সিস্টেম লসকে বৈধতা দিতেই মিটার পদ্ধতিকে দুষছে তিতাস!

পাঁচ বিচারপতি মনে করেন দুই মন্ত্রী শপথ ভঙ্গ করেছেন, তিনজনের নাসিস্টেম লসকে বৈধতা দিতে গ্যাস কেনার সময় মিটারিং পদ্ধতির ত্রুটির দোহাই দিচ্ছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। অন্য পাঁচ গ্যাস বিতরণ কোম্পানি তাদের কোনও সিস্টেম লস না দেখালেও তিতাস প্রতিবছরই সিস্টেম লসের হিসাব দিয়ে যাচ্ছে। আর এর মধ্যে শুভঙ্করের ফাঁকি দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

এই প্রসঙ্গে তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মীর মশিউর রহমান নিজের কোম্পানির সিস্টেম লস নিয়ে যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তার শুরুতেই গ্যাসের পরিমাপের বিষয়ে গলদের কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সচিবের কাছে যে চিঠি ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিয়েছেন, তাতে বলা হয়েছে, ‘গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি (জিটিসিএল) থেকে কোম্পানিতে গ্যাস সরবরাহের কার্যকর মিটারিং ব্যবস্থা না থাকায় সরবরাহ করা গ্যাসের সঠিক পরিমাণ নিরূপিত হয় না।’

সব থেকে বেশি গ্যাস বিতরণ কোম্পানি কেন তাদের গ্যাস পরিমাপের ক্ষেত্রে সঠিক মিটারিং ব্যবস্থা অনুসরণ করে না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, তিতাস এলাকায় প্রচুর অবৈধ গ্যাস পাইপলাইন রয়েছে। কোম্পানির এক শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে ঠিকাদাররা মিলে অবৈধ এই গ্যাসবাণিজ্য করেন। বিভিন্ন সময় তিতাসই এমন পাইপলাইন অপসারণ করার খবর দেয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গৃহস্থালিতে একজন গ্রাহক যে পরিমাণ গ্যাস ব্যবহার করার কথা, সেই পরিমাণ গ্যাসের বড়জোর ২০ থেকে ২৫ শতাংশ ব্যবহার করে। বাকি ৮০ শতাংশই সাশ্রয় হয়ে থাকে। অন্য বিতরণ কোম্পানি এই সাশ্রয় বিবেচনা করেই নিজেদের সিস্টেম গেইন দেখায়। কিন্তু এক্ষেত্রে তিতাস গৃহস্থালির গ্যাসের সাশ্রয় তো দূরের কথা, সিস্টেম লসের বৃত্তই ভাঙতে পারছে না।

তিতাস সূত্র জানায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এক দশমিক ২৬ ভাগ সিস্টেম লস হয়েছে তারে। তিতাস বলছে, গত অর্থবছরে তিতাস জিটিসিএল-এর কাছ থেকে ১৭ হাজার ২৩৬ শমিক ৮৩ ঘনমিটার গ্যাস সরবরাহ পেয়েছে। অন্যদিকে বিক্রি দেখিয়েছে ১৭ হাজার ১৮ শমিক ৯৯ ঘনমিটার। ক্রয় ও বিক্রির মধ্যে পার্থক্য ছিল ২১৭ দশমিক ৮৪ মিলিয়ন ঘনমিটার (এমএমসিএম)। যা সিস্টেম লস বলে জানিয়েছে তিতাস। এর আগের বছর (২০১৫-১৬) দুই দশমিক ৭১ ভাগ। এর আগে  ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৩ দশমিক ৯৪ ভাগ সিস্টেম লস দেখিয়েছে। মোট গ্যাস বিতরণের মধ্যে তিতাস এককভাবে ৫৭ শমিক ২৬ ভাগ গ্যাস বিতরণ করছে।  

ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিজেই তার চিঠিতে উল্লেখ করছেন, ‘অন্য বিতরণ কোম্পানিতে কার্যকর মিটারিং সিস্টেম ব্যবস্থা আছে।’ কিন্তু তিতাসে তা নেই। সিস্টেম লসের কিছু কারিগরি ত্রুটির কথা বললেও চিঠির শেষ প্রান্তে অবৈধ ব্যবহারের কথাও বলা হয়েছে। সিস্টেম লসের চতুর্থ কারণ হিসেবে অসাধু গ্রাহকের অবৈধ বিতরণ লাইন, মিটার টেম্পারিং, মিটার বাইপাস, চুরি করে কমচাপের বদলে বেশি চাপ ব্যবহার করাকেও দায়ী করা হয়েছে।

এ বিষয়ে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়শন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা শামসুল আলম বলেন, ‘অন্য সব গ্যাস বিতরণ কোম্পানির গ্যাসের মিটারিং সিস্টেম আছে।তিতাস সবচেয়ে গ্যাস বিতরণ কোম্পানি। তাদের মিটারিং সিস্টেম আরো ভালো হওয়ার কথা ছিল। তারাই যদি বলে যে, তাদের মিটারিং সিস্টেমে সমস্যা, তা হলে চলবে কীভাবে?’ তিনি বলেন, ‘তাদের পুরো প্রতিষ্ঠানের ‍বিরুদ্ধেই দুর্নীতির নানা অভিযোগ আছে। ফলে তাদের উচিত মিটারিং সিস্টেম ঠিক করা। মিটারিং সিস্টেমের দোহাই দেওয়া নয়।’