রিজার্ভ এখন ২৯ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ২০০১ সালে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল বাকি রাখতে বাধ্য হয়েছিল বাংলাদেশ। বিচারপতি লতিফুর রহমানের তত্ত্বাবধায়ক আমলে রিজার্ভে ছিল ১ বিলিয়ন ডলারের সামান্য বেশি। ১৫ বছরের ব্যবধানে সেই রিজার্ভ ২ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের মাইলফলক ছুঁয়েছে।
সোমবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৯ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কাজী ছাইদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স এবং রফতানি আয়ের ইতিবাচক ধারার কারণে গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ বাড়ছে। এছাড়া জ্বালানি তেল এবং খাদ্যপণ্য আমদানি খাতে খরচ কম হওয়ার কারণেও রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুদ থাকতে হয়। সেই হিসাবে বাংলাদেশকে দুই মাস পরপর পরিশোধ করতে হয় আকুর বিল।  প্রতি মাসে সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয়ের খরচ হিসাবে বর্তমানে হাতে থাকা রিজার্ভ দিয়ে আট মাসেরও বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
এর আগে ২৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ২৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মেয়াদের আমদানি বিল পরিশোধের পর তা কমে যায়। পরে তা আবার ২৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী বলেন, রফতানিতে ভালো প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। এছাড়া বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল ও খাদ্য পণ্যের দাম কমেছে। এর ফলে আমদানি ব্যয় কমেছে। এসব কারণেই  বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৯ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে।
রফতানি আয় বৃদ্ধি এবং আমদানি খরচ কমার কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অব্যাহতভাবে বাড়ছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র গবেষক ও অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, রফতানি আয় বাড়ছে। রেমিটেন্সও আসছে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলে দাম কমছে। খাদ্যপণ্যের দাম কমছে। এর ফলে আমদানি খরচ কমায় রিজার্ভ বাড়ছে।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) বিভিন্ন পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে। এ সময়ে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সও সন্তোষজনক পর্যায়ে ছিল। অন্যদিকে অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে সার্বিক আমদানি ব্যয় ৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ বাড়লেও জ্বালানি তেল আমদানির এলসি খোলার (ঋণপত্র) পরিমাণ ৪০ দশমিক ৪৮ শতাংশ কমেছে। এই সময়ে খাদ্যপণ্য (চাল ও গম) আমদানির এলসি কমেছে ৩৩ শতাংশের বেশি।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরি হলেও রফতানিতে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এছাড়া বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল ও খাদ্য পণ্যের দাম কমার ফলে আমদানি ব্যয় কমেছে। যার ফলে রিজার্ভ এখন ২৯ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। তিনি বলেন, অর্থ খোয়া যাওয়ার পরও রিজার্ভ সমৃদ্ধ হওয়ায় বিষয়টি প্রমাণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্পর্কে কোনও নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি।
আরও পড়ুন:
কলাবাগানে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ২
ওয়ানডে র‌্যাংকিংয়ে প্রথমবার পাঁচ নম্বরে বাংলাদেশ: পাপন
/জিএম/এসএনএইচ/