গুল-জর্দার খুচরা মূল্যের ওপর করারোপ না করায় লাভবান হবে তামাক কোম্পানি: প্রজ্ঞা



প্রজ্ঞাশেষ পর্যন্ত ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবসা সম্প্রসারণের অভাবনীয় সুযোগ দিয়ে অনুমোদন করা হয়েছে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট। প্রস্তাবিত বাজেটে ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যে কর আরোপের ক্ষেত্রে প্রচলিত এক্স-ফ্যাক্টরি প্রাইস প্রথা বাতিল করে খুচরা মূল্যের ওপর কর আরোপের প্রস্তাব করা হলেও চূড়ান্ত বাজেটে সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ফলে এই খাত থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। আর তামাক কোম্পানিগুলোর আয় বাড়বে দ্বিগুণেরও বেশি। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রগতির জন্য জ্ঞানের (প্রজ্ঞা) এক পর্যালোচনায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জুবায়ের স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রজ্ঞার পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত বাজেটে প্রতি ১০ গ্রাম জর্দা ও গুলের খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ৬৫শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। এরফলে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের তুলনায় এ খাত থেকে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পেত ১৬৮ শতাংশ। অথচ চূড়ান্ত বাজেটে খুচরা মূল্যের ওপর কর আরোপের আধুনিক ও সহজতম পদ্ধতি থেকে সরে এসে প্রতি ১০ গ্রাম জর্দা ও গুলের জন্য যথাক্রমে ১২ টাকা এবং ৬ টাকা ট্যারিফ ভ্যালু নির্ধারণ করে এর ওপর ১০০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এর ফলে, ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি প্রস্তাবিত বাজেটের তুলনায় প্রায় ৫৪ শতাংশ কমবে। একই পরিমাণ তামাক বিক্রি করে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ১১৮ শতাংশ বেশি আয় করবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী, ২৫ টাকা খুচরা মূল্যে ১০ গ্রাম জর্দা বিক্রি করে উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো পেতো ৫ টাকা ২৪ পয়সা। অথচ চূড়ান্ত বাজেট অনুযায়ী, একই পরিমাণ জর্দা বিক্রি করে কোম্পানিগুলো এখন পাবে ১২ টাকা। এই আয়বৃদ্ধি দ্বিগুণেরও বেশি।
পর্যালোচনায় প্রজ্ঞা আরও বলেছে, নিজেদের এই অস্বাভাবিক আয়বৃদ্ধির হার কিছুটা কমিয়ে হলেও তামাক কোম্পানিগুলো সস্তায় ভোক্তাদের হাতে তামাকপণ্য তুলে দিতে মরিয়া হবে। কারণ, চূড়ান্ত বাজেটে সর্বনিম্ন খুচরা বিক্রয়মূল্য শর্ত প্রত্যাহার করায় তামাক কোম্পানিগুলো তাদের সুবিধা অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণ করতে পারবে। ফলে বাজারে জর্দা ও গুলের খুচরা মূল্য প্রত্যাশিত হারে নাও বাড়তে পারে। এতে ভোক্তা-পর্যায়ে জর্দা ও গুলের ব্যবহার প্রত্যাশিত হারে কমবে না। তাই জনস্বাস্থ্য কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় সুরক্ষা পাবে না। এভাবেই ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চূড়ান্ত বাজেটে জনস্বাস্থ্য উপেক্ষা করে তামাকপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে লাভবান করা হয়েছে।
বাজেট পর্যালোচনায় প্রজ্ঞা আরও বলেছে, এসব পণ্যের ক্ষেত্রে রাজস্ব আদায় ব্যবস্থা খুবই দুর্বল। দেশে এখনও অসংখ্য রেজিস্ট্রেশনবিহীন জর্দা ও গুল কারখানা থাকায় ওসব কারখানা থেকে কর সংগ্রহ করা কঠিন। সুতরাং জর্দা ও গুলের ওপর প্রযোজ্য কর আহরণের ক্ষেত্রেও সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি। এক্ষেত্রে কর আরোপে ট্যারিফ ভ্যালু পদ্ধতির পরিবর্তে বিড়ি সিগারেটের মতো খুচরা মূল্যের ওপর কর নির্ধারণ হবে সবচেয়ে কার্যকর উপায়। বাংলাদেশের বিশাল জনগোষ্ঠীকে জর্দা-গুল ব্যবহারের স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে রক্ষার ক্ষেত্রে এবং ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জন করতে তামাক কোম্পানিগুলোকে ব্যবসা সম্প্রসারণের সুযোগ দেওয়া থেকে দেশের নীতিনির্ধারকদের সরে আসতে হবে বলেও মনে করে প্রজ্ঞা।