জুলাই মাসে পোশাক কারখানা খুলছে না

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে আগামীকাল শুক্রবার (২৩ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে কঠোর বিধিনিষেধ শুরু হচ্ছে; যা ৫ আগস্ট দিনগত রাত ১২টা পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এ নিয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গণমাধ্যমের সঙ্গে ঈদের দিন যে কথাটি বলেছেন তা হলো‑ ২৩ জুলাই থেকে শুরু হওয়া লকডাউন হবে বিগত সময়ের যে কোনও  লকডাউনের চেয়ে কঠোর।

যদিও এই কঠোর লকডাউনের মধ্যে পোশাক (গার্মেন্টস) কারখানা খোলা রাখার ব্যাপারে ব্যবসায়ীরা দাবি জানিয়ে আসছেন। গার্মেন্টস কারখানা খোলা রাখার ব্যাপারে তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছেও এ ব্যাপারে চিঠি দিয়েছেন। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলছেন, চলতি জুলাই মাসে গার্মেন্টস কারখানা খোলার সুযোগ নেই। তবে করোনা প্রাদুর্ভাব কমে আসলে, সে ক্ষেত্রে আগামী আগস্ট মাসে দেখা যাবে।

এদিকে তৈরি পোশাক শিল্পে মালিকরাও বলছেন, আগামী সাত দিনের মধ্যে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে তবেই তারা ১ আগস্ট থেকে কারখানা চালু করার প্রস্তুতি নিবে। অর্থাৎ গার্মেন্টস মালিকরাও বলছেন, চলতি জুলাই মাসে গার্মেন্টস কারখানা খোলা সম্ভব হচ্ছে না।

পোশাকশিল্পের মালিকদের  সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসানসহ সংগঠনটির সাবেক অন্তত তিনজন সভাপতি সরকারের এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন। বাংলা ট্রিবিউনকে তারা বলেছেন,  করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত গার্মেন্টস কারখানা খোলা হচ্ছে না। তবে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে আগামী মাসে কারখানা খোলা হতে পারে।

এদিকে ঈদের আগে কোনও কোনও কারখানা শ্রমিকদের ৫ দিন ছুটি দিয়েছে। কেউ দিয়েছে সাতদিন। কোনও কোনও কারখানা ১০ দিন ছুটি দিয়েছে। তবে দশ দিন ছুটি দিয়েছে এমন কারখানার সংখ্যা বেশি। অধিকাংশ কারখানায় শ্রমিকরা মনে করছেন, ১ আগস্ট তাদের কাজে যোগ দিতে হতে পারে।  সেভাবেই সব শ্রমিকদের প্রস্তুত থাকার জন্য কারখানা থেকে বলা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, বিধিনিষেধ চলাকালে কারখানা বন্ধ থাকার কথা থাকলেও গার্মেন্ট ও টেক্সটাইল কারখানার মালিকরা ওই সময় কারখানা খোলা রাখার জন্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন পোশাকশিল্পের মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর নেতারা। তাদের প্রত্যাশা, করোনা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলে ১ আগস্ট থেকে কারখানা খোলার সুযোগ দেবে সরকার। এমন বার্তা নিজেদের সংগঠনের সদস্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে দিয়েছেন তারা।

করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে চলতি বছরের এপ্রিলে সরকার বিধিনিষেধ দিলেও রফতানিমুখী পোশাকসহ অন্যান্য শিল্পকারখানা উৎপাদন কার্যক্রম অব্যাহত রাখার সুযোগ পায়।সর্বশেষ গত ২৮ জুন শুরু হওয়া সীমিত পরিসরের ও পরে ১ জুলাই থেকে চলমান কঠোর বিধিনিষেধেও পোশাকসহ অন্যান্য শিল্পকারখানা চালু থাকে। তবে গত ১৩ জুলাই জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়েছে,  ২৩ জুলাই ভোর থেকে ৫ আগস্ট রাত ১২টা পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধে সব ধরনের শিল্পকারখানা বন্ধ থাকবে।

সরকারের এমন সিদ্ধান্তের পর  তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকেরা  মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় প্রতিনিধিদলটি কারখানা খোলার রাখার যৌক্তিকতা তুলে ধরে সচিবের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি দেয়।

প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে ব্যবসায়ী নেতারা বলেছেন, ‘পোশাক শিল্পের শ্রমিকেরা নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে কাজ করেন। দিনের অধিকাংশ সময় (মধ্যাহ্ন বিরতিসহ ১১ ঘণ্টা) কর্মক্ষেত্রে সুশৃঙ্খল ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে থাকেন তারা।'

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, 'ঈদের ছুটিসহ ১৮-২০ দিন কারখানা বন্ধ থাকলে গ্রীষ্ম, বড়দিন ও শীতের ক্রয়াদেশ হাতছাড়া হয়ে যাবে।’