মানুষের দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে রাজধানীর অলিগলিতে বসে অসংখ্য সবজি বাজার। এসব বাজারে দিনরাত হরদম চলে বেচাকেনা। এমনই এক সবজি বাজার বসে রাজধানীর মানিকনগরের ওয়াসা রোডে। এই বাজারের মূল ক্রেতা সীমিত ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা। তুলনামূলক কম দামে এখানে সবজি বিক্রি হয়ে থাকে। ভাসমান এই বাজারের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে—এখানকার সবজি বিক্রেতাদের বেশিরভাগই নারী। অনেকে এই বাজারের নাম দিয়েছেন ‘বউ বাজার’।
অভাবের তাড়নায় সবজি বিক্রিতে আসা রাহেলা বেগম জানান, তার স্বামী রিকশা চালান। আর তিনি সবজি বিক্রি করেন। এটাই এখন তার পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রতিদিন তিনি কয়েক হাজার টাকার সবজি বিক্রি করেন। কেনাবেচা শেষে দিনে তার লাভ থাকে প্রায় দেড় হাজার টাকার মতো। রাহেলা বেগম বলেন, ‘আয় আরও বেশি হতো, কিন্তু প্রতিদিনই পুলিশকে চাঁদা দিতে হয়।’ এছাড়া যার বাসার সামনে দোকান বসান তাকেও টাকা দিতে হয় বলে জানান তিনি।
রাহেলার মতো কুলসুম খাতুনও সংসারের অভাব-অনটন মেটাতে সবজি বিক্রি করেন। নুরুন্নাহার জানান, তিনিও স্বামীকে সহযোগিতা করতেই সবজি বিক্রি শুরু করেছেন। প্রতিদিন ভোরে তার স্বামী পাইকারি বাজার থেকে সবজি কিনে আনেন। এরপর তা দু’ভাগ করে তিনি বসেন এই বাজারে। আর তার স্বামী রিকশাভ্যানে করে অন্য এলাকায় গিয়ে বিক্রি করেন।
প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের শাক বিক্রি করেন জরিনা বেগম। তিনি বলেন, ‘সংসার চালাতে গিয়ে তাকে এই পেশা বেছে নিতে হয়েছে।’
আবার হঠাৎ করেই সবাই বসে পড়েন। জানা যায়, টহল পুলিশের অলিখিত অনুমতি নিয়ে এখানে বাজার বসে। এই বাজারের ক্রেতারাও বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবেই নিয়ে থাকে। অর্থাৎ পুলিশ চলে যাওয়ার পর কেনাবেচা শুরু হয়। কখনও বা বাজার শুরু হতে দেরি হলে ক্রেতারা অপেক্ষা করতে থাকেন।
মাছ ও মাংসসহ সবই পাওয়া যায়
মানিকনগর এলাকার এই ভাসমান বাজারে শুধু সবজিই নয়—মাছ, মাংসসহ সবই পাওয়া যায়। নারীদের পাশাপাশি পুরুষরা মাছ ও মাংস বিক্রি করে থেকে। তবে কয়েকজন নারীকেও মাঝে মধ্যে মাছ বিক্রি করতে দেখা যায়।
ক্রেতারা জানান, এই বাজারে কম দামে সবজি পাওয়া যায়। এছাড়া এখানে মাছ, মাংস, ডিম ও মুরগিসহ সব ধরনের নিত্যপণ্য বিক্রি হয়।
ক্রেতা মেহেদী হাসান বলেন, ‘মানিকনগর বাজারের বেশিরভাগ দোকানিই নারী। এখানে সব ধরনের তাজা সবজি পাওয়া যায়। তুলনামূলক দামও কম।’
শুক্রবার (১৭ ডিসেম্বর) সরেজমিন দেখা গেছে, অন্যান্য বাজারের চেয়ে এই বাজারে বেশিরভাগ পণ্য কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা কমে পাওয়া যাচ্ছে। রাজধানীর অন্যান্য বাজারে প্রতি কেজি বরবটি ৮০ টাকা করে বিক্রি হলেও মানিকনগর বাজারে পাওয়া যাচ্ছে ৭০ টাকায়। কাওরান বাজারে করলার কেজি ৮০ টাকা, সিম ৫০ টাকা, দেশি আলু ৪০ টাকা, ফুলকপি প্রতি পিস ৪০, পেঁয়াজের ফুল (ফুলকা) প্রতি আঁটি ২০ টাকা, বেগুন প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। আর মানিকনগর বাজারে এসব সবজি পাওয়া যাচ্ছে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা কমে।
অবশ্য ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। মধ্যম মানের দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে। আর আমদানি করা ভালো মানের পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬৫ টাকায়। নিম্নমানের পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
এই বাজারে আজ ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬৫-১৭০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৬০-১৬৫ টাকা। আর দুই সপ্তাহ আগে ছিল ১৫০-১৫৫ টাকা। ব্রয়লার মুরগির পাশাপাশি দাম বেড়েছে পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগির। ব্যবসায়ীরা সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ২৭০-২৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ২৫০-২৭০ টাকা। ফার্মের মুরগির ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়।
রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৪০০ টাকা করে। শিং ও টাকি মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০-৩০০ টাকা। শোল মাছের কেজি ৫৫০-৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তেলাপিয়া ও পাঙাশ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৭০ টাকায়।
এক থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০০-১২০০ টাকা। ছোট ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৬০০ টাকা। চিংড়ির দাম প্রতি কেজি ৬০০-৬৫০ টাকা।