একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ব্যাংকিং লেনদেনের সময় অন্তত দুই ঘণ্টা কমিয়ে আনা দরকার। এছাড়া স্কুল-কলেজ বন্ধের মতোই ব্যাংকিং লেনদেন কিছু দিনের জন্য সীমিত আকারে করার বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি দিকনির্দেশনা থাকা উচিত। যেমনটি করা হয়েছিল চীনে।’
প্রসঙ্গত, চীনে করোনার প্রার্দুভাব বেড়ে যাওয়ায় প্রথম দিকে সেখানকার ব্যাংকগুলোতে সীমিত আকারে লেনদেন হতো। ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বেশ কিছু ব্যাংকের শাখা বন্ধ রাখা হয়।
এ প্রসঙ্গে চায়না বাংলাদেশ বিজনেস ক্লাবের সভাপতি আবদুল মোমেন বলেন, ‘চীনে যখন করোনার প্রকোপ বেড়ে যায়, তখন সেখানকার ব্যাংকগুলো বন্ধ হয়ে যায়। যে কারণে আমরা ওই সময় কোনও এলসি করতে পারিনি। তবে বাংলাদেশে করোনার প্রকোপ বেড়ে গেলে ভয়ঙ্কর বিপদ হবে। কারণ, বাংলাদেশে ব্যাংক বন্ধ হলে ব্যবসা বলতে আর কিছুই থাকবে না। আবার বন্ধ না করলেও বিপদ বাড়তে পারে।’
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম মনে করেন, এখনই ব্যাংক বন্ধ করার মতো বা ব্যাংকিং লেনদেন সীমিত আকারে করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তিনি বলেন, ‘ব্যাংক কর্মকর্তারা নিজ নিজ উদ্যোগে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবেন। কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বাইরে থেকে আসা সেবা গ্রহণকারীদেরও জীবাণুনাশক ব্যবহার করতে হবে।’ তিনি জানান, বুধবার (১৮) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকার বিষয়ে একটি দিকনির্দেশনা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির।
দেশে এরইমধ্যে স্কুল-কলেজসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বেশ কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মকর্তাদের বাসায় থেকে কাজ করার নির্দেশনা জারি করেছে। পর্যটন স্পটগুলোতে লোকসমাগম নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বেসরকারি আরেকটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বলেন, ‘ব্যাংক খাতে খুব বেশি প্রভাব পড়বে না। তবু আমরা কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছি। আমরা যেটা করেছি, সেটা হলো সবার জীবাণুনাশক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা, হাতে গ্লাভস ব্যবহার করা, মুখে মাস্ক ব্যবহার করা।’
ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, তারা অভ্যন্তরীণভাবে কিছু পরিচ্ছন্নতা মেনে চলছেন। অফিসে ডেস্কে বসে কাজ শুরুর আগে চারপাশ ভালোভাবে মুছে নেওয়া; স্যানিটাইজার দিয়ে কি-বোর্ড, কম্পিউটার মাউস, ফোন ও অন্যান্য জিনিস যেগুলোতে আপনি হাত লাগে, সেগুলো সব মুছে নেওয়া; কিছু খাওয়ার আগে অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, দরজার হাতল ধরার পর হাত ধোয়া, বাড়ি যাওয়ার আগেও হাত ধোয়া, হ্যান্ডশেক করা থেকে বিরত থাকার মতো বিষয়ে কর্মীদের অনুপ্রাণিত করা হচ্ছে।
এদিকে ব্যাংক নোট থেকে করোনা ভাইরাস ছড়াতে পারে বলে এরইমধ্যে সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। যদিও বিষয়টি নিয়ে এখনই কোনও উদ্যোগ নেয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।