এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২০ সালের প্রথম দিন ১ জানুয়ারি পর্দা উঠবে ২৫তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার (ডিআইটিএফ)। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওইদিন বিকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বর্তমান সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এর আগের দিন ৩১ ডিসেম্বর বিকালে মেলার পুরো আয়োজন সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সাংবাদিকদের বিস্তারিত জানাবেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
এরইমধ্যে ফুড স্টল, সংরক্ষিত সাধারণ স্টল, ফরেন প্যাভিলিয়ান, মিনি প্যাভিলিয়ন, প্রিমিয়ার স্টল লটরির মাধ্যমে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আমন্ত্রিত অতিথিদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। আগামী ২২ ডিসেম্বর থেকে আমন্ত্রণপত্র বিলি করা হবে বলে জানিয়েছেন ইপিবি’র পরিচালক এবং মেলা আয়োজন কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ আব্দুর রউফ।
এপ্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইপিবি’র ভাইস চেয়ারম্যান (ভিসি) ফাতিমা ইয়াসমিন বলেন, ‘মেলার প্রস্তুতি চলছে। বাকি কাজ নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের জন্য সম্মতি দিয়েছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের প্রথম দিন ১ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ২৫তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার (ডিাএফটিআই) উদ্বোধন করা হবে বলে আশা করছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকীকে সামনে রেখে মেলায় বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়নটি নতুন আঙ্গিকে নতুন ডিজাইনে নির্মাণ করা হচ্ছে।’ স্থাপত্য অধিদফতরের নকশায় গণপূর্ত বিভাগ এটি নির্মাণ করছে বলেও জানান তিনি।
ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা ২০২০ -এর সদস্য সচিব আবদুর রউফ বলেন, ‘৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে মেলার মাঠের সব প্রস্তুতি শেষ হবে। ১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে মেলার উদ্বোধন করবেন।’
তিনি জানান, এবারের মেলায় ভিন্ন আঙ্গিক আনার চেষ্টা করা হয়েছে। মেলার প্রধান ফটকেও আসবে পরিবর্তন। এছাড়া মেলার ভেতরে দর্শণার্থীদের জন্য খোলামেলা জায়গা রাখা হবে। মেলায় আসা মানুষেরা যেন পরিবার ও পরিজন নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে ঘোরাঘুরি করতে পারেন। আর মেলার দুই প্রান্তে সুন্দরবনের আদলে ইকো পার্ক করা হবে। থাকবে ডিজিটাল এক্সপেরিয়েন্স সেন্টার (ডিজিটাল টাচ স্ক্রিন প্রযুক্তি), এর মাধ্যমে ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা নির্দিষ্ট স্টল ও প্যাভিলিয়ন সহজেই খুঁজে বের করতে পারবেন।
মেলা চলাকালে কোনও সাপ্তাহিক ছুটি থাকছে না। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। টিকিটের মূল্য ধরা হয়েছে পূর্ণ বয়স্ক ৪০ টাকা এবং অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ২০ টাকা। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ৮টি প্যাভিলিয়ন ও ৬টি মিনি প্যাভিলিয়ন রিজার্ভ রাখা হয়েছে।
আবদুর রউফ বলেন, ‘অতীতের মতো এবারের মেলায়ও স্বাগতিক বাংলাদেশসহ চীন, ব্রিটেন, ভারত,পাকিস্তান,দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, ইরান, তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, ভুটান, নেপাল, মরিশাস, ভিয়েতনাম, মালদ্বীপ, রাশিয়া, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, হংকং, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র তাদের পণ্য বিক্রি ও প্রদর্শনের জন্য অংশ নেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ইপিবি সূত্রে জানা গেছে, এবছর মেলায় দুটি মা ও শিশু কেন্দ্র, শিশুপার্ক, ই-পার্ক, একটি মেডিক্যাল সেন্টার ও ব্যাংকের পর্যাপ্ত এটিএম বুথ থাকবে। পলিমার পণ্য, কসমেটিকস, হারবাল, প্রসাধনী সামগ্রী, খাদ্য ও খাদ্যজাত পণ্য, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিকস সামগ্রী, ইমিটেশন ও জুয়েলারি, নির্মাণ সামগ্রী, ফার্নিচার, রেডিমেড গার্মেন্ট পণ্য, হোমটেক্স, ফেব্রিকস পণ্য, হস্তশিল্প, পাট ও পাটজাত পণ্য, গৃহস্থালি ও উপহার সামগ্রী, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, তৈজসপত্র, সিরামিক, প্লাস্টিক পণ্যের স্টলও থাকবে।
এবছরও বিভিন্ন অব্যবস্থাপনা রোধে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও ভোক্তা অধিদফতরের কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক নজরদারি করবেন। থাকবে পর্যাপ্ত সিসিটিভি ক্যামেরা। একইসঙ্গে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সাদা পোশাকে মেলা প্রাঙ্গণে টহল দেবেন।
জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বাকি কাজ শেষ হবে। অতীতের যেকোনও সময়ের তুলনায় এবছরের বাণিজ্য মেলা দর্শকদের কাছে আকর্ষণীয় করা হবে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী সামনে রেখে মেলায় ‘বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন’ আকর্ষণীয়ভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে। মেলায় আসা দর্শনার্থীদের বসার জন্য পর্যাপ্ত খোলা জায়গা রাখা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মেলায় প্রদর্শিত পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করতে কাজ করবে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। আইনশৃঙ্খলা বিভাগের সদস্যরাও এ কাজের সঙ্গে কোনও না কোনোভাবে যুক্ত থাকবেন। বিভিন্ন অনিয়ম প্রতিরোধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।’
ছবি: সাজ্জাদ হোসেন