আইএমএফের ঋণ: জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে বাংলাদেশ ব্যাংক

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর কাছে ‘৪৫০ কোটি ডলার ঋণ চাওয়ার’ বিষয়টি ‘জানা নেই’ বলছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায় থেকে বাংলা ট্রিবিউনকে আরও বলা হয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হিসাবায়নে আইএমএফের সঙ্গে সম্মতির বিষয়ে যে তথ্য সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তা-ও সঠিক নয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা মনে করেন, ঋণের জন্য কখনোই আইএমএফের কোনও মিশন আসে না। ফলে আইএমএফের এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক বিভাগের প্রধান রুহুল আনন্দের নেতৃত্বে সফররত আইএমএফ মিশনের সঙ্গে ঋণের বিষয়ে আলোচনা হওয়ারও সুযোগ নেই।

বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, আইএমএফের কাছে ৪৫০ কোটি ডলার চাওয়ার যে তথ্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তার কোনও ভিত্তি নেই। যদিও বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য পরিস্থিতির উন্নতির জন্য আইএমএফের কাছে বাংলাদেশ সম্প্রতি ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণ চেয়েছে। এরপর আইএমএফের এ মিশন ঢাকায় এসেছে।

তিনি দাবি করেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হিসাবায়নে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)- যে পরামর্শ দিয়েছে তা মানবে না বাংলাদেশ ব্যাংক। তিনি বলেন, এখন যেভাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের হিসাবায়ন হচ্ছে, ভবিষ্যতেও একইভাবে হবে।

এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা সোমবার (১৮ জুলাই) বলেন, ৪৫০ কোটি ডলার ঋণের নিউজটি ভুয়া। কে কার কাছে ঋণ চেয়েছে, এর কোনও হদিস নেই। এই ঋণের বিষয়ে কোথাও কোনও আলোচনা হয়নি বলেও জানান তিনি।

তিনি উল্লেখ করেন, প্রতিবছর নিয়মিত দুই বার করে আইএমএফের আর্টিকেল ফোর-এর মিশন বাংলাদেশে আসে। করোনার কারণে অনেকদিন আসতে পারেনি, এটা তাদের দ্বিতীয় বার আসা।

এই মিশনের সঙ্গে ঋণের বিষয়ে আলোচনা হওয়ার ‘সুযোগ নেই’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ঋণের জন্য কখনোই আইএমএফের কোনও মিশন আসে না। ঋণ দেওয়া নেওয়ার সঙ্গে মিশন আসার কোনও সম্পর্ক নেই।

এদিকে মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) বিকালে জরুরি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ধারণা করা হচ্ছে, আইএমএফের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈঠকের বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আলোকপাত করা হবে।

উল্লেখ্য, আইএমএফের এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক বিভাগের প্রধান রুহুল আনন্দের নেতৃত্বে সফররত আইএমএফ মিশন রবিবার(১৭ জুলাই) অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেছেন।

এর আগে‌ বাংলাদেশ আইএমএফ থেকে চার বার ঋণ নিয়েছে। প্রথমবার ঋণ নেওয়া হয় ১৯৯০-৯১ সময়ে। এর পর ২০০৩-২০০৪, ২০১১-১২ এবং সর্বশেষ ২০২০-২১ সালে সংস্থাটি থেকে ঋণ নেয় বাংলাদেশ। তবে কোনোবারই ঋণের পরিমাণ ১০০ কোটি ডলার ছাড়ায়নি। আইএমএফ থেকে বাংলাদেশ বছরে ১০০ থেকে ১৫০ কোটি ডলার পর্যন্ত ঋণ পাওয়ার যোগ্য। ফলে বর্ধিত ঋণ সহায়তা (ইসিএফ), বর্ধিত তহবিল সহায়তা (ইএফএফ) এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবিলার জন্য গঠিত সহনশীলতা ও টেকসই তহবিল (আরএসএফ)-আইএমএফের এই তিন কর্মসূচি থেকে আলাদা করে ঋণ চাওয়া হবে। ইসিএফ থেকে নেওয়া ঋণে সুদ ও মাশুল দিতে হয় না। ১০ বছর মেয়াদি এ ঋণ পরিশোধে সাড়ে ৫ বছর গ্রেস পিরিয়ডও রয়েছে। বাকি দুটি তহবিল থেকে দেওয়া ঋণের সুদহার ১ দশমিক ৫৪ থেকে ১ দশমিক ৭৯ শতাংশ।