এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আশা করছি, নির্ধারিত ৫২৫ টাকার কম দরে মাংস বিক্রি হবে। বাড়তি দামের তো প্রশ্নই আসে না। তবে, অসাধু ব্যবসায়ীরা এ সুযোগটি নিলেও নিতে পারে।’
রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছিলাম, রাজধানীর গাবতলী গরুর বাজারের ইজারাদারের স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ করতে। সরকার নির্ধারিত খাজনা ১শ টাকা পরিশোধের মাধ্যমে গরু কিনতে পারলে অবশ্যই ৫২৫ টাকার কম দরে গরুর মাংস বিক্রি করতে পারবো। বর্তমানে গাবতলী বাজারের ইজারাদার গরু প্রতি ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা খাজনা আদায় করছে। বিষয়টি বারবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানালেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। যার ফলে গত তিন বছরে ৩শ টাকা কেজি দরের গরুর মাংস ৬শ টাকা হয়েছে। আমরা গাবতলী গরুর বাজারের খাজনার বিষয়টি উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়রকে অবহিত করে এর সমাধানের জন্য ২০ রোজা পর্যন্ত সময় দিয়েছিলাম। কিন্তু, তারা তাতে কর্ণপাত করেননি। তাই শুক্রবার (৩১ মে) আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলন করে সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত দর প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছিলাম। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ সোমবার (৩ জুন) আমাদের সঙ্গে অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে বৈঠকে বসতে রাজি হয়েছে। আশা করছি, ওই বৈঠকেই গাবতলী বাজারের ইজারাদারের নৈরাজ্য বন্ধের সিদ্ধান্ত হবে। প্রতি গরু ১শ টাকা খাজনার বিনিময়ে ব্যবসায়ীরা কিনতে পারবেন। ফলে গরু প্রতি খাজনা বাবদ ৫ হাজার টাকা করে কমে গেলে খুব সহজেই প্রতি কেজি গরুর মাংস ৫শ টাকা বা আরও কমে বিক্রি করা সহজ হবে।’
খাজনা কমার পরও যদি গরুর মাংসের দাম না কমে এমন প্রশ্নের জবাবে রবিউল ইসলাম বলেন, ‘গাবতলী বাজারে সরকারের ইজারা নীতি অনুসরণ করে গরুর খাজনা নির্ধারিত হলে অবশ্যই ৫শ টাকার কম দরে বিক্রি করতে হবে, যে ব্যবসায়ী করবেন না, তার বিরুদ্ধে সমিতি প্রকাশ্যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে।’
রাজধানীর কাওরান বাজারের গরুর মাংস বিক্রেতা আলতাব হোসেন জানান, যেকোনও জিনিসের দাম বাড়ে চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখে। চাহিদার তুলনায় সাপ্লাই কম থাকলে দাম বাড়বেই, তা কেউ ঠেকাতে পারবে না।
যাত্রাবাড়ী বাজারের মাংস বিক্রেতা মোবারক হোসেন জানান, ঈদের সময় গরুর বাজারে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা। ৪০ হাজার টাকার গরু বিক্রি হয় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকায়। গরু প্রতি দাম এত বাড়লে মাংসের দাম কমবে কীভাবে। এছাড়া শেষ রোজার দিকে শ্রমিকও পাওয়া যায় না। শ্রমিকদের পারিশ্রমিকের সঙ্গে ঈদ বোনাসও দিতে হয়। ফলে সব খরচই পরিশোধ করতে হয় গরুর মাংস বিক্রির টাকার ওপর দিয়ে। তাই মাংসের দাম না বাড়ালে আমরা চলবো কেমনে?
এদিকে রোজায় মনিটরিংয়ের সময়ও অনেক ব্যবসায়ী নির্ধারিত দরে গরুর মাংস বিক্রি করেননি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সিটি করপোরেশনের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্ধারিত ৫২৫ টাকার বেশি দরে বিক্রি করেছেন। এ কারণে জেল জরিমানার সম্মুখীনও হয়েছেন তারা।
এ বি এম আনিসুর রহমান নামের এ ভোক্তা জানান, কঠোর মনিটরিংয়ের পরও সরকার নির্ধারিত ৫২৫ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রি করার সিদ্ধান্ত শতভাগ কার্যকর করা যায়নি। অনেক বিক্রেতাই এ সিদ্ধান্ত মানেননি। মনিটরিং কর্মকর্তাদের চোখ এড়িয়ে ৫৫০-৫৬০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে।
উল্লেখ্য, ৬ মে নগরভবনে মাংস বিক্রেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন গরুর মাংসের মূল্য তালিকা নির্ধারণ করে দেন। প্রতিকেজি গরুর মাংস ৫২৫ টাকা, মহিষের মাংস ৪৮০ টাকা, খাসির মাংস ৭৫০ টাকা ও ভেড়ার মাংস ৬৫০ টাকা রাখার সিদ্ধান্ত হয়। তখন ডিএনসিসি মেয়র জানান, ২৬ রমজান রাত পর্যন্ত এ মূল্য তালিকা অপরিবর্তিত থাকবে।