আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণের অংশ হিসেবে ডলারের বিনিময় হারে বড় পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে মার্কিন ডলারের দাম নির্ধারণে বাজারকেই মুখ্য ভূমিকায় রাখা হয়েছে। ব্যাংক ও গ্রাহকের আলোচনার ভিত্তিতে ডলারের ক্রয়-বিক্রয়মূল্য নির্ধারিত হবে। তবে অস্বাভাবিক উত্থান রোধে বাংলাদেশ ব্যাংক সক্রিয় নজরদারিতে থাকবে বলে জানিয়েছে।
বুধবার (১৪ মে) দুবাই থেকে ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, “সামগ্রিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। প্রবাসী আয় ৩০ শতাংশ বেড়েছে, সরকারের ব্যয় সংকোচন ও বাজার হস্তক্ষেপ না করায় রিজার্ভও বাড়ছে। এখনই সময় বাজারভিত্তিক বিনিময় হারে যাওয়ার।”
গভর্নর জানান, প্রয়োজন দেখা দিলে রিজার্ভ থেকে ৫০ কোটি ডলারের একটি বিশেষ তহবিল গঠন করা হয়েছে, যা বাজারে প্রয়োজনে সরবরাহ করা হবে। একই সঙ্গে ‘সিন্ডিকেট’ বা কারসাজি ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে থাকবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকগুলোতে তদারকিও শুরু হয়েছে।
এদিকে, বুধবার (১৪ মে) বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, অনুমোদিত ডিলার (এডি) ব্যাংকগুলো এখন থেকে নিজস্ব আলোচনার মাধ্যমে বিনিময় হার নির্ধারণ করবে এবং দিনে দু’বার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে লেনদেনের তথ্য জমা দেবে। এতে আগের মতো ক্রয় ও বিক্রয়ের মধ্যে সর্বোচ্চ এক টাকার ব্যবধানের নিয়ম থাকছে না।
‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতির সংস্করণ
নতুন এই পদ্ধতিকে অর্থনীতিবিদরা 'ক্রলিং পেগ' পদ্ধতির উন্নত সংস্করণ হিসেবে উল্লেখ করছেন, যেখানে নির্ধারিত সীমার মধ্যে বিনিময় হার উঠানামা করতে পারবে। বর্তমানে প্রতি ডলারের ভিত্তিমূল্য ১১৯ টাকা। এর সঙ্গে সর্বোচ্চ ২.৫% বৃদ্ধি বা হ্রাসের সুযোগ থাকায়, বাজারে সর্বোচ্চ ১২৩ টাকায় লেনদেন হওয়া স্বাভাবিক। তবে এখন ব্যাংকগুলো ১২৩.৫০ টাকায় ডলার বিক্রি করছে, আর খোলাবাজারে তা ১২৪ টাকা।
রিজার্ভে স্বস্তি, প্রবাসী আয়ে রেকর্ড
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছেন, যা দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। একইসঙ্গে বৈধ পথে অর্থ পাঠানোর প্রবণতা বাড়ায় অর্থ পাচার কমেছে। আকু পরিশোধ সত্ত্বেও রিজার্ভ এখন আইএমএফের বিপিএম৬ পদ্ধতিতে ২০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে।
আইএমএফের পক্ষ থেকেও বিনিময় হারে নমনীয়তা ও রিজার্ভ শক্তিশালীকরণের আহ্বান জানানো হয়েছে। মিশনপ্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও এক বিবৃতিতে নতুন ব্যবস্থা বাস্তবায়নের প্রশংসা করেন।
ব্যাংক খাতে আশাবাদ
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, “বর্তমানে ডলারের বাজারে স্থিতিশীলতা রয়েছে। প্রবাসী আয় ও রফতানি আয়ে ইতিবাচক ধারা থাকায় বাজারভিত্তিক দামের কারণে বড় কোনও সংকট হবে না বলে আশা করা যায়।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, “ডলারের দাম নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। সরকার, ব্যাংক ও জনগণ মিলে যদি স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যায়, তবে অর্থনীতিতে স্বস্তিদায়ক পরিবেশ বজায় থাকবে।”