বিদেশি মুদ্রা জমা রাখলেই এখন থেকে দেশের ব্যাংক থেকে টাকায় ঋণ নেওয়ার সুযোগ মিলবে। বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন নির্দেশনায় ব্যাংকগুলোকে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটে (ওবিইউ) সংরক্ষিত বৈদেশিক মুদ্রা জামানত হিসেবে রেখে টাকায় স্বল্পমেয়াদি ঋণ প্রদানের অনুমতি দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত অনুমোদন দিয়ে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রবাসী বাংলাদেশি, বিদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান, বিদেশে নিবন্ধিত কোম্পানি এবং বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিদেশি নাগরিকরা তাদের ওবিইউ অ্যাকাউন্টে জমা রাখা বৈদেশিক মুদ্রা জামানত হিসেবে ব্যবহার করে দেশের ব্যাংক থেকে স্বল্পমেয়াদি চলতি মূলধনের টাকায় ঋণ নিতে পারবেন।
এছাড়া দেশে অবস্থানরত কোম্পানি ও ব্যক্তি— যারা অনিবাসি হিসাবধারীর সঙ্গে আর্থিক বা ব্যবসায়িকভাবে যুক্ত তাদের ক্ষেত্রেও এই সুবিধা প্রযোজ্য হবে। তবে এক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতা ও বৈদেশিক মুদ্রা হিসাবধারীর মধ্যে যৌক্তিক ও বাস্তব সম্পর্ক রয়েছে কি না, তা নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে।
শর্তসাপেক্ষে ঋণ সুবিধা
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, এসব ঋণ হবে কেবল স্বল্পমেয়াদি এবং চলতি মূলধনী চাহিদা মেটানোর জন্য। জামানতের বিপরীতে কোনও চার্জ, ফি বা অতিরিক্ত ব্যয় নেওয়া যাবে না। প্রয়োজন হলে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারের ঝুঁকি মোকাবিলায় ব্যাংক মার্জিন হিসেবেও জামানতের একটি অংশ সংরক্ষণ করতে পারবে। ঋণগ্রহীতা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে নির্ধারিত পদ্ধতিতে বৈদেশিক মুদ্রা নগদায়ন করে ঋণ সমন্বয় করা যাবে।
ওবিইউ ছাড়াও প্রাইভেট ফরেন কারেন্সি অ্যাকাউন্ট (PFCA) ও নন-রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট (NRFCD) অ্যাকাউন্টে জমা বৈদেশিক মুদ্রাও একইভাবে জামানত হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ থাকবে। তবে আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের (IBA) অর্থ এই সুবিধার আওতায় পড়বে না।
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আশাবাদ
নতুন এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশে পরিচালিত বিদেশি মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো। তাদের মতে, অনেক সময় স্থানীয়ভাবে জামানত সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়ে। এখন বিদেশি বিনিয়োগকারী ও শেয়ারহোল্ডারদের রাখা বৈদেশিক মুদ্রা জামানত হিসেবে ব্যবহারের সুযোগে ঋণ পাওয়া সহজ হবে, যা বিনিয়োগে গতি আনবে এবং দেশে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (FDI) বাড়াতে সহায়তা করবে।
পটভূমি
ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট ও বিনিয়োগে গতি আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি ধারাবাহিকভাবে বেশ কিছু নীতিগত পরিবর্তন আনছে। এ সিদ্ধান্ত তারই অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ ও বৈদেশিক মুদ্রার তারল্য সংকট মোকাবিলায় এ ধরনের পদক্ষেপ বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।