শেয়ারবাজারে আবারও সংকট, দুই সপ্তাহে ১৮ হাজার কোটি টাকা হাওয়া!

শেয়ারবাজারে বিভিন্ন কারসাজিতে প্রতি সপ্তাহেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। শুধু তাই নয়, বাজারের প্রতি আস্থার সংকট দেখা দিচ্ছে। ইতোমধ্যে হারিয়ে যেতে শুরু করেছে কষ্টার্জিত মূলধন। জানা গেছে, গত দুই সপ্তাহে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকার মূলধন হারিয়েছে দেশের শেয়ারবাজার।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘পুঁজিবাজারকে প্রভাবিত করছে রাঘববোয়ালরা। দুর্বল তদারকির কারণে আইপিও, লেনদেনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কারসাজি হয়ে থাকে। পুঁজিবাজারকে আকর্ষণীয় করতে সুশাসন জরুরি। সুকুক বন্ড পুঁজিবাজারের জন্য সম্ভাবনাময়। এটি কার্যকরভাবে পরিচালনা করা গেলে বাজারের গভীরতা বাড়বে। তবে তা নির্ভর করছে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ওপর। রোড শো করে বিনিয়োগকারীদের মনে আত্মবিশ্বাস আনা যাবে না।’

এদিকে বড় ধরনের দরপতনের মধ্য দিয়ে গত সপ্তাহ পার করেছে দেশের শেয়ারবাজার। এ কারণে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি নেমে গেছে। সেই সঙ্গে সবক’টি মূল্যসূচক ও লেনদেন কমেছে।

গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসই’র বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩৯ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা, যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৫ লাখ ৫১ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এই সপ্তাহে ডিএসই’র বাজার মূলধন কমেছে ১২ হাজার ৩৩২ কোটি টাকা। আগের সপ্তাহে বাজার মূলধন কমেছিল ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে দুই সপ্তাহে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা মূলধন হারিয়েছে শেয়ারবাজার।

বাজার মূলধন কমে যাওয়ার পাশাপাশি গত সপ্তাহে ডিএসইতে সপ্তাহজুড়ে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৮১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৯৫টির। গত সপ্তাহে ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১৬৫ দশমিক ৫৬ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমেছিল ১১৬ দশমিক ৫৭ পয়েন্ট। সেই হিসাবে দুই সপ্তাহের পতনে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমেছে ২৮২ পয়েন্ট।

প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি গত সপ্তাহে ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত প্রতিষ্ঠান নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ সূচক কমেছে। গত সপ্তাহজুড়ে সূচকটি কমেছে ৩৮ দশমিক ৬৬ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমেছিল ১৩ দশমিক ১৬ পয়েন্ট।

বাছাই করা ভালো প্রতিষ্ঠান নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচকও টানা দুই সপ্তাহ পতনের মধ্যে রয়েছে। গত সপ্তাহজুড়ে এই সূচকটি কমেছে ৭৪ দশমিক ৪৭ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমেছিল ৪৫ দশমিক ৭৩ পয়েন্ট।

গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৭৬২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছিল ৯৩৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ১৭০ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।

গত সপ্তাহে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। চলতি সপ্তাহজুড়ে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪৪০ কোটি ৫১ লাখ ২৮ হাজার টাকা, যা মোট লেনদেনের ১১ দশমিক ৫৫ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ওয়ান ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৫৯ কোটি ৬৫ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। ১১৪ কোটি ৮০ লাখ ১৬ হাজার টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ফরচুন সুজ।

এদিকে গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৩ হাজার ৮১৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় ৩ হাজার ৭৩৩ কোটি ৮ লাখ টাকা। সেই হিসাবে মোট লেনদেন বেড়েছে ৮১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা বা ২৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ। গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহে এক কার্যদিবস কম লেনদেন হওয়ায় মোট লেনদেন বৃদ্ধি পেয়েছে।