ভারতের সঙ্গে শুরু হচ্ছে রুপিতে লেনদেন

অবশেষে ভারতীয় রুপিতে লেনদেন শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারত। মার্কিন ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে এরইমধ্যে বাংলাদেশ ও ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই লেনদেনের জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আগামী ১১ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে এই লেনদেন কার্যক্রম উদ্বোধন করা হবে। এদিন ভারতীয় হাইকমিশনে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার এই  উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।

এছাড়া আরবিআইয়ের গভর্নর শক্তিকান্ত দাসের পাশাপাশি এসবিআইয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সি এস শেট্টিও জুম প্ল্যাটফর্মে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। এতে বিশেষ অতিথি থাকবেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান এবং বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। এ ছাড়া সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল করিম ও ইস্টার্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতেখার অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।

উল্লেখ্য, কারেন্সি সোয়াপ ব্যবস্থা বা নিজস্ব মুদ্রা বিনিময়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের আলোচনা চলছে প্রায় এক দশক ধরে। ডলার বা অন্য কোনও মুদ্রা এড়িয়ে দুটি দেশ যখন নিজেদের মধ্যে নিজস্ব মুদ্রায় বাণিজ্য পরিচালনা করে, আর্থিক পরিভাষায় একে বলা হয় ‘কারেন্সি সোয়াপ ব্যবস্থা’। এখন সেই ব্যবস্থায় লেনদেনের যাত্রা শুরু হচ্ছে।

ধারণা করা হচ্ছে, সরাসরি রুপি ব্যবহার করে আমদানি-রফতানির মূল্যবিনিময় জনপ্রিয় হয়ে উঠলে দুই দেশের লেনদেনের ক্ষেত্রে ডলারের ওপর চাপ কমবে। এই লেনদেন কার্যক্রম শুরু হলে দুই দেশের মধ্যে সম্মত ট্রেডিং মেকানিজম অনুসারে, বাংলাদেশি রফতানিকারকরা ১১ জুলাই থেকে রুপিতে রফতানি আয় পেতে সক্ষম হবেন এবং এর সমমূল্যের অর্থ আমদানি বিল নিষ্পত্তির জন্য ব্যবহার করা হবে। তবে মার্কিন ডলারে বাণিজ্য করার বিষয়টি উন্মুক্ত থাকছে আগের মতোই।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, এই কার্যক্রম চালুর পর ব্যাংকগুলো রুপিতে এলসি করতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংক তাতে অনুমতি দেবে। বাংলাদেশের কোনও ব্যবসায়ী আমদানি বা রফতানির ক্ষেত্রে রুপিতে এলসি খুলতে চাইলে তা করতে পারবেন।

এই লেনদেনের জন্য এরইমধ্যে দুই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকই নিজ দেশের দুটি ব্যাংককে হিসাব খোলার অনুমতি দিয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সোনালী ও ইস্টার্ন ব্যাংক রুপি লেনদেনে বিশেষ অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক থেকে অনুমোদন পেয়েছে। ইতোমধ্যে ভারতীয় স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ও আইসিআইসিআই ব্যাংকে লেনদেন হিসাব খুলেছে সোনালী ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংক। একইভাবে বাংলাদেশের এ দুটি ব্যাংকে হিসাব খুলেছে ভারতীয় দুই ব্যাংক।

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি ইস্টার্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতেখার জানান, তারা রুপি এবং টাকা উভয় মাধ্যমেই লেনদেনের জন্য আবেদন করেছিলেন। রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া তা অনুমোদনও করেছে। তিনি উল্লেখ করেন, প্রাথমিকভাবে অল্প পরিমাণে রুপিতে লেনদেন হবে। পর্যায়ক্রমে  বাড়বে। এছাড়া, টাকায় লেনদেন পরবর্তী সময়ে চালু করা হবে। এভাবে লেনদেন বাড়লে ধীরে ধীরে ডলারের ওপর চাপ কমাতে সাহায্য করবে বলে মনে করেন তিনি।

এদিকে বাংলাদেশের রফতানিকারকরাও এই উদ্যোগটিকে স্বাগত জানাচ্ছেন। তারা বলছেন, একক মুদ্রার ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে বাংলাদেশ যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, এটি তারই অংশ।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ভারতে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ এবং প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে।

এদিকে ডলার সাশ্রয়ের লক্ষ্যে আগামী সেপ্টেম্বরে দেশে টাকা-রুপিভিত্তিক ডেবিট কার্ড চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১৮ জুন অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতি উপস্থাপনকালে গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার এ ঘোষণা দেন।

এই কার্ডের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা টাকা দিয়ে যেমন দেশের মধ্যে কেনাকাটা করতে পারবেন, তেমনি একই কার্ড দিয়ে ভারতে রুপিতেও কেনাকাটা করতে পারবেন। এই কার্ডের মাধ্যমে ডাবল কারেন্সি এক্সচেঞ্জের প্রয়োজনীয়তা মিটবে বলে আশা করা হচ্ছে। যার ফলে টাকাকে ডলারে এবং এরপর ডলারকে রুপিতে রূপান্তর করতে ৬ শতাংশ ‘এক্সপেন্ডিচার লস’ সাশ্রয় হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর।