নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ২০ ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদনের নতুন লক্ষ্য

সৌর বিদ্যুৎ প্যানেলনবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ২০ ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদনের নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার। এর আগে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মহাপরিকল্পনায় নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে ১০ ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাত্রা ঠিক করে দেওয়া হয়েছিল। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৮-১৯ সালের প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারের নতুন এই লক্ষ্য নির্ধারণের ঘোষণা দেন।

বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, সরকার সৌরবিদ্যুতের সঙ্গে বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এরমধ্যে দেশের একটি পূর্ণাঙ্গ উইন্ড ম্যাপিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। আগামী বাজেটে মহেশখালী এলাকায় বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনের সমীক্ষার জন্য নির্দিষ্ট প্রকল্পও অনুমোদন করা হয়েছে।

সরকারের নতুন এই লক্ষ্য নির্ধারণ বিষয়ে বাজেটে বিস্তারিত বিবরণ নেই। তবে বিদ্যুৎ বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রাথমিক ব্যয় বেশি হলেও জ্বালানি খরচ শূন্য। এক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদে ভালো সুফল পাওয়া যায়। সম্প্রতি সরকার যে উইন্ড ম্যাপং এর ফলাফল প্রকাশ করেছে, তাতে বাংলাদেশের বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদনের উপযোগী মনে করা হচ্ছে। উন্নত বিশ্ব জ্বালানি খরচ কমাতে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছে। তবে বাংলাদেশ এখনও এসব ক্ষেত্রে বেশ পিছিয়ে রয়েছে।’

এর আগের পরিকল্পনায় ১০ ভাগ বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে আসার কথা থাকলেও ওই লক্ষ্যপূরণে এখনও অগ্রসর হতে পারেনি বিদ্যুৎ বিভাগ। সরকারি-বেসরকারি কোনও প্রতিষ্ঠানই বড় কোনও সোলার পার্কের কাজ শুরুই করতে পারেনি।

তবে উইন্ড ম্যাপিংয়ের কারণে আশার আলো দেখছে বিদ্যুৎ বিভাগ। বলা হচ্ছে, বায়ুশক্তি ব্যবহার করে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে অন্তত ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। এর আগে দেশের ৯টি স্থানের ২৪ থেকে ৪৩ মাসের বায়ুপ্রবাহের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। ওই তথ্য পর্যবেক্ষণ করে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল রিনিউয়েবেল এনার্জি ল্যাবরেটরি (এনআরইএল) এই ফলাফল দাঁড় করিয়েছে।

গত সপ্তাহে এনআরইএল তাদের পর্যবেক্ষণে জানায়, বাংলাদেশের ৯টি এলাকার বাতাসের গড় গতিবেগ ৫ থেকে ৬ মিটার/ সেকেন্ড। বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য যাকে আদর্শ বলছে মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি। ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সংগ্রহ করা বায়ু প্রবাহের তথ্য পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত ফলাফল জানানোর দায়িত্ব ছিল এনআরইএল এর ওপর। সরকারের উইন্ড ম্যাপিং প্রকল্পের মেয়াদ আগামী জুনে শেষ হচ্ছে।

অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তব্যে বলেন, ‘আমাদের সাফল্য হচ্ছে বিপুলসংখ্যক সোলার হোম সিস্টেম স্থাপন। এছাড়া, সৌরবিদ্যুৎকে জাতীয় গ্রিডে যোগ করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি করা সম্ভব।’ বাসাবাড়ি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাদে সৌর প্যানেল স্থাপন করার সরকারি উদ্যোগের কথা জানান তিনি।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘একটা জিনিস আপনারা সবাই জানবেন যে, এনার্জি যদি পর্যাপ্ত থাকে তাহলে শিল্পের উন্নয়ন হয় এবং যেকোনও ধরনের সার্ভিস বাড়ে। ফলে কিছু না কিছু কাজ করা যায়। তাই এনার্জি খাত আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত।’

অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা আগে তেল, গ্যাস ক্ষেত্রে খুব দুর্বল ছিলাম, এখন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে অনেকগুলো প্রকল্প আছে। এনার্জি ও বিদ্যুৎ খাতে আমরা ২৪ হাজার ৯২১ কোটি টাকা দিচ্ছি।’