বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থা আধুনিকায়নে এফজিএমও পদ্ধতি আসছে

বিদ্যুৎ

সারাদেশের উৎপাদিত বিদ্যুৎ সঞ্চালন নিয়ন্ত্রণ করে ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টার (এনএলডিসি)। এই এনএলডিসিকে আধুনিকায়ন করতে নতুন উদ্যোগ নিচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ। নতুন এই পদ্ধতির নাম ফ্রি গর্ভনিং মুড অব অপারেশন (এফজিএমও)। এই সিস্টেমের মাধ্যমে এনএলডিসিকে আধুনিক করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ এবং পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) সূত্র এ তথ্য জানা গেছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এনএলডিসিকে আধুনিকায়ন করার প্রয়াস থাকলেও বাস্তবতা ভিন্ন। অভিযোগ রয়েছে বিদ্যুতের সঞ্চালন এবং বিতরণ ব্যবস্থা দুরাবস্থার কারণে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাচ্ছে না।

বলা হচ্ছে, এফজিএমও বাস্তবায়ন করতে পারলে সঞ্চালন ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটবে। এতে করে এক জায়গাতে অর্থাৎ এনএলডিসিতে বসেই বিদ্যুতের সঞ্চালন নিয়ন্ত্রণ করা যাবে-এখন সব ক্ষেত্রে যা সম্ভব হয় না।

বর্তমানে সঞ্চালন নিয়ন্ত্রণের অনেক কাজই ম্যানুয়ালি অর্থাৎ মানুষের মাধ্যমে করা হয়। এফজিএমও করলে পুরো প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলবে। এফজিএমওতে বিদ্যুৎ সঞ্চালনে একটি নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সি থাকবে। যা হবে ৪৯ থেকে ৫০ দশমিক পাঁচ হার্জের মধ্যে। এনএলডিসি প্রতিদিনের জন্য একটি চাহিদা নির্ধারণ করবে এবং সেই চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনও হবে। প্রতি ১৫ মিনিট অন্তর এই চাহিদা ও উৎপাদনের একটি স্বয়ংক্রিয় পর্যালোচনা হবে। এই পদ্ধতিতে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে করে এক সঙ্গে সারাদেশে বিদ্যুৎ একসঙ্গে চলে যাওয়া বা ব্ল্যাক আউটের মতো ঘটনা ঘটবে না।

জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, সরকার চাইছে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করতে। তাই সঞ্চালন ব্যবস্থা আধুনিকায়নের চিন্তা করা হচ্ছে। এজন্য এফজিএমও বাস্তবায়ন করা হবে। এফজিএমও বাস্তবায়নে একটি অ্যাকশন প্ল্যান করা হবে।

এদিকে পিজিসিবি সূত্র বলছে, সঠিকভাবে ফ্রিকোয়েন্সি না মানার কারণে সঞ্চালন ব্যবস্থা ঝুঁকিতে থাকে। দেশে বিদ্যুৎ বিতরণে সঠিক গ্রিড কোডও মানা হয় না। এসব বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশনা থাকলেও কোনও কোনও ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটছে-যা বন্ধ করার চেষ্টা করা হলেও কোনও কোনও ক্ষেত্রে বন্ধ হচ্ছে না।

পিজিসিবির এক কর্মকর্তা বলেন, এখন দেশে সব মিলিয়ে ২০ হাজার মেগাওয়াটের ওপরে উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু, বিপুল পরিমাণ উৎপাদনেও কেন লোডশেডিং তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গ্রামে লোডশেডিং হচ্ছে নিয়মিত। এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তির জন্য সরকার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। তবে আধুনিক সঞ্চালন ব্যবস্থা না থাকার কথা বারবারই উঠে এসেছে।

আজ এ বিষয়ে রাজধানীর আফতাবনগরে এনএলডিসি কার্যালয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে এনএলডিসিতে এফজিএমও পদ্ধতি বসানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিদ্যুৎ জ্বালানি খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বৈঠকে অংশ নেন। এছাড়াও পিজিসিবি এবং পিডিবির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, সম্প্রতি বাংলাদেশ ভারতে বিদ্যুৎ রফতানির প্রস্তাব দেয়। কিন্তু, ভারতের সঞ্চালন ব্যবস্থা আমাদের থেকে অনেক আধুনিক। তারা ফ্রিকোয়েন্সি সঠিকভাবে মেনে চলার পাশাপাশি গ্রিড কোড মেনে সঞ্চালন করে। কিন্তু, দেশে এসব বিষয়ে ঘাটতি থাকায় আদৌ ভারতে বিদ্যুৎ রফতানি সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আন্তঃসীমান্ত বিদ্যুৎ বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দেশের গ্রিডের উন্নয়ন করা জরুরি বলে মনে করা হচ্ছে।