শুধু সুপারমার্কেটে ভ্যাট কেন, প্রশ্ন কাজী ইনামের

বাংলাদেশে ২০৪১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের দিকে ধাবমান হওয়া সত্ত্বেও এ লক্ষ্যের সঙ্গে সুপারমার্কেট ব্যবসার বৃদ্ধি আশানুরূপ নয়। মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে ইংরেজি দৈনিক ঢাকা ট্রিবিউন আয়োজিত ‘সুপারমার্কেট ব্যবসা খাতের টেকসই প্রবৃদ্ধি’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক ব্যবসায়ীরা এসব কথা জানান।

তারা জানান, ২০০০ সালের পর বাংলাদেশ সুপারমার্কেট ব্যবসা শুরু হলেও বাংলাদেশ এ মুহূর্তে ১ হাজারও সুপারশপ নেই, যদিও বাংলাদেশের মতো অর্থনীতির জন্য ১০ হাজারও যথেষ্ট নয়। এ ব্যবসা খাত টেকসই না হওয়ার জন্য সরকারের নিয়ন্ত্রণ ও করনীতিসহ বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছেন বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

সুপারমার্কেট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী ইনাম আহমেদ বলেন, ‘আমরা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কাঁচাবাজার থেকে কিনি, মুদি দোকান থেকেও কিনি, অনলাইনে অর্ডার করেও কিনি আবার সুপারশপ থেকেও কিনি। তিনটি জায়গায় কোনও ভ্যাট নাই কিন্তু সুপারশপে পাঁচ ভাগ ভ্যাট। একই ক্রেতার তিন জায়গায় ভ্যাট দিতে হয় না, শুধু এক জায়গায় দিতে হয়, এটা বড় প্রভাব ফেলে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ ছাড়া আমরা টার্নওভার ট্যাক্স দিচ্ছি, আয়কর দিচ্ছি। আমরা ভাড়ার ওপরও ট্যাক্স দিচ্ছি। আমাদের সুপারশপে মাছ-মাংস রাখার জন্য যে রেফ্রিজারেটর লাগে, এর দাম ১০, ২০, ৪০ হাজার ডলার হতে পারে। আমি যখন একটি রেফ্রিজারেটর এনেছি ১৫ হাজার ডলার দিয়ে, যার মধ্যে শুধু মাংস রাখা যায়, সেখানে কিন্তু বড় একটি মূলধন বিনিয়োগ হয়। এটার পর যদি ১২৫ ভাগ ৭৫ বা ৭০-৬৫ ভাগ ট্যাক্স দিতে হয়, তাহলে তো প্রবৃদ্ধি কঠিন হয়ে যায়। এরপর ঢাকা শহরে ভাড়ার খরচ অনেক বেশি।’

তিনি বলেন, ‘গত ১২ থেকে ১৫ বছরে ১৫ থেকে ২০টি চিঠি আমরা বিভিন্ন সময়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বিএসটিআইকে দিয়েছি, যার বেশির ভাগই আমার স্বাক্ষর করা।’

ইউনিমার্টের পরিচালক মালিক তালহা ইসমাইল বারি বলেন, ‘আমাদের ওপর সরকারের তদারকিটা একটু অসম হয়ে যাচ্ছে। শুধু আমাদেরই তাদের কি করা হচ্ছে, এ ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত অন্যদের তদারকির আওতায় আনা হচ্ছে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ভ্যাটের কথা বলা হচ্ছে কিন্তু ব্যাট আমাদের সরাসরি আয় নয়। এটি হচ্ছে ভোক্তার ওপর সরাসরি আরোপিত কর। ভোক্তারা কনফিউজড হয়ে যাচ্ছে শুধু এই মূল্য সংযোজন করের কারণে। এতে দেখা যাচ্ছে আমাদের দোকানে একটি পণ্যের দাম এক রকম আর অন্য দোকানে পণ্যের দাম আরেক রকম। হয়তো সাধারণ একটি দোকানে তারা ভ্যাট নিচ্ছে কিন্তু তারা ভ্যাটটি জমা দিচ্ছে না।’ 

তিনি বলেন, ‘আমাদের হচ্ছে ইলেকট্রনিক সিস্টেম। এই সিস্টেমে আমাদের প্রতিটি পণ্য ক্রয় থেকে বিক্রি সব তথ্যই সংরক্ষিত থাকে। এ কারণে সুপারশপগুলো শতভাগ কর পরিশোধ করে। আমাদের প্রবৃদ্ধি অর্জন করার সুযোগ দিলে কর সংগ্রহ বাড়বে।’

অ্যাগোরার প্রতিনিধি খন্দকার নুর বোরহান বলেন, ‘আমরা যদি লাভজনক হতে পারি, চিত্র নিয়ে কেবল তাহলেই সুপারমার্কেট খাত বাঁচবে ও মালিকরা এ ব্যবসার বৃদ্ধি করবেন। আমরা আমাদের বিক্রয় মূল্য, আয় ও পরিচলন ব্যয়ের একটি সমন্বয় করতে পারছি না। কারণ আমাদের বাংলাদেশের চিত্রটি হচ্ছে ভ্যাটের ওপর ভ্যাট। আমাদের ৬০ থেকে ৬৫ ভাগ পণ্যে ৫ ভাগ অতিরিক্ত ভ্যাট বসানো বাজারের অন্যান্য দোকানের সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হচ্ছে।’

স্বপ্নের হেড অব মার্কেটিং মাহদী ফয়সাল বলেন, ‘আমাদের বলা হচ্ছে সুপারমার্কেটের মানুষের বিশ্বাসের অভাব। এটা দূর করার জন্য পণ্যের বিভিন্ন স্তরের মাণ নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হচ্ছে কিন্তু এর সঙ্গে তো বড় খরচ জড়িত। একদিকে যেমন নৈতিকতা, বিশ্বাস, নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যকর কি না, এটা দেখা হচ্ছে আবার অন্যদিকে দাম নিয়েও প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। সুপারশপ আসলে খুচরা বাজারের প্রদায়ক হিসেবে কাজ করে। আমাদের ৩০০ সুপারশপ বাদে সারা দেশে ১৮ লাখ দোকান আছে, এগুলোর নৈতিক ও স্বাস্থসম্মতসেবা নিশ্চিতের চর্চা নেই সেগুলো কীভাবে দূর হবে যদি আধুনিক সুপারশপ বাড়ে। কিন্তু এটা তো বাড়ছে না যদি কেউ বিনিয়োগ না করে। কেউ তো বিনিয়োগ করছে না।’

তিনি মনে করেন, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সরকারের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণ দরকার নেই, গ্রাহক ভালো সেবা না পেলে এমনিই সেই ব্যবসা বন্ধ হবে।