বন্দরের জন্য জাতীয় লজিস্টিক নীতিমালা চান ব্যবসায়ীরা

বন্দরের লজিস্টিক খাতে দক্ষ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে ‘জাতীয় লজিস্টিক নীতিমালা’ প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা। সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বন্দরের লজিস্টিক খাতে দক্ষ ব্যবস্থাপনা: ব্যবসা-বাণিজ্যে বাংলাদেশের সক্ষমতা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এই আহ্বান জানান তারা। ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তফা কামাল।

স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে যেকোনও রাষ্ট্রের সক্ষমতা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে বন্দরের লজিস্টিক ব্যবস্থাপনার দক্ষতার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হয়ে থাকে।’

তিনি উল্লেখ করেন, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর বিশ্বের ৬৪তম ব্যস্ত বন্দর হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও বিশ্বব্যাংকের হিসাব মতে, কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং বিবেচনায় দক্ষ বন্দর ব্যবস্থাপনার অভাব, পোর্ট ইয়ার্ডের স্বল্পতা, পোর্ট শেড ও আধুনিক যন্ত্রপাতির অনুপস্থিতি প্রভৃতির কারণে এশিয়ার সমুদ্রবন্দরগুলোর মধ্যে এ বন্দরের অবস্থান বেশ পেছনে, যেটি বৈশ্বিক বাণিজ্যে আমাদের সক্ষমতার নেতিবাচক দিক তুলে ধরে। বিশেষ করে, চট্টগ্রাম বন্দরের সার্বিক সক্ষমতার উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কার্যক্রমে পরিচালন ব্যয় উল্লেখজনক হারে হ্রাস করা সম্ভব বলে মত প্রকাশ ডিসিসিআই সভাপতি। এছাড়া মাস্টার প্ল্যানের মাধ্যমে বে-টার্মিনাল ও পতেঙ্গা টার্মিনালের কার্যক্রম বাস্তবায়ন, ক্যাপিটাল ড্রেজিং, জেটির সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বন্দরের সঙ্গে সড়ক ও রেলপথের যোগাযোগ আরও উন্নয়নের প্রস্তাব করেন রিজওয়ান রাহমান। একই সঙ্গে তিনি দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটি লজিস্টিক নীতিমালা প্রণয়ন এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম ইকোনমিক করিডোরের কার্যক্রম সম্পন্নের ওপর জোরারোপ করেন।    

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোস্তফা কামাল বলেন, ‘পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনালটি আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ব্যবহার উপযোগী হয়ে যাবে এবং মোংলা বন্দরের পিপিপি মডেলের আওতায় ইতোমধ্যে ১টি টার্মিনাল স্থাপন করা হয়েছে।’ তিনি জানান, বাংলাদেশের বন্দরগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ডিপি ওয়ার্ল্ড, পিএসএ ইন্টারন্যাশনাল এবং রেড সি পোর্টের মতো বিদেশি বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখিয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা দেশের বন্দরগুলোর সক্ষমতা আরও বাড়াবে, যা আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং বিনিয়োগকে আরও ত্বরান্বিত করতে সক্ষম হবে। সচিব আর বলেন, ‘বে-টার্মিনাল স্থাপনের লক্ষ্যে এরইমধ্যে পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে সরকার এটি নির্মাণে অগ্রসর হবে।’ তিনি উল্লেখ করেন, দক্ষ বন্দর ব্যবস্থাপনার জন্য দেশে দক্ষ মানবসম্পদের প্রচুর ঘাটতি রয়েছে এবং এ খাতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশর চেয়ারম্যান ড. এম. মাসরুর রিয়াজ। তিনি বলেন, ‘আধুনিক বন্দর ব্যবস্থাপনা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে যোগাযোগ সম্প্রসারণ, দক্ষতা উন্নয়ন এবং সর্বোপরি সক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেশের বন্দরগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধিকল্পে ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে সমন্বিত কৌশল প্রণয়ন, পিপিপি মডেলের ভিত্তিতে অবকাঠামোর উন্নয়ন ও কানেক্টিভিটি সম্প্রসারণ, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি, লজিস্টিক সেবার মান উন্নয়ন, জাতীয় লজিস্টিক নীতিমালা প্রণয়ন, সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের মধ্যকার সমন্বয় বৃদ্ধি এবং শুল্ক নীতিমালা সংস্কারের আহ্বান জানান মাসরুর রিয়াজ। 

সেমিনারের নির্ধারিত আলোচনায় গ্রুপ বিজনেস ডেভেলপমেন্টের সহ-সভাপতি লি পেং জি, সামিট অ্যালয়েন্স পোর্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আলী জওহর রিজভী, বাংলাদেশ ফ্রাইট ফরওয়াডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কবির আহমেদ এবং ডিপি ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর শামীম উল হক অংশগ্রহণ করেন। আলোচকরা বন্দরের সঙ্গে সড়ক, রেল ও নদীপথের যোগাযোগ অবকাঠমোর উন্নয়ন, শুল্ক কাঠামোর আধুনিকায়ন ও ডিজিটাল কার্যক্রম সম্প্রসারণ, বেসরকারি খাতে বন্ডেড ওয়্যারহাউজ স্থাপন এবং সর্বোপরি একটি ‘সমন্বিত লজিস্টিক প্ল্যাটফর্ম’ বাস্তবায়নের আহ্বান জানান।