ডাচ ডিজাইন উইকে অংশগ্রহণ বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের জন্য ‘নতুন সম্ভাবনা’

পণ্য বাজারজাতকরণে ডিজাইনের ওপর জোর দিচ্ছে বাংলাদেশের বেরসরকারি খাত। সেজন্য ডাচ ডিজাইনারদের সঙ্গে মতবিনিময় ও সমঝোতা চুক্তিও করছে দেশের ব্যবসায়ীরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এরফলে নেদারল্যান্ডস এবং বাংলাদেশে উভয়েই একসঙ্গে উদ্ভাবনী প্রকল্পে যুক্ত হয়ে উৎপাদনে দক্ষতা বাড়াতে পারে। এই কাজে বেসরকারি খাতকে সহযোগিতা করছে দেশটিতে বাংলাদেশ দূতাবাস।

দূতাবাস থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নেদারল্যান্ডসের আইন্ডহোভেনে ডাচ ডিজাইন সপ্তাহ-২০২২ এ বাংলাদেশ দূতাবাস দুই দিনব্যাপী (২৬-২৭ অক্টোবর) নেটওয়ার্কিং ইভেন্টের আয়োজন করে। এতে বাংলাদেশ হতে এপেক্স লেদার, ওয়ালটন, এসিআই, নারিশ, বেনি বুননের মতো শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য উদ্যোক্তারা অংশ নেয়। এই ডিজাইন সপ্তাহে যুক্ত ছিলেন ১৫০০ উদ্ভাবনী ডিজাইনার। যাদের মধ্যে অনেকের সঙ্গে মতবিনিময় করেন বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা।

ডিজাইন উইকের একটি স্টলে প্রিমিয়াম ল্যাম্প তৈরিতে পুনর্ব্যবহৃত মাছ ধরার জালের ব্যবহার প্রদর্শন করা হয়েছে। যা দেখে বাংলাদেশেও প্লাস্টিক পণ্যের রিসাইক্লিং শিল্পের সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এসিআই-এর পরিচালক (প্লাস্টিক) প্রদীপ কুমার পোদ্দার। তার প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিকভাবে টেকসই ও বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক বিকাশে কাজ করবে বলেও তিনি প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এই ইভেন্টে ডিজাইন একাডেমি আইন্ডহোভেনের সাথে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে ওয়ালটন। প্রতিষ্ঠানটির ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর লিয়াকত আলী বলেন, ‘বৈশ্বিক বাজারে তাদের ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠার জন্য এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’

ডাচ ফ্যাশন উইক (2)

ডিজাইন একাডেমির পরিচালক বলেন, ‘সামগ্রিক পণ্যের স্মার্ট ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং নতুন পণ্যের উদ্ভাবনী ধারণা বিকাশের জন্য তারা ওয়াল্টনের সাথে যুক্ত হওয়াকে স্বাগত জানাচ্ছে।’   
এপেক্স-এর প্রতিনিধি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, ‘ভোক্তা চাহিদা ও টেকসই পণ্যের ভবিষ্যৎ কেমন হবে, সে বিষয়ে ধারণা পাওয়ার জন্য ডাচ ডিজাইন সপ্তাহ অনুপ্রেরণার একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। বাংলাদেশ পণ্য ও সেবা বিক্রি থেকে নিজস্ব ব্র্যান্ড তৈরি ও ডিজাইনে রূপান্তরিত হতে শুরু করেছে এবং ডাচ ডিজাইন সপ্তাহে অংশগ্রহণ বাংলাদেশীদের জন্য উদ্ভাবনী শক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হতে পারে। এই ধরনের সম্পৃক্ততা অবশ্যই পরবর্তী প্রজন্মের ডিজাইনারদের অনুপ্রাণিত করবে।’

ডিজাইন বিশেষজ্ঞ এবং ডাচ ডিজাইন সপ্তাহের সাবেক পরিচালক হ্যান্স রবার্টাস বাংলাদেশি নির্মাতাদের কাছে বিশ্বখ্যাত ফিলিপস প্রতিষ্ঠার পর অদ্যাবধি উক্ত প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পণ্যের ডিজাইনের উন্নয়নের ধারা তুলে ধরেন। এছাড়া পণ্যের ডিজাইন উদ্ভাবনের মাধ্যমে বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা বৈশ্বিক বাজারে কীভাবে প্রতিযোগিতা করতে পারে, সে বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করেন।

ডাচ ফ্যাশন উইক (1)

এসময় দেশটিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, ‘ডাচ ডিজাইন সপ্তাহের ২২তম সংস্করণে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো এই ব্যতিক্রমী ডিজাইন মিটের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।’ ভবিষ্যতে আরও অনেক সৃজনশীল বাংলাদেশি কোম্পানি এই ডিজাইন সপ্তাহে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে ডাচ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিকট তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

প্রসঙ্গত, প্রতিবছর হাজারও ডিজাইনার ইউরোপের অন্যতম বৃহত্তম এই ডিজাইন ইভেন্টে মিলিত হন; যেখানে উদীয়মান চিন্তাভাবনা বা ডিজাইন, উদ্ভাবন, নতুন উপকরণ, টেকসই ধারণাগুলো ইউরোপ এবং তার বাইরের উদ্যোক্তাদের কাছে প্রদর্শিত হয়। এ আয়োজনে নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যুক্ত ছিল আইন্ডহোভেন ইন্টারন্যাশনাল প্রজেক্ট অফিস, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, ফ্রন্টিয়ার ফান্ড ও বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জ।