রাস্তায় বাড়ছে চামড়ার স্তূপ

রাজধানীর রাস্তায় রাস্তায় বাড়তে শুরু করেছে কোরবানি করা পশুর চামড়ার স্তূপ। রবিবার (১০ জুলাই) সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন মাদ্রাসার শিশুরা মহল্লায় মহল্লায় ঘুরে ঘুরে মাদ্রাসার জন্য এসব চামড়া সংগ্রহ করেছে। দিন শেষে এগুলো বিক্রি হবে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছে। ব্যবসায়ীরা পছন্দ অনুযায়ী দাম না বললে ভালো দামের আশায় চামড়া নিয়ে তারা ছুটবেন আমিনবাজার, পোস্তা বা অন্যত্র। রাজধানীর কয়েকটি এলাকা ঘুরে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিবছরই পাড়া-মহল্লার স্থানীয় মাদ্রাসা-এতিমখানার শিক্ষার্থীরা কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহে কাজ করছে। ঈদের দিন সকাল থেকে শুরু হওয়া এসব চামড়া সংগ্রহ চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। এবারও এর ব্যতিক্রম নয়। রাজধানীর মাতুয়াইলের এমদাদিয়া মাদ্রাসার ছাত্র ফোরকান মিয়া, ওস্তাদ মাওলানা হাফেজ মিয়ার সঙ্গে সকাল থেকেই মহল্লায় ঘুরে ঘুরে পশু জবাই করছেন। একই সঙ্গে পশুর চামড়াটিও মাদ্রাসার জন্য সংগ্রহের আবদার করছেন কোরবানি দাতার কাছে। এগুলো বিক্রি করে যা আয় হবে তা দিয়ে মাদ্রাসার ছয় থেকে সাত মাসের খরচ চলবে বলে জানিয়েছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।   

চামড়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সারা বছরে যে পরিমাণ পশু জবাই হয়, এর ৬০ শতাংশেরও বেশি হয় ঈদুল আজহায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

অন্যান্য বছরে চামড়া কেনার জন্য পাড়া-মহল্লায় ছোট ছোট মৌসুমি ব্যবসায়ীদের দেখা মিললেও এ বছর তেমনটি এখন পর্যন্ত (বেলা ২টা) দেখা যায়নি। তবে রাজধানীর মূল সড়কে রাস্তার মোড়ে মোড়ে এসব ব্যবসায়ীকে চেয়ার পেতে বসে থাকতে দেখা গেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের সামনে মজুত করা চামড়ার পরিমাণও বাড়বে।

আজিমপুরের সলিমুল্লাহ এতিমখানার সামনে বাঁশ দিয়ে ঘেরা বেঞ্চে বসে আছেন এখলাস উদ্দিন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন আর মহল্লায় ঘুরে চামড়া কেনা হয় না। মসজিদ আর মাদ্রাসার লোকজনই চামড়া সংগ্রহ করেন। তাদের কাছ থেকে আমরা কিনি। এতে সুবিধা হলো আমাদের হয়রানি কমেছে। এছাড়া দামের বিষয়েও একটা স্বস্তি পাওয়া যায়। পাড়ায় ঘুরে ঘুরে চামড়া কিনতে গিয়ে আগে অনেক সময় মারামারি পর্যন্ত হতো। এখন তা হয় না।’

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের শহরগুলোতে কোরবানির পর চামড়া ছাড়ানো এবং মাংস বানানোর প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করেন পেশাদার কসাইরা। তাদের কাজটি হয় দ্রুত। তাই চামড়া সংগ্রহের প্রক্রিয়াটিও হয় দ্রুত। এসব চামড়ায় টিকে আছে দেশের তৃতীয় অবস্থানে থাকা বৃহৎ রফতানি খাত ট্যানারি ব্যবসা। এছাড়া এসব চামড়া সংগ্রহ ও বিক্রির মধ্য দিয়ে চলে দেশের অধিকাংশ মাদ্রাসা ও এতিমখানার চার-পাঁচ মাসের খরচ।

উল্লেখ্য, প্রতিবছরের মতো এবারও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার মূল্য ৪৭ থেকে ৫২ এবং ঢাকার বাইরে দেশের সর্বত্র হবে ৪০ থেকে ৪৪ টাকা। খাসির চামড়া ১৮ থেকে ২০ এবং বকরির চামড়া গত বছরের মতো এবারও ১২ থেকে ১৪ টাকা বর্গফুট নির্ধারণ করা হয়েছে।

রবিবার সকাল থেকে রাজধানীর মাতুয়াইল, মোহাম্মদপুর, রায়েরবাগ, রামপুরা, বনশ্রী, ইস্কাটন ও বাড্ডা, মালিবাগ, খিলগাঁও, মগবাজার এলাকায় স্থানীয় মাদ্রাসা কমিটির উদ্যোগে চামড়া সংগ্রহের কাজ চলছে। ট্যানারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এ বছর সর্বোচ্চ ৯০ লাখ থেকে ৯৫ লাখ পিস কোরবানি করা পশুর চামড়া সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। তবে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের দেওয়া তথ্যমতে, এ বছর কমপক্ষে এক কোটি পিস কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করা হবে।