উন্নত বাংলাদেশ গড়তে জাপানের অব্যাহত সহযোগিতা চায় এফবিসিসিআই

বাংলাদেশের অবকাঠামো ও লজিস্টিকস উন্নয়ন এবং এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলাসহ উন্নত বাংলাদেশ গড়ার অগ্রযাত্রায় জাপানের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে এফবিসিসিআই। শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) এফবিসিসিআই কার্যালয়ে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইয়ামা কিমিনোরির সঙ্গে সৌজন্য স্বাক্ষাতে এ আহ্বান জানান এফবিসিসিআই’র সভাপতি মাহবুবুল আলম।  

এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়নের অন্যতম বিশ্বস্ত অংশীদার জাপান। গত ৫০ বছর ধরে বাংলাদেশ ও জাপানের  মধ্যকার সম্পর্ক ক্রমেই জোরদার হচ্ছে। বাংলাদেশে মেট্রোরল, বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল, মেঘনা সেতু, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরসহ বিভিন্ন বৃহৎ প্রকল্প এবং অবকাঠামো উন্নয়নে জাপানের অবদান অনস্বীকার্য।’

বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীদের জন্য জাপানে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ সহজ করতে ভিসাপ্রাপ্তি সহজ করা ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জনে দেশটির সহযোগিতা চান এফবিসিসিআই সভাপতি। প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জনে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদানসহ লজিস্টিক সরবরাহে জাইকা, জেট্রোসহ উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। এসব ক্ষেত্রে এফবিসিসিআই’র সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে বলে জানান মাহবুবুল আলম।

দীর্ঘ সময় ধরে জাপানের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা এবং অংশীদারিত্বের জন্য বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান জাপানের রাষ্ট্রদূত ইয়ামা কিমিনোরি। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগ আরও বাড়াতে চাই আমরা। পাশাপাশি বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতেও আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে।’ দু’দেশের যৌথ প্রকল্পগুলো নিয়ে আলোচনার আরও সুযোগ রয়েছে জানিয়ে এফবিসিসিআই’র পরামর্শ আহ্বান করনে রাষ্ট্রদূত।

জাপানে জনশক্তি রফতানি প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত ইয়ামা কিমিনোরি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি বাণিজ্যিকভাবে দু’দেশের সম্পর্ক ও যোগাযোগ আরও উন্নত করতে। তবে বেশকিছু বাধাও রয়েছে। বিশেষ করে জনবল আমদানির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করে জাপান সরকার। পাশাপাশি সেখানে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে ভাষাগত দক্ষতাও বড় ভূমিকা রাখে।’

বাংলাদেশিদের জাপান ভ্রমণ এবং দেশটিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সম্প্রসারণে বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবে বলে আশ্বাস্ত করেন রাষ্ট্রদূত।

এছাড়া এদিন দুপুরে এফবিসিসিআই সভাপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূত এনগুয়েন মান কুং। এ সময় বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় খাতগুলোতে ভিয়েতনামের শিল্প উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম।

দু’দেশের বাণিজ্যের চিত্র তুলে ধরে মাহবুবুল আলম জানান, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ-ভিয়েতনামের মধ্যে বাণিজ্যের আকার ছিল ১১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের কিছু বেশি। এর মধ্যে ১০১০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য বাংলাদেশ রফতানি করেছে ভিয়েতনাম। এর ফলে বাংলাদেশের রফতানির পরিমাণ মাত্র ৯২.৭৭ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ বাংলাদেশ-ভিয়েতনামের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি বিশাল।

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘ভিয়েতনামের সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। তবে বাণিজ্য ঘাটতি অস্বাভাবিক। বিশাল এই বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে ভিয়েতনাম থেকে আরও বেশি বিনিয়োগ চাই আমরা।’ পাশাপাশি ভিয়েতনামকে বাংলাদেশে থেকে আরও বেশি পণ্য আমদানির আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশে কৃষিপণ্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, ইলেক্ট্রিক্যাল মেশিনারি ও যন্ত্রাংশ, সামুদ্রিক সম্পদ, আইসিটি ও টেলিকমিউনিকেশনস, হালকা প্রকৌশল, পর্যটন, চামড়া, পাট ও বস্ত্রসহ বেশকিছু খাতে ভিয়েতনামের বাণিজ্য সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানানো হয় সৌজন্য সাক্ষাতে।

এ সময় ঢাকায় নিযুক্ত ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূত এনগুয়েন মান কুং বলেন, ‘ভিয়েতনামের বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশ অন্যতম একটি সম্ভাবনাময় দেশ। এখানে বিপুল তরুণ জনগোষ্ঠী রয়েছে। তাছাড়া দু’দেশের অর্থনৈতিক গতি-প্রকৃতির মধ্যেও মিল রয়েছে। আমি আশাবাদী, অদূর ভবিষ্যতে ভিয়েতনাম-বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে।’

তিনি জানান, চলতি মাসের ২১ তারিখ ভিয়েতনাম ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি থেকে প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে সফরে আসবে। এই সফরের মধ্য দিয়ে দু’দেশের বাণিজ্য নতুন মাত্রায় পৌঁছাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এনগুয়েন মান কুং।

সৌজন্য সাক্ষাৎকালে এফবিসিসিআই’র সহ-সভাপতি খায়রুল হুদা চপল, মোহাম্মদ আনোয়ার সাদাত সরকার, রাশেদুল হোসেন চৌধুরী রনি, মো. মুনির হোসেন এবং পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।