ফেব্রুয়ারিতে ব্যাংক ঋণের খরচ আরও বাড়লো

চলতি ফেব্রুয়ারিতে নতুন ঋণ বিতরণে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে 'সিক্স মান্থস মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল' বা 'স্মার্ট' সুদহার ধরতে হবে ৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ। এতে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের খরচ আরও বাড়লো।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো স্মার্ট সুদহারের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদ যোগ করে গ্রাহককে ঋণ দিতে পারবে। তাতে গ্রাহক পর্যায়ে ঋণের সুদহার দাঁড়াবে সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ৪৩ শতাংশ। তবে ভোক্তা ঋণের সুদহার পড়বে প্রায় সাড়ে ১৩ শতাংশ। জানুয়ারিতে বড় অঙ্কের ঋণের সুদহার ছিল ১১ দশমিক ৮৯ শতাংশ, আর ভোক্তা ঋণের সুদহার ছিল ১২ দশমিক ৮৯ শতাংশ।

এছাড়া প্রি-শিপমেন্ট রফতানি ও কৃষি ও পল্লি ঋণের ‘স্মার্ট’ হারের সঙ্গে সর্বোচ্চ ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে মার্জিন যোগ হবে। অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাসে প্রি-শিপমেন্ট রফতানি ঋণ এবং কৃষি ও পল্লি ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার হবে ১১ দশমিক ৪৩ শতাংশ— যা জানুয়ারিতে ছিল ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ। তবে ফেব্রুয়ারিতে ব্যক্তিগত ও গাড়ি কেনার ঋণে ব্যাংক সুদ নিতে পারবে ১৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ। কারণ সিএমএসএমই, ব্যক্তিগত ও গাড়ি কেনার ঋণে অতিরিক্ত ১ শতাংশ তদারকি বা সুপারভিশন চার্জ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে— যা জানুয়ারিতে ছিল ১২ দশমিক ৮৯ শতাংশ। সাধারণত ব্যাংক থেকে ব্যক্তিগত ও ভোগ্যপণ্য যেমন- গাড়ি কেনার ঋণ, আবাসন ঋণ, শিক্ষা ঋণসহ ফ্রিজ, টিভি কম্পিউটার ইত্যাদি কেনার জন্য যে ঋণ নেওয়া হয় এগুলো হচ্ছে ভোক্তা ঋণ।

এদিকে ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে মার্জিন যোগ করতে পারবে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।

অবশ্য একবার সুদহার কার্যকর করা হলে পরবর্তী ৬ মাসে তা আর পরিবর্তন করা যায় না। উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে লাগাম টানতে সরকার ট্রেজারি বিল ও বন্ডের মাধ্যমে ব্যাংক খাত থেকে উচ্চ সুদহারে ঋণ নেয়।

প্রতি ৬ মাসের ট্রেজারি বিল ও বন্ডের গড় সুদহার হিসাব করে নির্ধারণ হয় 'স্মার্ট' রেট। প্রতি মাসের শেষে বা প্রথম দিনে স্মার্ট সুদহার কত হবে, তা জানিয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। যা পরের মাসে বিতরণ করা নতুন ঋণের জন্য প্রযোজ্য হয়।

গত বছরের ডিসেম্বরে গ্রাহকদের সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ২২ শতাংশ সুদহারে ঋণ দিয়েছে ব্যাংক।

২০২৩ সালের ২৭ ডিসেম্বরে সরকার ৯১ দিনের ট্রেজারি বিলের মাধ্যমে ১১ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ সুদে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নেয় ৫ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। আর ২৪ ডিসেম্বরে ৯১ দিন, ১৮২ দিন ও ৩৬৪ দিনের ট্রেজারি বিলের মাধ্যমে সরকার ৫ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা ঋণ নেয়। এক্ষেত্রে সুদহার ছিল ১০ দশমিক ৯৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের ৬ মাসের গড় সুদহার (স্মার্ট রেট) ছিল ৭ দশমিক ১০ শতাংশ, আগস্টে ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং সেপ্টেম্বরে বেড়ে হয় ৭ দশমিক ২০ শতাংশ, অক্টোবরে ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ, নভেম্বরে ৭ দশমিক ৭২ শতাংশ, ডিসেম্বরে ৮ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং সর্বশেষ জানুয়ারিতে স্মার্ট রেট বেড়ে দাঁড়ায় ৮ দশমিক ৬৮ শতাংশে।

ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্মার্টের সঙ্গে সর্বোচ্চ ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদ যোগ করে আমানত সংগ্রহ করতে পারবে। ‘স্মার্ট’ রেটের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে মার্জিন বা সুদ যোগ করে ঋণের বিপরীতে সুদ নিতে পারবে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান এনবিএফআই। সেই হিসাবে ফেব্রুয়ারি মাসে তাদের সর্বোচ্চ ঋণের সুদহার হবে ১৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ এবং আমানতে ১১ দশমিক ৪৩ শতাংশ— যা জানুয়ারিতে ছিল ১৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং আমানতে ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ।

তবে ব্যাংকের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও ফেব্রুয়ারিতে ঠিক করা ঋণের এই সুদহার পরবর্তী ৬ মাসের মধ্যে পরিবর্তন করা যাবে না।