টেংরাগিরি বনে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগে টিআইবি’র উদ্বেগ





ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়াই বরগুনার টেংরাগিরি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের কাছে কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পরিবেশ ও প্রতিবেশের জন্য ব্যাপক ঝুঁকিপূর্ণ এ উদ্যোগ নেওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একইসঙ্গে আত্মঘাতী এ উদ্যোগ বাতিলের আহ্বান জানিয়েছে তারা।
সোমবার (৭ মে) এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এ উদ্বেগের কথা জানান।
বিবৃতিতে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়া দেশের ‘দ্বিতীয় সুন্দরবন’ হিসেবে পরিচিত সংরক্ষিত টেংরাগিরি বন থেকে এক কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে ৩০৭ মেগাওয়াটের কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান আইসোটেক ও বিদেশি দুটি প্রতিষ্ঠান। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এরই মধ্যে ২৫ বছর মেয়াদি পাওয়ার পারচেজ এগ্রিমেন্ট (পিপিএ) করেছে। অথচ ‘পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৭’-এর ৭(৪) ধারা অনুযায়ী, ‘লাল শ্রেণিভুক্ত যেকোনও শিল্প স্থাপনে পূর্ণ পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা (ইআইএ) সাপেক্ষে পরিবেশ অধিদফতরের পরিবেশ ছাড়পত্র নেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা ছাড়াই এই কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, পরিবেশ আইন অনুযায়ী, সংরক্ষিত বনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে যেকোনও ধরনের শিল্পকারখানা স্থাপন নিষিদ্ধ।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, এ ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে পরিবেশ ও প্রতিবেশ সংরক্ষণ সংক্রান্ত সাংবিধানিক ও আইনি বাধ্যবাধকতাকে সুস্পষ্টভাবে লঙ্ঘন করা হয়েছে। নিরপেক্ষ, স্বাধীন ও সুখ্যাতিসম্পন্ন বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠান দিয়ে যথাযথভাবে পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা (ইআইএ) না করে বিদ্যুতের চাহিদা মেটানোর নামে এসব কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে সীমিত বনাঞ্চলকে আরও ধ্বংসের ঝুঁকিতে ফেলে এরই মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা বাংলাদেশের উপকূলীয় জনগণের জীবন-জীবিকাসহ জীববৈচিত্র্যকে আরও ঝুঁকিতে কেন ফেলা হচ্ছে, তা বোধগম্য নয়।
২০১০ সালের অক্টোবরে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় টেংরাগিরি বনাঞ্চলকে বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করে। প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা টেংরাগিরি বনাঞ্চল আগে সুন্দরবনের অংশ ছিল। ১৯৬০ সালে টেংরাগিরি বা ফাতরার বনকে সংরক্ষিত বনাঞ্চল হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। গেওয়া, জাম, ধুন্দুল, কেওড়া, সুন্দরী, বাইন, করমচা, গরান প্রভৃতি গাছ ছাড়াও এ বনে বসত গড়েছে কাঠবিড়ালি, বানরসহ ৪০ প্রজাতির প্রাণী।