শর্ত শিথিল হলে চাঙা হবে শেয়ারবাজার!

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ

শেয়ারবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়েছে এবারের বাজেটে। তবে এই কালো টাকা শেয়ারবাজারে আসবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ, কালো টাকায় শেয়ার কিনলে তিন বছর ওই টাকা বের করা যাবে না। অর্থাৎ কেউ শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোনও শেয়ারে অপ্রদর্শিত আয়ের টাকা বিনিয়োগ করতে চাইলে, তা কমপক্ষে তিন বছরের জন্য করতে হবে। তিন বছরের ‘লক ইন’ বা বিক্রয় নিষেধাজ্ঞার শর্তে এ সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে সপ্তাহের শেষ দিন সূচক ও লেনদেন কমেছে দেশের দুই পুঁজিবাজারে। এ নিয়ে সপ্তাহে তিন কার্যদিবসে কমলো সূচক। এর আগে রবি ও সোমবার সূচক কমার পর দুই দিন বেড়েছিল। বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ১ দশমিক ৩২ পয়েন্ট বা দশমিক ০৩ শতাংশ কমে ৩ হাজার ৯৬০ দশমিক ৬ দশমিক ৭৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

ডিএসইতে বৃহস্পতিবার ৬৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা আগের দিন ছিল ৮৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।

এদিকে মন্দা বাজারে কালো টাকার বিনিয়োগের এ সুবিধাকে এরইমধ্যে স্বাগত জানিয়েছে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। তবে তারা তিন বছর বিক্রি করা যাবে না— এ শর্ত তুলে নিয়ে বিনা শর্তে এ সুযোগ চান।

এদিকে  ‘লক ইনের’  শর্ত তুলে দেওয়ার সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের  (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াৎ-উল-ইসলাম। বৃহস্পতিবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সঙ্গে দেখা করে তিনি এই  সুপারিশ করেন।

এর আগে পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত বা কালো টাকা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরোপিত শর্ত তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক মো. রকিবুর রহমান।

এক বিবৃতিতে রকিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের বাস্তবতার সঙ্গে থাকতে হবে। আমি অর্থমন্ত্রীকে বিনীত অনুরোধ করবো, এই অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সময়ে, করোনাভাইরাসের কারণে অপ্রদর্শিত কালো টাকা সাদা করে অর্থনীতির মূলধারায় নিয়ে আসার জন্য আপনি সহজ শর্তে কালো টাকার মালিকদের যে সুযোগ করে দিয়েছেন, সেটা একটা সময়োপোযোগী এবং যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত।’

সপ্তাহ শেষে দেখা গেছে, উভয় পুঁজিবাজারের প্রধান প্রধান সূচক কমেছে। একইসঙ্গে কমেছে টাকার পরিমাণে লেনদেন এবং লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দর। গত সপ্তাহে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বাজার মূলধন ১৭৮ কোটি টাকা কমেছে।

জানা গেছে, বিদায়ী সপ্তাহে ৫ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৩৩৯ কোটি ২৪ লাখ ৫০ হাজার ২৭১ টাকার লেনদেন হয়, যা আগের সপ্তাহ থেকে ১৫ কোটি ৪ লাখ ৩ হাজার ৫২৮ টাকা বা ৪.২৫ শতাংশ কম হয়েছে।

এদিকে বিনিয়োগকারীরা চাচ্ছেন যেভাবেই হোক প্রাণহীন বাজারে গতি আসুক। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, সুযোগ দিলেও শেয়ারবাজারে কালোটাকা আসবে না। যেখানে ব্যাংকে রেখে সাদা করার সুযোগ রয়েছে, সেখানে  কেউ তিন বছরের জন্য এই বাজারে টাকা ফেলে রাখবে না। আর বর্তমান বাজারে তো লেনদেনই সীমিত, বিনিয়োগ আসবে কী করে।

অবশ্য ‘শেয়ারবাজার উজ্জীবিতকরণের’ কথা বাজেট বক্তব্যে বলেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তবে বাজারে তার বাস্তব প্রতিফলন নেই। প্রায় প্রতিদিনই বাজারে দরপতন হচ্ছে। যদিও শেয়ারবাজারের বড় ধরনের পতন ঠেকাতে আগেই বাজারে শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এ কারণে এখন সূচকের বড় ধরনের পতনের সুযোগ নেই।

বাজেটে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, শেয়ারবাজারকে গতিশীল ও উজ্জীবিত করতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ছয়টি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।