ঈদে ব্যাংক বন্ধ তবু লেনদেন চলবে মোবাইলে

ঈদুল ফিতরের লম্বা ছুটিতে ব্যাংক বন্ধ থাকবে। এমনকি এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমও থাকছে বন্ধ। তবে প্রবাসীরা তার শহর কিংবা গ্রামের আত্মীয়-স্বজনের কাছে টাকা পাঠাতে পারছেন অনায়াসে। ঈদের দিনেও টাকা পাঠাতে পারবেন। একইভাবে যেকোনও পরিমাণ লেনদেন করা যাচ্ছে—দেশের যেকোনও শহর বা গ্রাম থেকে যেকোনও গ্রামে বা শহরে। একেবারেই ব্যাংকিং লেনদেন। তবে এটি মোবাইলের মাধ্যমে। এই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহকরা খুব সহজেই ঘরে বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সব সার্ভিস পাওয়ার সুবিধা থাকায় ব্যাংকে যাওয়া এবং দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানোর যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়েছেন। বর্তমানে প্রতিদিন হাজার হাজার সাধারণ মানুষ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। এছাড়াও মোবাইল রিচার্জ, ট্রেনের টিকিট, ফ্লাইট টিকিটসহ আরও অন্যান্য কাজ সহজেই করতে পারছেন।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এখন সহজেই সাধারণ গ্রাহকরা অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন, আর অ্যাকাউন্ট খুলতে কোনও ফি লাগে না। তাৎক্ষণিকভাবে সব জায়গায় টাকা পাঠানো যায়। একইসঙ্গে কেনাকাটার বিল পরিশোধ, ঋণ সুবিধাসহ অনেক নতুন সেবা যুক্ত করা হয়েছে। এসব সেবার কারণে এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধিতে অবদান রাখছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারাও বলছেন, এমএফএসের মাধ্যমেও প্রচুর রেমিট্যান্স আসছে। ফলে এমএফএসের প্রতি মানুষের আগ্রহ ও নির্ভরতা বাড়ছে। এই পরিষেবার বহুগুণ ব্যবহারের কারণে গ্রাহকদের সঙ্গে লেনদেনের পরিমাণও বাড়ছে।

মোবাইল ব্যাংকিং সেবা যেমন শিল্পপতিদের জন্য সুবিধা করে দিয়েছে, আবার গৃহকর্মী ও কম আয়ের মানুষের কাছে বড় আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে। কারণ, অনেক শিল্পপতিকে এখন আগের মতো মাস শেষে ব্যাংক থেকে বস্তায় টাকা ভরে কারখানায় নিতে হয় না। স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেতন-ভাতা চলে যায় শ্রমিকদের মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে।

এদিকে বিগত বছরের মতো এবারের ঈদেও দেশজুড়ে ব্যাংকগুলোর স্থাপন করা এটিএম বুথের নেটওয়ার্ক থেকেও তোলা যাবে টাকা।

অবশ্য ঈদের আগে শুক্রবার (২১ এপ্রিল)  শ্রমিকদের বেতন ভাতা পরিশোধ ও রফতানি কার্যক্রম ঠিক রাখতে পোশাক কারখানার সংশ্লিষ্ট এলাকায় ব্যাংকের কিছু শাখা খোলা রাখা থাকবে। সেগুলো হলো— ঢাকা মহানগরী, আশুলিয়া, টঙ্গী, গাজীপুর, সাভার, ভালুকা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে অবস্থিত তৈরি পোশাক শিল্প সংশ্লিষ্ট ব্যাংক শাখা। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, শুক্রবার সকাল সা‌ড়ে ৯টা থে‌কে দুপুর সা‌ড়ে ১২টা পর্যন্ত লেন‌দেন হ‌বে, আর অফিস চল‌বে বিকাল ৩টা পর্যন্ত। এরম‌ধ্যে দুপুর ১টা ১৫ মিনিট থে‌কে দেড়টা পর্যন্ত জোহরের নামাজের বিরতি থাক‌বে।

এদিকে  বিকাশ ও রকেটের মতো মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) ২০১১ সালে চালু হওয়ার পর থেকে দ্বিতীয়বারের মতো মাসওয়ারী লেনদেন ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত জানুয়ারি মাসে মোবাইলে ১,০০,৫৯৩ কোটি টাকার লেনদেন করেছেন গ্রাহকেরা। অর্থাৎ গত বছরের ডিসেম্বরের তুলনায় এ লেনদেন বেড়েছে ৪.৬৪%। টাকার রেকর্ড ছাড়াও এ খাতে সর্বাধিক লেনদেন হয়েছে এ বছরের জানুয়ারিতে, সংখ্যায় এটি ৪৬.৩০ কোটি। এটি গত মাসের তুলনায় ৩.৫ কোটি টাকা বেশি।

এর আগে গত বছরের এপ্রিলে ঈদের সময়ে ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছিল এমএফএস-এর লেনদেন। ধারণা করা হচ্ছে, এবার ঈদ উপলক্ষে লেনদেনের পরিমাণ আরও বাড়বে।

এ প্রসঙ্গে বিকাশের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশনস শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, ‘মানুষ এখন ডিজিটাল লেনদেনে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন। আমরাও চেষ্টা করে যাচ্ছি নতুন নতুন প্রোডাক্ট অন্তর্ভুক্ত করার। এখন মার্চেন্ট পেমেন্ট, ব্যাংক জমাসহ অনেক সুবিধাই এমএফএসের মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে।’

গত জানুয়ারি মাসের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ক্যাশ ইন, ক্যাশ আউট, পারসন টু পারসন ব্যালেন্স ট্রান্সফার, স্যালারি ডিস্ট্রিবিউশনসহ সব ক্ষেত্রেই লেনদেন ডিসেম্বরের তুলনায় বেড়েছে।

এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেড়েছে মার্চেন্ট পেমেন্টে। জানুয়ারি মাসে ৩৩৭৩ কোটি টাকার মার্চেন্ট পেমেন্ট করা হয়েছে। এখানে বার্ষিক গ্রোথ প্রায় ১৪ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে এমএফএস-তে মোট গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯.৪১ কোটিতে। গত এক বছরে গ্রাহক ২.১ কোটি বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং চালু করার অনুমতি দেয়। পরের বছর ডাচ-বাংলা ব্যাংকের 'রকেট'-এর মাধ্যমে এটি শুরু হয়।

বর্তমানে ১৩টি ব্যাংক দেশে বিকাশ, ইউক্যাশ, মাইক্যাশ এবং শিওরক্যাশ ইত্যাদি বিভিন্ন নামে এই পরিষেবা দিয়ে আসছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মধ্য দিয়ে দেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের যাত্রা শুরু হয়। এরপরই ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে বিকাশ। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং বাজারের সিংহভাগই বিকাশের দখলে।

এদিকে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন অ্যাকাডেমি প্রতিষ্ঠাকরণ (আইডিয়া) প্রকল্পের আওতায় চালু হয়েছে দেশের ইন্টার অপারেবল ডিজিটাল ট্রানজেকশন প্ল্যাটফর্ম (আইডিটিপি) ‘বিনিময়’।

গত ১৩ নভেম্বর এর উদ্বোধন করা হয়। তবে এখনও সব ব্যাংক ও এমএফএস  প্রতিষ্ঠান এ সেবায় যুক্ত না হওয়ায় লেনদেন বাড়ছে না। আপাতত বিকাশ ও রকেটের পাশাপাশি কিছু ব্যাংক এই সেবা দিচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ‘বিনিময়ে গ্রাহকেরা স্বাচ্ছন্দ্যে লেনদেন করতে পারছেন। দিন দিন এটির ব্যবহারও বাড়ছে।’