এখন দেশের চাহিদা রযেছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। বিপরীতে সরবরাহ করা হচ্ছে তিন হাজার ১০০ থেকে তিন হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। তবে, লিকুফায়েড ন্যাচারাল গ্যাস (এলএনজি) আমদানি বাড়লে গ্যাসের সরবরাহও বাড়ানো যেতে পারে। নতুন শিল্প মালিকরা প্রতিনিয়ত গ্যাস সংযোগ পাওয়ার আবেদন করছেন। কিন্তু ভবিষ্যতে শিল্পের জন্য কী পরিমাণ গ্যাসের প্রয়োজন, সে সম্পর্কে স্পষ্ট কোনও ধারণা নেই কারও। ফলে, এখন যে সব শিল্প-সংযোগ দেওয়া হচ্ছে, তা পুরোপুরি অনুমাননির্ভর।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্যাস সংকট মোকাবিলায় এলএনজি আমদানি শুরু করেছে সরকার। যে পরিমাণ এলএনজি আমদানি হচ্ছে, সেটি দিয়েও বর্তমান গ্যাসের সংকট মোকাবিলা করা যাচ্ছে না। অন্যদিকে, এলএনজি আমদানির আগে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বন্ধ করার কথা থাকলেও তা করতে পারছে না তিতাস। একদিন অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নের অভিযান চলছে, অন্যদিকে নতুন নতুন অবৈধ সংযোগের অভিযোগ উঠছে। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া উচিত। না হলে ভবিষ্যতে অবৈধ ব্যবহারের ফলে ভুগতে হবে। যুক্তিসঙ্গত কারণে সরকারের কাছে যদি সব খাতের গ্যাস ব্যবহারের একটি হিসাব থাকে, তাহলেই চুরি ধরা খুব সহজ হয়।
জানতে চাইলে জ্বালানি বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘গড়ে শিল্প খাতে গ্যাসের সরবরাহের একটি হিসাব দেওয়া হলেও বাস্তবে কী পরিমাণ প্রয়োজন, তার হিসাব নেই জ্বালানি বিভাগে। হিসাব নেই, কোনও রকম রেশনিং না করে ২৪ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস দিলে কী পরিমাণ গ্যাসের প্রয়োজন হবে। আবেদনের পরিমাণ কত, তার হিসাবও নেই। এই কারণেই গ্যাসের এই জরিপ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘জোগানের চেয়ে আবেদন বেশি অনুমোদন দিলে পরে সরবরাহ করতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হবে।’
সম্প্রতি জ্বালানি বিভাগে জ্বালানি সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠক সূত্র জানায়, গ্যাসের অবৈধ সংযোগ বন্ধ করতে কিংবা অবৈধ সংযোগের কারণে কী পরিমাণ গ্যাস চুরি হচ্ছে, তার হিসাব করতে হলে এই সমীক্ষার কোনও বিকল্প নেই। সমীক্ষা করলে বোঝা যাবে শিল্পে আসলে কী পরিমাণ গ্যাস প্রয়োজন, কী পরিমাণ চুরি হচ্ছে। আর সঠিকভাবে জরিপ করা গেলে সিস্টেম লসও কমিয়ে আনা সম্ভব বলে করছে জ্বালানি বিভাগ।
জ্বালানি বিভাগের আরেক কর্মকর্তা জানান, এর আগে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টার নেতৃত্বে গঠিত একটি কমিটি শিল্প খাতে গ্যাসের সংযোগ অনুমোদন করে। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে, এই জটিল প্রক্রিয়ার বদলে বিতরণ কোম্পানির পরিচলানা পর্ষদ (কোম্পানি বোর্ড) শিল্পের সংযোগ অনুমোদন করবে। আর এটা করতে হলে চাহিদা ও জোগানের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকতে হবে। এই সমীক্ষায় তা উঠে আসবে বলেও মনে করেন তিনি।