রমজানের পর থেকে মূল্যস্ফীতি কমবে: অর্থমন্ত্রী

উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমানোর পথ খোঁজার তাগিদ দিয়েছেন ঢাকা সফররত বিশ্বব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অপারেশন) আনা বেয়ার্দ। তবে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, এটি রাতারাতি কমানো সম্ভব নয়। তিনি বলেন, আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। রমজানের পর থেকে, বিশেষ করে মে-জুন মাসের দিকে (মূল্যস্ফীতি) কমে আসবে বলে আমরা আশা করছি।

রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে শেরেবাংলা নগরের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে অর্থমন্ত্রীর দফতরে বিশ্বব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনা বেয়ার্দ অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।

বৈঠকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী, বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইজার এবং বাংলাদেশে সংস্থাটির আবাসিক প্রতিনিধি আব্দুলায়ে সেক উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় আসেন বিশ্বব্যাংকের এমডি আনা বেয়ার্দ। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন ‘বৈঠকে আমরা বাংলাদেশে চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছি। চলমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের কিছু সংস্কার দরকার বলে আমরা মনে করছি। বিশেষ করে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশকেও মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় মনোযোগী হতে হবে এবং মূল্যস্ফীতি কীভাবে কমানো যায় সেই পথ তৈরি করতে হবে।’

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘কাজ চলছে। অপেক্ষা করতে হবে, রাতারাতি তো হবে না। আল্টিমেটলি এই ক্রাইসিসটা ম্যানেজ করতে হবে।’

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অর্থ সচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আগামী রমজান মাস ও ঈদের পর সাধারণ মূল্যস্ফীতি ব্যাপকভাবে কমে আসবে এবং জুনের মধ্যে তা ৭ দশমিক ৫ শতাংশে থাকবে।’

বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এটা ম্যানেজমেন্টের একটা কৌশল, ম্যানেজমেন্ট কীভাবে করছে, কতদূর ভিকটিম হবে সেটার মধ্যেও আবার অ্যাডজাস্টমেন্ট করতে হবে। সেগুলো তো ডে টু ডে প্রশ্ন আসবে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ যে সমস্যাগুলো ফেস করছে এগুলো নতুন নয়। বাংলাদেশ এই সমস্যাগুলো যেভাবে মোকাবিলা করছে, সেটার প্রশংসা করেছেন তারা।’

আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, ‘কিছুদিন আগে মেট্রোরেল উদ্বোধন করা হয়েছে। এতে ওই অঞ্চলে (উত্তরা, মিরপুর) যারা থাকেন, তাদের যে কী উচ্ছ্বাস! বিশেষ করে নারীরা মেট্রোরেলে উঠে স্ট্যান্ড ধরে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু তাদের চোখে মুখে প্রশান্তি এবং আনন্দ। মেগা প্রজেক্ট সম্পর্কে অনেক কথা বলেছে বিএনপি। কিন্তু মানুষ উপকৃত হয়েছে।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘মেগা প্রজেক্ট করবো কী করবো না, করলে কী হবে, শুধু ক্রিটিসিজম করলে কোনও লাভ হবে না। এগুলো শেখ হাসিনা বানিয়েছেন একটা দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে, একটা চিন্তা নিয়ে। বর্তমান ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এবং জনগণ এটা গ্রহণ করেছে। এয়ারপোর্ট থেকে যে এক্সপ্রেসওয়ে এটাও কিন্তু তারা অ্যাপ্রিসিয়েট করেছেন।’

বর্তমান সময়টাকে সারা বিশ্বের অর্থনীতির জন্যই ‘কঠিন’ বলে আখ্যা দেন বিশ্বব্যাংকের এমডি আনা বেয়ার্দ।

তিনি বলেন, ‘দুই বছর ধরে বিশ্ব অর্থনীতি একটার পর একটা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই সংকটে পুরো বিশ্ব অর্থনীতি আক্রান্ত হয়েছে। এই দুঃসময়ে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও একটি কঠিন সময় অতিক্রম করছে। তবে আমরা মনে করি, বাংলাদেশ এই কঠিন সময় থেকে বেরিয়ে আসবে।’

বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসা করে আনা বেয়ার্দ বলেন, ‘দারিদ্র্য থেকে ব্যাপকভাবে জনসংখ্যাকে বের করে আনতে প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশের রেকর্ড অত্যন্ত সফল বলে আমরা মনে করি।’

তিনি বলেন, ‘এখন বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে চলমান প্রায় ৫০টি প্রকল্পের বিপরীতে ১৬ বিলিয়ন ডলারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে।’