বাজারে মিনিকেট, দায় কার?

যখন কোনও পণ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে সরবরাহ হয়ে বাজারে আসে তার প্রতিটা পর্বে কোনও না কোনও দায়িত্বশীল ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান থাকে, যারা পণ্যের দায়দায়িত্ব বহন করে। বাজারে মিনিকেট নামে চাল বিক্রি করা যাবে না—এমন ঘোষণার পরে এই চালের দায় ব্যবসায় বা মিল মালিক কেউই নিতে চাইছেন না। চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমার কাছে মিল থেকে বস্তাবন্দি হয়ে মিনিকেট নামে চাল আসে। অপরদিকে মিল মালিক বলছেন, কেনার সময় কৃষক যে ধানের যে নাম বলে আমরা সেটাই ব্যবহার করি। তাহলে বাজারে যে মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে এবং ভোক্তা অধিকার অভিযান চালিয়ে ব্যবসায়ীদের জরিমানা করবেন বলে জানানো হয়েছে—সেক্ষেত্রে বাজারে কথিত মিনিকেট চালের দায় কার?

খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে, দেশে মিনিকেট ও নাজিরশাইল বলে কোনও ধান নেই। তাই এসব নামে চাল বিক্রি অবৈধ। এদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। এরমধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামও জানিয়েছেন, মিনিকেট নামে কোনও চাল বিক্রি করা যাবে না। বুধবার (৫ অক্টোবর) গাজীপুরের বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, মিলে চাল বস্তাজাত করার সময় বস্তার ওপরে ধানের জাতের নাম লিখে দিতে হবে। কেউ যদি তা না করেন তাহলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মিল থেকে মিনিকেট লেখা চাল বাজারে দেওয়ার কারণের বিষয়ে জানতে চাইলে দিনাজপুরের বাংলাদেশ মেজর অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির সিনিয়র সভাপতি শহীদুর রহমান পাটোয়ারী মোহন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা ধান কিনি কৃষকের কাছ থেকে। কৃষক ধান বিক্রির সময় যে নাম উল্লেখ করেন আমরা সেটাই বলি। এখানে আমাদের করণীয় কিছু নেই। সরকার যদি বলে মিনিকেট নামে কোনও চাল বাজারে থাকবে না, তাহলে তাদের অবশ্যই কৃষকের কাছে যেতে হবে। কৃষককে বলতে হবে, এই ধান মিনিকেট নামে বিক্রি করা যাবে না। একইসঙ্গে এই যে চালটা কৃষক আমাদের দেন, সেটার তো কোনও না কোনও নাম আছে, সেটা তাদের জানিয়ে দিতে হবে। মিনিকেট নামে কোনও চাল বাজারে যাবে না, এমন কিছু তারা জানেন কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।

উৎপাদনের জায়গায় কিছু না বলে বাজারে ভোক্তা অধিকারের জরিমানা করার প্রসঙ্গে নওগাঁ পৌর চাল ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক উত্তর সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমাদের ওপর চাপ দেওয়ার যৌক্তিকতা নেই। মিল থেকে যে নামে চাল পাওয়া যায় আমরা সেটাই বিক্রি করি। মিল মালিকদের জিজ্ঞেস করুক মিনিকেট ধান আছে কিনা, তারা কোথা থেকে নামটা দিলো। যত দোষ ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের। প্রকৃত জায়গায় নিষেধ না করে, বাজারে অভিযান গ্রহণযোগ্য নয়। তাদের কাছে সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়ে কোনও তথ্য গেছে কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, সরকারের পদক্ষেপ এখনও কার্যকর হয়নি। ঠিক পথে গেলে এটা বন্ধ সম্ভব। মিনিকেট নামে কোনও চাল আসলে নেই। চাল শর্টার করলে লম্বা হয় এবং বস্তায় মিনিকেট স্পেশাল, মিনিকেট বলে বড় বড় মিলাররা চালায়। সরকার চালের আসল নামটা দিলে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে। মিলাররাই মূলত বস্তায় মিনিকেট লিখে বাজারজাত করে। সেটা মাথায় রেখে কোন পথে এগুলো সিদ্ধান্ত কার্যকর করা যাবে সেটা বুঝতে পারা যাবে।

মিলে উৎপাদনের জায়গায় নিষেধাজ্ঞা বা অভিযান না চালিয়ে যারা খুচরা ব্যবসায়ী তাদের ওপর অভিযান চালানোর কারণ জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ শফিকুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা মাঠ পর্যায়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে বলেছি। সেটা শেষ হলেই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।