টি খেতে। এনবিআরের নিমন্ত্রণে হালখাতায় যোগ দিয়েছেন বড় শিল্প উদ্যোক্তারাও।

গত বছর থেকে এনবিআর শুরু করে এই হালখাতার সংস্কৃতি। এই আয়োজনে এনবিআরের ভবনগুলো সাজানো হয়েছে গ্রামীণ উপকরণে। রাজস্ব হালখাতা ও বৈশাখ উৎসব উপলক্ষে গ্রাম-বাংলার ঐহিত্য মাটির হাঁড়ি, পাতিল, কলা গাছ, কুলো, হাতপাখা, মুখোশ, খড়ের গেট আর রঙ-বেরঙে সাজানো হয় কর অঞ্চল, ভ্যাট কমিশনারেট ও ভ্যাট অফিস। এছাড়া বৃহৎ করদাতা ইউনিট (আয়কর ও মূসক) নতুন রূপে সাজানো হয়েছে। খোলা হয় হালখাতার ঐহিত্যবাহী নতুন রেজিস্ট্রার খাতা।

আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরএছাড়া মাটির সানকিতে দেওয়া হয়েছে মিষ্টি, বাতাসা, নারিকেলের নাড়ু, সন্দেশ, খৈ, কদমা, মুরালি, নিমকি, মুড়ির মোয়া, চিড়ার মোয়া, তিলের খাজা, সুন্দরী পাকন পিঠা, শাহী পাকন পিঠা, নকশি পিঠা, ঝিনুক পিঠা, রসগোল্লা, দই, ডাবের পানি, তরমুজ, পেয়ারা, বরইসহ অন্যান্য ফল। আয়োজন করা হয় জমকালো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রতিটি কর অঞ্চল ও ভ্যাট অফিসে করদাতারা উৎসবমুখর পরিবেশে রাজস্ব পরিশোধ করেন। বকেয়া কর প্রদানের পর করদাতাদের উপহার হিসেবে বই দেওয়া হয়।

এদিকে করদাতাকে হয়রানি না করতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। রবিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচার কর অঞ্চল-৮ এর সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত রাজস্ব হালখাতা ও বৈশাখ উৎসবের উদ্বোধনকালে তিনি এই নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, ‘বাংলা নববর্ষে পহেলা বৈশাখ ও হালখাতার আয়োজন আমাদের গর্বিত ঐতিহ্য। চিরায়ত বাংলার লোকজ সংস্কৃতির অন্যতম অনুষঙ্গ হালখাতা। এ হালখাতা সংস্কৃতিকে চালু রাখা ও তা রাজস্ব আহরণের কাজে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে করদাতা ও কর অফিসসমূহের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ ও সুসম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে। ব্যবসা, বিনিয়োগ ও রাজস্ববান্ধব সংস্কৃতি তৈরি হবে।’

আলোচনা সভায় অতিথিরা‘রাজস্ব হালখাতা’ এনবিআর ও করদাতাদের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন তৈরি করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ হালখাতার মাধ্যমে আমরা প্রকৃত করদাতাদের সম্মান করবো, যারা স্বেচ্ছায় কর প্রদান করছেন। সঠিকভাবে আয়কর দিলে ব্যবসার ক্ষতি হয় না বরং ব্যবসা বাড়ে।’

এদিন কর অঞ্চল-৪ এর রাজস্ব হালখাতা ও বৈশাখ উৎসবের উদ্বোধন করেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক। পরে চেয়ারম্যান পর্যায়ক্রমে কর অঞ্চল-৩, ৫, ৬ ও ১২ পরিদর্শন, করদাতাদের সঙ্গে মতবিনিময়, বকেয়া রাজস্ব গ্রহণ করেন। দুপুরে চেয়ারম্যান কর অঞ্চল-১২ এর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সেখানে কর দেওয়া দেশের বিখ্যাত শিল্পীদের মিলনমেলা বসে।

প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক বলেন, ‘আয়কর নিয়ে মনের মধ্যে যে একটা ভয়-ভীতি ছিল কিন্তু কর পরিশোধ করতে এসে দেখছি যতটা ভয় পেয়েছিলাম ততটা ভয় নয়। কর দেওয়া অনেক সহজ ব্যাপার।’

প্রসঙ্গত, গতবছর রাজস্ব হালখাতায় ৫৬৬ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছিল।