সমাধান মেলেনি, নতুন কর্মসূচি দিচ্ছেন পাটকল শ্রমিকরা

বিজেএমসির সঙ্গে পাটকল শ্রমিক নেতাদের শনিবার সকালের বৈঠকবাংলাদেশ জুট মিল করপোরেশনের (বিজেএমসি) সঙ্গে পাটকল শ্রমিক নেতাদের বৈঠকের পরও কোনও সমাধান মেলেনি। তাই কাল রবিবার (৭ এপ্রিল) তারা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। বকেয়া মজুরি পরিশোধ ও মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ৯ দফা দাবিতে ৭২ ঘণ্টার কর্মসূচি শেষে শনিবার (৬ এপ্রিল) সকালে বৈঠকে বসেছিল ২৬টি পাটকল শ্রমিকদের নেতারা। সাড়ে ৩ ঘণ্টার সেই আলোচনায় কোনও সিদ্ধান্ত না হওয়ায় বিজিএমসির চেয়ারম্যান শাহ্ মোহাম্মদ নাছিম বিকাল ৫টায় ফের বৈঠকের আহ্বান জানান। দেড় ঘণ্টার সেই বৈঠকের পরও কোনও সমাধান না মেলায় শ্রমিক নেতারা উত্তেজিত হয়ে বের হয়ে যান।

প্লাটিনাম জুট মিলের সিবিএ সভাপতি শাহানা শারমিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আলোচনায় কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। চেয়ারম্যান মহোদয় বলেছেন, জুন মাসের আগে মজুরি কমিশন বসাতে পারবেন না। বকেয়া মজুরির বিষয়েও তিনি কোনও সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন না। উনি মন্ত্রণালয়ে আলাপ করবেন, তারপর কবে নাগাদ দিতে পারবেন, তার কোনও নিশ্চয়তা দিতে পারেননি। কোনও সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত ওনার কাছ থেকে আমরা পাইনি। তাই রবিবার সকাল ১০টায় সিবিএ কার্যালয়ে বসে পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করবো।’

ক্রিসেন্ট জুট মিলের সিবিএ সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন বলেন, ‘আমরা আগামীকাল সিবিএ কার্যালয়ে বসবো। বসে আলোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবো।’

এদিকে বৈঠক শেষে বিজেএমসির মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও সার্বিক সেবা)  মো. শামীম রেজা খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আলোচনা এখনও শেষ হয়নি। আলোচনা চলবে। ’

এর আগে ২ এপ্রিল ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘট কর্মসূচি শুরু করে খুলনা অঞ্চলের শ্রমিকরা।  ৯টি জুটমিলের ৩৩ হাজার শ্রমিক মিলগুলোতে উৎপাদন বন্ধ রেখে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করে। যশোরসহ অন্যান্য অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকরাও এই কর্মসূচিতে সামিল হয়।  সড়ক ও রেলপথ অবরোধ, পুলিশ বক্স ও পুলিশের অ্যাম্বুলেন্সে হামলা,  ট্রেনে ভাঙচুর ও পাথরের আঘাতে অর্ধ শতাধিক যাত্রী আহত হওয়ার ঘটনার মধ্য দিয়ে ৫ এপ্রিল সকাল ৬ টায় সরকারি ২৬টি পাটকলের শ্রমিকদের ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘট শেষ হয়। এ ঘটনায় অজ্ঞাত ২০০-২৫০ হামলাকারীকে আসামি করে মামলা করেছে পুলিশ।

শ্রমিকদের দাবির মধ্যে রয়েছে, নিয়মিত সাপ্তাহিক মজুরি ও বেতন প্রদান, সরকার ঘোষিত জাতীয় মজুরি এবং উৎপাদনশীলতা কমিশন-২০১৫ বাস্তবায়ন, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের পিএফ (প্রভিডেন্ড ফান্ড)-গ্র্যাচুইটি ও মৃত শ্রমিকদের বিমার বকেয়া প্রদান, টার্মিনেশন ও বরখাস্ত শ্রমিকদের কাজে পুনর্বহাল, সেটআপ অনুযায়ী শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়োগ ও স্থায়ী করা, পাট মৌসুমে পাট কেনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ, উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মিলগুলোকে পর্যায়ক্রমে বিএমআরই করা। এই দাবিগুলোর বাস্তবায়ন চেয়ে এ বছর দ্বিতীয়বারের মতো আন্দোলন কর্মসূচি পালন করলো পাটকল শ্রমিকরা। প্রথম দফায় বিজেএমসি চেয়ারম্যানের আশ্বাসে তারা ধর্মঘট প্রত্যাহার করলেও দাবি পূরণ না হওয়ায় আবার ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘটে নামেন তারা।

আরও পড়ুন: মোটা ভাত-কাপড়ের নিশ্চয়তা চান পাটকল শ্রমিকরা (ভিডিও)