২০১৫ সালে এক পয়সাও মুনাফা হয়নি ৭ ব্যাংকের

সাত ব্যাংকগেল বছরে এক পয়সাও মুনাফা করতে পারেনি ৭টি বাণিজ্যিক ব্যাংক। ব্যাংকগুলো হলো রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, বেসিক, বাংলাদেশ কৃষি, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বেসরকারি খাতের আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও বিদেশি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান। ২০১৫ সালে এই ব্যাংকগুলো উল্টো লোকসান দিয়েছে ১ হাজার ৩১৮ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তৈরি করা এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে।
আরও পড়তে পারেন: যেভাবে সরকারের মুঠোয় যাচ্ছে ইসলামী ব্যাংক 

ব্যাংকিং খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি ভালো না থাকায় বেশ কয়েকটি ব্যাংক গেল বছর ভালো ব্যবসা করতে পারেনি। ঋণ বিতরণ করতে না পেরে ব্যাংকগুলোকে অলস অর্থের পেছনে বিপুল পরিমাণ সুদ ব্যয় করতে হয়েছে। তবে, ঋণ পুনর্গঠন ও বিশেষ সুবিধায় ঋণ পুনঃতফসিলসহ বিভিন্ন সুবিধা পেয়েছে ব্যাংকগুলো। যার ফলে ৭ ব্যাংক লোকসানে থাকলেও অন্য ব্যাংকগুলো ভালো মুনাফা করেছে।
আরও পড়তে পারেন: আগের সপ্তাহ থেকে ২০১ কোটি টাকা লেনদেন বেড়েছে পুঁজিবাজারে

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে সবচেয়ে বেশি ৮৬২ কোটি ৫১লাখ টাকা লোকসান দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক।

অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের এই তথ্য ঠিক নয় বলে দাবি করেছেন সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ কুমার দত্ত। তিনি শনিবার রাতে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ২০১৫ সালের ফাইনাল ব্যালেন্স শিট এখনও তৈরি হয়নি। আশা করছি, সোনালী ব্যাংক প্রফিট করবে। তিনি বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ব্যালেন্স শিট তৈরি হয়ে যাবে। সেখানে লোকসান নয়, প্রফিটের তথ্য থাকবে।

এদিকে, সোনালী ব্যাংকের লোকসান হওয়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সোনালী ব্যাংক থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠানো তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। সোনালী ব্যাংক প্রাথমিকভাবে ৮৬২ কোটি ৫১ লাখ টাকা লোকসান দেখিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক ২০১৫ সালে লোকসান দিয়েছে ২৩৮ কোটি টাকা। এছাড়া, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি) লোকসান দিয়েছে ১৫৯ কোটি টাকা। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) লোকসান হয়েছে ৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। বেসরকারি খাতের আইসিবি ইসলামী ব্যাংক ২০১৫ সালে লোকসান দিয়েছে ১৪ কোটি ১১ লাখ টাকা। এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের লোকসান হয়েছে ১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।

এছাড়া, বিদেশি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান ২০১৫ সালে লোকসান দিয়েছে ৩৪ কোটি ১১ লাখ টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৫ সালে ৭ ব্যাংক লোকসান দিলেও সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতে নিট মুনাফা বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেওয়া নানা সুবিধার ফলে খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোর প্রভিশন সংরক্ষণ কমে যাওয়ার ফলে নিট মুনাফা বেড়েছে। ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা থেকে ঋণের বিপরীতে নির্ধারিত হারে প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ এবং ৪০ শতাংশ হারে (আগে ছিল সাড়ে ৪২ শতাংশ) করপোরেট কর দেওয়ার পর ব্যাংকগুলোর নিট মুনাফার হিসাব হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, ব্যাংকগুলো ২০১৫ সালে ২১ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে। এর বিপরীতে নিট মুনাফা হয়েছে সাত হাজার ৯১৮ কোটি টাকা। ২০১৪ সালে ২১ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফার বিপরীতে ৫ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকার নিট মুনাফা ছিল। এতে আগের বছরের তুলনায় নিট মুনাফা বেড়েছে ১ হাজার ৯২৫ কোটি টাকা।

এ প্রসঙ্গে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ হালিম চৌধুরী বলেন, ২০১৫ সালে বড় ঋণ পুনর্গঠন ও বিশেষ সুবিধায় ঋণ পুনঃতফসিলসহ বিভিন্ন সুবিধা পেয়েছে ব্যাংক। এছাড়া, নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও ব্যাংকগুলো ব্যবসা করে যাচ্ছে। আগের দেওয়া ঋণের বিপরীতে সব সময়ই নির্দিষ্ট হারে একটা আয় আসছে। এর বাইরে খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণের ফলে প্রভিশনিংয়ের প্রয়োজনীয়তা কমে গেছে। যার ফলে ব্যাংক খাতে নিট মুনাফা আগের বছরের চেয়ে বেশি হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সোনালী ব্যাংক লোকসান গুনলেও ৪৬১ কোটি টাকা মুনাফা করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক। অগ্রণী ব্যাংকও ৩৫১ কোটি টাকা মুনাফা করেছে।

আরও পড়তে পারেন: সহ-পাইলটকে সরিয়ে ককপিটে এয়ার হোস্টেজকে বসালেন পাইলট!

বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে নিট মুনাফার শীর্ষে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। এই ব্যাংকটি গেল বছর মুনাফা করেছে ৬১৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। ২০১৪ সালে ইসলামী ব্যাংক মুনাফা করেছিল ৫১৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। মুনাফার দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক। এই ব্যাংকটি ২০১৫ সালে মুনাফা করেছে ৪০৭ কোটি টাকা। ইউসিবিএল নিট মুনাফা করেছে ৩৯৭ কোটি টাকা। পুবালী ব্যাংক নিট মুনাফা করেছে ৩৫৭ কোটি টাকা। একইভাবে অন্য সব ব্যাংকই কম-বেশি মুনাফা করেছে।

/এমএনএইচ/আপ-এমপি/