সয়াবিনের দামেই রাইস ব্র্যান তেল বিক্রি করছে টিসিবি

সয়াবিন ও পাম তেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবি বিক্রি করছে রাইস ব্র্যান তেল। সয়াবিনের দামেই প্রতিলিটার বোতলজাত রাইস ব্র্যান তেল ১১০ টাকা দরে বিক্রি করছে সংস্থাটি। গত সোমবার থেকে ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকায় মসুর ডাল ও চিনির সঙ্গে প্রথম পর্যায়ে টিসিবি রাইস ব্র্যান তেল সরবরাহ করেছে। টিসিবি পরবর্তী সময়ে সারা দেশেই রাইস ব্র্যান তেল সরবরাহ করবে। একজন কার্ডধারী ক্রেতা প্রতিমাসে দুই লিটার রাইস ব্র্যান তেল কিনতে পারছেন।

টিসিবি জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন এবং পাম তেলের দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে দেশীয় বাজারেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। সারা দেশের মানুষের আপত্তির মুখে বাধ্য হয়েই আমদানিকারকদের ক্ষতির মুখ থেকে ফিরিয়ে আনতে কয়েক দফায় সয়াবিন ও পাম তেলের দাম বাড়ায় সরকার। এক ধাপে প্রতিলিটার সয়াবিনের দাম ৩৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০৬ টাকা নির্ধারণ করে। যদিও গত সপ্তাহে তা ৬ টাকা কমিয়ে ১৯৯ টাকা নির্ধারণ করে ভোজ্যতেল আমদানিকারক সমিতি। এমন পরিস্থিতিতে অস্থির ভোজ্যতেলের বাজার নিয়ন্ত্রণে দেশে উৎপাদিত ভোজ্যতেল হিসেবে সরিষা, সূর্যমুখী এবং রাইস ব্র্যান তেলের উৎপাদন বাড়ানোর দিকে মনোযোগী হতে পরামর্শ দেওয়া হয় সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে।

উৎপাদনকারীরা জানিয়েছে, সরকার প্রয়োজনীয় সহায়তা দিলে দেশীয় উৎপাদনকারীরা ভোজ্যতেলের মোট স্থানীয় চাহিদার ১০ শতাংশ পূরণ করতে পারবে।

বাংলাদেশ রাইস ব্র্যান অয়েল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, দেশে এই তেল উৎপাদনের ১৭টি কারখানা আছে। এগুলোর বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ১৬ লাখ ৩০ হাজার টন। এই তেলের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত ধানের তুষের জোগান কম থাকায় তারা বছরে আট লাখ টন অপরিশোধিত রাইস ব্র্যান তেল উৎপাদন করে। দাম বেশি হওয়ায় বর্তমানে স্থানীয় বাজারে রাইস ব্র্যান তেলের চাহিদা নেই বললেই চলে। যদিও তা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। প্রতি মাসে মাত্র ৮০০ টন পরিশোধিত রাইস ব্র্যান তেল দেশের বাজারে বিক্রি হয়। বাকি অপরিশোধিত তেল বিদেশে রফতানি করতে হয়।

সূত্র জানিয়েছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষ ১০ মাসে অপরিশোধিত রাইস ব্র্যান তেল রফতানি করে বাংলাদেশ ১৭৫ কোটি ডলারের বেশি আয় করেছে। অপরদিকে বেশি দামে বিদেশ থেকে সয়াবিন তেল আমদানি করতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে রাইস ব্র্যান তেল রফতানি না করার উদ্যোগ নেয় টিসিবি। ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে ও দেশি পণ্যের ব্যবহার বাড়াতে সরকার টিসিবির মাধ্যমে রাইস ব্র্যান তেল সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে।

জানা গেছে, টিসিবি সারা বছর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে চিনি, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, মসুর ডাল,  ছোলা ও খেজুরসহ বিভিন্ন পণ্য ভর্তুকি মূল্যে বিক্রি করে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় রাইস ব্র্যান তেল উৎপাদন বাড়াতে কৌশলপত্র তৈরি করছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ভোজ্যতেলের দামের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত ২৪ মে রাইস ব্র্যান অয়েল রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। পরবর্তী সময়ে দেশের বাজারে এই তেলের চাহিদা কম থাকায় এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত ২৯ জুন একটি সার্কুলার জারি করে জানায়, রাইস ব্র্যান তেল রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং উৎপাদনকারীরা ১ জুলাই থেকে রাইস ব্র্যান তেল রফতানি করতে পারবে।

এদিকে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আরিফুল হাসান জানিয়েছেন, আমরা ভালো জিনিস (রাইস ব্র্যান তেল) বিদেশে রফতানি করে খারাপ জিনিস (সয়াবিন তেল) আমদানি করে খাচ্ছি। ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে ও দেশি পণ্যের ব্যবহার বাড়াতে সরকার রাইস ব্র্যান তেল বিক্রির এই উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, সয়াবিন ও পামতেলের আমদানি নির্ভরতা কমানোর পাশাপাশি ভালো জিনিস খাওয়ার অভ্যাস করতে সরকারের এই উদ্যোগ অনেকটাই সহায়ক বলে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

জানা গেছে, ১৭৫ টাকা দরে রশিদ অ্যাগ্রোর কাছ থেকে ৩ লাখ লিটার, এসিআইর কাছ থেকে ১ লাখ লিটার, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল মিলস থেকে ২ লাখ ও যমুনার কাছ থেকে ১ লাখ লিটারসহ মোট ৭ লাখ লিটার রাইস ব্র্যান তেল কিনেছে টিসিবি। ভোক্তা পর্যায়ে যা ১১০ টাকা লিটার দরে বিক্রি করছে টিসিবি। টিসিবি চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) বিক্রয় কার্যক্রমের অধীনে এসব রাইস ব্র্যান তেল বিক্রি করবে। গত অর্থবছরেই টিসিবি এই ভোজ্যতেল বিক্রির পরিকল্পনা করলেও ক্রয়সংক্রান্ত প্রক্রিয়ার কারণে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে বছরে প্রায় ২০ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। রমজান মাসের চাহিদা ২ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখ টন। স্থানীয় উৎপাদন হয় ২ লাখ ৩ হাজার টন। আমদানি করা হয় ১৮ লাখ টন। অপরিশোধিত সয়াবিন তেল আমদানি করা হয় প্রায় ৫ লাখ টন। এছাড়া ২৪ লাখ টন সয়াবিন বীজ আমদানি করা হয়, সেখান থেকে ৪ লাখ টন অপরিশোধিত তেল উৎপাদন করা হয়। অপরিশোধিত পামতেল আমদানি করা হয় প্রায় ১১ লাখ টন।