বিনা জরিমানায় রিটার্ন জমা দেওয়া যাবে দুই দিন

আগামী ৩০ নভেম্বর বিনা জরিমানায় রিটার্ন দাখিল করার শেষ দিন। সেই হিসাবে আর মাত্র দুই দিন বাকি আছে। তাই বিনা জরিমানায় রিটার্ন জমা দিতে চাইলে আগামী বুধবারের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করার পরামর্শ দিয়েছেন এনবিআরের আয়কর বিভাগের সংশ্লিষ্টরা। এদিকে রিটার্ন দাখিলের শেষ সময়ে সোমবার (২৮ নভেম্বর) প্রতিটি কর অঞ্চলের বুথগুলোতে করদাতাদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ গেছে।

প্রসঙ্গত, প্রতিবছরই শেষ সময়ে এসে করদাতাদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ করা যায়। বিশেষ করে ৩০ নভেম্বর রাত ৮টা পর্যন্ত রিটার্ন দাখিলের সুযোগ দেয় এনবিআর। এনবিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, এবারও রাত ৮টা পর্যন্ত রিটার্ন জমা দেওয়ার সুযোগ পাবেন করদাতারা। যদিও ব্যবসায়ী সংগঠন ও কর সমিতিসহ বিভিন্ন ফোরাম থেকে সময় বৃদ্ধির দাবি উঠেছে।

মূলত, একজন করদাতার বার্ষিক আয়, ব্যয় ও সম্পদের তথ্য নির্ধারিত ফরমে উপস্থাপন করার মাধ্যম হচ্ছে আয়কর রিটার্ন। আয়কর আইন অনুযায়ী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্ধারিত ফরমে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হয়।

এনবিআরের তথ্যানুযায়ী, দেশে বর্তমানে ৮২ লাখের বেশি করদাতা ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশন নিলেও এখনও কাঙ্ক্ষিত রিটার্ন দাখিল হয়নি। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, দেশের ৩১টি কর অঞ্চলে প্রায় সাড়ে ১৯ লাখ রিটার্ন দাখিল হয়েছে। এরমধ্যে ই-রিটার্ন দাখিল হয়েছে এক লাখের বেশি।

যদিও প্রত্যাশা অনুযায়ী এখনও অনেক পিছিয়ে আছে প্রতিষ্ঠানটি। গত ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ২৬ লাখের বেশি রিটার্ন দাখিল হয়েছিল। চলতি বছরে অন্তত ৪০ লাখ রিটার্ন দাখিলের প্রত্যাশা রয়েছে এনবিআরের।

করদাতাদের সুবিধার্থে নভেম্বর মাসজুড়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের ৩১টি কর অঞ্চলের ৬৪৯টি সার্কেলে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত অফিস চলাকালে নিরবচ্ছিন্নভাবে মেলার পরিবেশে করসেবা দেওয়া হচ্ছে। যেখানে রয়েছে হেল্প ডেস্ক, রিটার্ন গ্রহণ বুথ, ই-টিআইএন, ই-রিটার্ন ও এ-চালানের আলাদা বুথ।

এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, করদাতাদের সুবিধার্থে নভেম্বরে মাসজুড়ে করের যাবতীয় সেবা দেওয়া হচ্ছে। করদাতারা রিটার্ন তৈরি করে মুহূর্তের মধ্যে পেয়ে যাচ্ছেন প্রাপ্তি স্বীকারপত্র। কর্মকর্তাদের সহায়তা নিয়ে অনেকে রিটার্ন পূরণ করছেন। এখানে সব ধরনের ফরম বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। যত সময় যাচ্ছে করদাতাদের চাপ তত বাড়ছে।

সাধারণত কোনও ব্যক্তি-করদাতার আয় যদি বছরে তিন লাখ টাকার বেশি হয়, তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তি, নারী ও ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সের করদাতার আয় যদি বছরে সাড়ে তিন লাখ টাকার বেশি হয়, গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতার আয় যদি বছরে চার লাখ ৭৫ হাজার টাকার বেশি হয় এবং প্রতিবন্ধী করদাতার আয় সাড়ে চার লাখ টাকার বেশি হলে তার রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক।

আয়কর নির্দেশিকা ২০২২-২০২৩ অনুযায়ী, ৪০ ধরনের সেবায় রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ দেখানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

৩০ নভেম্বরের পরও রিটার্ন জমা দেওয়া যাবে

৩০ নভেম্বরের মধ্যে রিটার্ন জমা না দিলে জরিমানা ও করের ওপর বিলম্ব সুদ দিতে হবে। সেক্ষেত্রে নিজের সার্কেলের উপ-কর কমিশনারের কাছে আবেদন করে সময় নিতে হবে। কিন্তু আবেদন না করলে তাকে প্রদেয় করের ১০ শতাংশ বা ১ হাজার টাকার মধ্যে যা বেশি, ওই পরিমাণ অর্থ এবং প্রতিদিনের জন্য ৫০ টাকা করে জরিমানা দিতে হয়।

এছাড়া সর্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে রিটার্ন দাখিলের পর যদি কোনও করদাতা দেখেন যে অনিচ্ছাকৃত ভুলে কম আয় দেখানো হয়েছে, অথবা বেশি রেয়াত বা কর অব্যাহতি বা ক্রেডিট নেওয়া হয়েছে, তাহলে তিনি ভুল সংশোধনী রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন। এমনকি অন্য যেকোনও হিসাব বা কর পরিগণনা কম বা বেশি হলেও সংশোধনী রিটার্ন দাখিল করা যায়। উপ-কর কমিশনারের কাছে ভুল সংশোধনীতে ভুলের ধরন ও কারণ উল্লেখ করে লিখিত বিবরণী জমা দিতে হবে।