খোলা বাজার থেকে এলএনজি কিনতে দুটি স্থায়ী কমিটি

এলএনজি

সাশ্রয়ী দামে খোলা বাজার থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কিনতে দুটি স্থায়ী কমিটি গঠন করতে যাচ্ছে জ্বালানি বিভাগ। সম্প্রতি এলএনজি আমদানিসংক্রান্ত এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দুটি কমিটিই স্থায়ীভাবে গঠন করা হবে। তারা এলএনজি আমদানির জন্য দরপত্র গ্রহণ করবে এবং সরবরাহের জন্য কোম্পানি নির্বাচন করে সরকারের কাছে সুপারিশ করবে।

ওই বৈঠকের কার্যপত্রে দেখা যায়, এলএনজি কার্গো আমদানির লক্ষ্যে দরপ্রস্তাব আহ্বান করবে রূপান্তরিত গ্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি (আরপিজিসিএল)। প্রস্তাবগুলো গ্রহণের জন্য আরপিজিসিএল-এর মহাব্যবস্থাপক মো. রফিকুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা যেতে পারে বলে বৈঠকে প্রস্তাব দেওয়া হয়। কমিটিতে আরপিজিসিএল-এর দুজন উপ-মহাব্যবস্থাপককে রাখা যেতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

কমিটির কাজের পরিধি সম্পর্কে বলা হয়েছে, কমিটি দরপত্র গ্রহণ করে এর তালিকা তৈরি করে গোপনীয়তার সঙ্গে মূল্যায়ন কমিটির কাছে পাঠাবে।

দরপত্র মূল্যায়ন করার জন্য পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মাইনস) এবং এলএনজি সেল প্রধানকে আহ্বায়ক করে আট সদস্যের একটি স্থায়ী কমিটি গঠন করা যেতে পারে বলে আরেকটি প্রস্তাব দেওয়া হয়। এই কমিটিতে জ্বালানি মন্ত্রণালয়, আরপিজিসিএল, পেট্রোবাংলা এবং বুয়েটের প্রতিনিধি রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।

দেশের ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা পূরণের জন্য সরকার এলএনজি আমদানি শুরু করেছে। বর্তমানে কাতার গ্যাস এবং ওমান ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে দুটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির মাধ্যমে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। তবে বছরের বিভিন্ন সময় এলএনজির দাম কমে যায়। এছাড়া বছরের কোনও সময়ে গ্যাসের চাহিদা কমে গেলেও দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি অনুযায়ী এলএনজি না নিলেও মূল্য পরিশোধ করতে হয়। এসব সমস্যার সমাধান করতে এলএনজি আমদানিকারক দেশগুলো প্রয়োজনের কম-বেশি ২৫ ভাগ এলএনজি স্পট মার্কেট থেকে কিনে থাকে। এ বিবেচনায় জ্বালানি বিভাগও দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির পাশাপাশি স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনার সিদ্ধান্ত নেয়।

আরপিজিসিএল-এর একজন কর্মকর্তা বলেন, এলএনজি কোন প্রক্রিয়াতে আমদানি হবে তা এতদিন নির্দিষ্ট করা সম্ভব হয়নি। এতদিন কাতার ও ওমান থেকে যে গ্যাস আমদানি হতো তার বাইরে দরকষাকষির মাধ্যমে সিঙ্গাপুর থেকে স্পট মার্কেটিং করতো আরপিজিসিএল। তবে এলএনজি ক্রয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয়। এজন্য স্বচ্ছতার জন্য একটি নির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আরপিজিসিএল সূত্র জানায়, স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কিনতে ২০১৭ সালে আগ্রহী কোম্পানিগুলোর কাছে আগ্রহপত্র (এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট) আহ্বান করা হয়। এতে মোট ৪৩টি কোম্পানি আগ্রহ দেখায়। এর মধ্যে প্রাথমিকভাবে ২৯টি প্রতিষ্ঠানের সংক্ষিপ্ত তালিকা করে জ্বালানি বিভাগ। কোম্পানিগুলোর সঙ্গে মাস্টার সেল অ্যান্ড পারচেজ এগ্রিমেন্ট (এমএসপিএ বা ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি) করতে খসড়া তৈরি করা হয়।

খসড়া করার পর এমএসপিএ-এর বিষয়ে মতামত চাইলে ২১টি প্রতিষ্ঠান মতামত দেয়। সে অনুযায়ী ২১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ৮টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গত ডিসেম্বরে এমএসপিএ চুক্তি করে পেট্রোবাংলা।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই ৮ প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এলএনজি আমদানির কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়া বাকি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে শিগগিরই এলএনজি আমদানির এমএসপিএ চুক্তি সই করবে পেট্রোবাংলা।