একজন ব্যক্তিকে টাকা দেওয়ার কোনও ক্ষমতা মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নেই উল্লেখ করে প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, কংগ্রেসের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদারককারী সংস্থা এটি হতে দেখলেই এ ব্যাপারে বড় রকম একটি প্রতিবাদ জানাতো।
ইউনূস সেন্টার থেকে পাঠানো প্রতিবাদ লিপিতে আরও বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘দ্য ডেইলি কলার’ গত ১৭ এপ্রিল একটি প্রতিবেদন প্রচার করে। প্রতিবেদনটি পরদিনই বাংলাদেশের বিভিন্ন মিডিয়া যারযার মতো প্রচার করে। এতে পাঠকদের মধ্যে বড় ধরনের বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। ইউনূস সেন্টারের দাবি, বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদগুলোয় যে খবর প্রচারিত হয়েছে, তাতে ভুল ধারণার জন্ম দিয়েছে।
প্রফেসর ইউনূস ব্যক্তিগতভাবে মার্কিন সরকারের কোনও টাকা নেননি উল্লেখ করে ইউনূস সেন্টার থেকে বলা হয়েছে, উন্নয়ন সহযোগিতার জন্য সৃষ্ট এজেন্সিগুলো কোনও ব্যক্তিকে অর্থ দিতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রফেসর ইউনূসকে ১৩ মিলিয়ন ডলার অনুদান দেওয়ার সংবাদটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। একজন ব্যক্তিকে টাকা দেওয়ার কোনও ক্ষমতা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নেই। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদারককারী সংস্থা এটা হতে দেখলেই এ ব্যাপারে বড় রকম একটা প্রতিবাদ জানাতো। প্রতিবেদনটি মার্কিন সরকারের সংস্থাগুলোর কাজ সম্পর্কে সম্পূর্ণ একটা মিথ্যা ধারণার সৃষ্টি করেছে।
প্রতিবাদে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, প্রফেসর ইউনূস ক্লিনটন ফাউন্ডেশনকে একবার ১ লাখ ডলার, আরেকবার ৩ লাখ ডলার অনুদান দেওয়ার তথ্য সম্পূর্ণ মিথ্যা। ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের ওয়েব সাইটে এ রকম কোনও তথ্যই নেই। গ্রামীণ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভে যোগদান করার জন্য ফি বাবদ টাকা দিয়েছেন। ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ একটা আন্তর্জাতিক সম্মেলন। এখানে ফি দিয়ে যোগদান করতে হয়। গ্রামীণ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট তাই ফি দিয়েছেন।
আরও পড়তে পারেন:
প্রতিবাদলিপিতে দাবি করা হয়, প্রফেসর ইউনূসকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার ২০১০ সালে ‘কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল’ দেয়, যা প্রতিনিধি পরিষদে উভয় দলের প্রতিনিধিদের বিপুল ভোটে ও সিনেটে উভয় দলের সর্বসম্মতিক্রমে পাস করা হয়। এছাড়া, প্রফেসর ইউনূস ২০০৯ সালে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কাছ থেকে ‘প্রেসিডেনসিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম’গ্রহণ করেন। তাকে ‘বিশ্ব খাদ্য পুরস্কার’ (১৯৯৪), ‘কেয়ার হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাওয়ার্ড’(১৯৯৩) সহ অসংখ্য পুরস্কার এবং মার্কিন সমাজের বিভিন্ন অংশ থেকে গত তিন দশক ধরে অসংখ্য সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে।
ইউএসএআইডি-র ১৩ মিলিয়ন ডলার অনুদান সম্পর্কে ইউনূস সেন্টার থেকে বলা হয়, গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন দেশে ‘গ্রামীণ’ ও ‘ইউনূস’ নাম ধারণ করে অনেক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এ রকম দুটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে গ্রামীণ ফাউন্ডেশন ও গ্রামীণ আমেরিকা। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানের জন্য তহবিল সংগ্রহ করতে ১৯৯৮ সালে গ্রামীণ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। পৃথিবীর ২০টি দেশে বিভিন্ন ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচিকে অর্থ সহায়তা দিতে এই প্রতিষ্ঠান এ পর্যন্ত ১৯৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সংগ্রহ করেছে। এই প্রতিষ্ঠানের অনেক দাতার মধ্যে ইউএসএআইডি গত দশ বছরে একটি ক্ষুদ্র দাতা মাত্র।
আরও পড়তে পারেন:
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন ধনী রিপাবলিকান তার নিজ অর্থে ২০০৮ সালে নিউ ইয়র্কে গ্রামীণ ব্যাংকের অনুকরণে গ্রামীণ আমেরিকা প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠানটি ক্ষুদ্র ঋণ হিসেবে এ পর্যন্ত ৩৮০ মিলিয়ন ডলার বিতরণ করেছে। গ্রামীণ আমেরিকার কর্মসূচিতে ইউএসএআইডি-র সংশ্লিষ্টতা সামান্যই। ইউএসএআইডি-র তহবিল পেয়েছে এরকম আরেকটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ‘ইউনূস সামাজিক ব্যবসা’।
প্রফেসর ইউনূসের ক্ষুদ্র ঋণ ও সামাজিক ব্যবসার ধারণাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এমন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে অনেক ডোনার, ব্যাংক, বিত্তশালী ব্যক্তি ও বিনিয়োগকারী অর্থ সহায়তা দিচ্ছেন। ইউএসএআইডি এই বহুসংখ্যক বিনিয়োগকারীর মধ্যে মাত্র একটি। ইউএসএআইডি এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের কাজের গুণগত মানের জন্য অর্থ সহায়তা দিয়েছে, কোনও উচ্চ পদে আসীন কারও বন্ধুকে খুশি করতে নয়।
/এমএনএইচ/